ক্যালেন্ডার বলছে এখন ভরা শ্রাবণ। অথচ পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে সঙ্কটে খরিফ মরসুমের ধান চাষ। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টির অভাবে ধান চাষের জমিই তৈরি করা যায়নি। ফলে, শুরু হয়নি ধান রোওয়ার কাজ। উত্তরবঙ্গে আবার উল্টো পরিস্থিতি। সেখানে অতি বৃষ্টিতে বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। এই অবস্থায় এ বার খরিফ মরসুমে অন্তত পাঁচ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। এর আগে বোরো মরসুমেও প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ কম হয়েছিল।
রাজ্য কৃষি দফতরের অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য বলেন, “বৃষ্টির অভাবে অনেক জায়গায় খরিফ চাষে সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরে মাটির নীচের জলস্তর অনেকটা নেমে গিয়েছে। সময়মতো প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।” কৃষি অধিকর্তা জানিয়েছেন, ভাল বৃষ্টি না হলে ধানের গুণমানের উপরে তার প্রভাব পড়বে। তাই বিকল্প চাষে জোর দিতে বলা হচ্ছে। কম জলে ‘শ্রী’ (সিস্টেম অফ রাইস ইন্টেসিফিকেশন) পদ্ধতিতে চাষেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০১০-১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে খরা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। এ বার বিহারে ইতিমধ্যে খরা পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে ধান চাষের জন্য ডিজেল কিনতে চাষিদের ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে নীতীশ-সরকার। তবে মাটির নীচে জলস্তর নেমে যাওয়ায় এ রাজ্যে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না বলেই মনে করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। |
আমন চাষে সেচের বিষয়টি নিয়ে কৃষি-কর্তাদের সঙ্গে সেচ দফতরের কর্তাদের বেশ কয়েক বার বৈঠক হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই দফতরের কর্তারাই বৃষ্টির উপরে ভরসা করছেন। আর তাতেই বাড়ছে উদ্বেগ।
কৃষি দফতরের কর্তারা আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টির এই আকাল চলতে থাকলে গোটা রাজ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হবে না। বেসরকারি মতে অবশ্য জমির পরিমাণ আরও বেশি হবে। ফলে নিশ্চিত ভাবে ধান উৎপাদন কমবে। আর তার প্রভাব পড়বে খাদ্যশস্যের দামে। খরিফ মরসুমে চাষ কম হলে সমস্যায় পড়বেন কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ীরাও। সার, বীজ, কীটনাশকের বিক্রি কমে যাবে। গত মরসুমেও অনেকে জল ও শ্রমিকের অভাবে বোরো ধান চাষ করতে পারেননি। মন দিয়েছিলেন বিকল্প চাষে। আর ভেবেছিলেন, খরিফ মরসুমে বৃষ্টি হলে ধান চাষ করবেন । কিন্তু প্রকৃতি সহায় না হওয়ায় চাষিদের কপালে ভাঁজ পড়ছে।
আমন চাষে সব থেকে খারাপ অবস্থা বর্ধমান, নদিয়া, হুগলি এবং বীরভূমে। কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, গত ১ জুন পর্যন্ত বর্ধমানে বৃষ্টি হয়েছে ১২০.৭৭ মিলিমিটার। ফলে, চাষিরা চাষ শুরুই করতে পারেনি। বর্ধমান জেলার এক কৃষি আধিকারিক বলেন, “আমরা সকলে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে ভাল বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। কারণ, বীজতলা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে তা রোওয়ার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।” একই ভাবে নদিয়া, বীরভূম, হুগলি ও পুরুলিয়াতেও বৃষ্টি কম হয়েছে। নদিয়া জেলার হবিবপুর এলাকার চাষি কার্তিক বিশ্বাস বলেন, “এখনও ভাল করে বৃষ্টি হয়নি। আমাদের জমিতে সেচের কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি না হলে চাষ হবে না। বীজতলা তৈরি হয়ে রয়েছে। বেশি দিন দেরি করা যাবে না। সময়মতো বৃষ্টি না হলে চাষ করব না।” বর্ধমানের কুসুমগ্রামের চাষি মহম্মদ হালিম বলেন, “এখনও চাষ শুরু করতে পারিনি। কবে শুরু করব জানি না। জল কিনে চাষ করা সম্ভব নয়। তাহলে খরচে পোষাবে না। জলের জন্য বোরো চাষ করতে পারিনি। বৃষ্টি না হলে আমন চাষ করব না।”
অন্য দিকে, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে অতিবৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় ওই দুই জেলাতেও বেশিরভাগ জমিতে ধান রোওয়া শুরু করা যায়নি। তবে কৃষি দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ওই দুই জেলায় নীচু এলাকায় জল জমলেও উঁচু জমিতে চাষ ভাল হবে। |