নিহত ১
উত্তরের ভোটেও বাহিনী নিয়ে ক্ষোভ-অভিযোগ
পেক্ষাকৃত ভাবে সব চেয়ে কম হানাহানির মধ্যে ভোট মিটল ঠিকই। তবু কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করে রাখা নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ ও অভিযোগ রয়ে গেল পঞ্চায়েত ভোটের পঞ্চম ও শেষ দফাতেও। কংগ্রেস ও বামেদের ক্ষোভ, যেখানে দরকার নেই, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে লাঠি চালিয়ে উত্তেজনা বাড়ানো হল। আবার যে সব জায়গায় বিস্তর গোলমাল, সেই দিনহাটা, চোপড়া, গঙ্গারামপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখাই মিলল না!
বিশেষত, উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের চত্বরেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে মহম্মদ আজিজ (৬০) নামে এক সিপিএম কর্মীকে খুনের পরে সেই ক্ষোভ তুঙ্গে পৌঁছয়। পাল্টা হামলায় সেখানে তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্টের মাথা ফাটে। ভোটগ্রহণ বন্ধ করে প্রশাসন। গোলমাল হয়েছে কোচবিহারেও। দিনহাটা, সিতাই, তুফানগঞ্জে ২১ জন ফব কর্মী জখম। তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে এক জনকে মারার চেষ্টাও হয়েছে। আরও কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ইসলামপুরের চোপড়া, বালুরঘাটের গঙ্গারামপুর, জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে।
পায়ে পায়ে ভোটের টানে। রোদ্দুরে ছাতা মাথায় দীর্ঘ লাইনে মহিলারা।
বৃহস্পতিবার কোচবিহারে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার, বৃহস্পতিবার চার জেলাতেই শাসক দলের বিরুদ্ধে ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় দু’টি বুথে সকালে ব্যাপক গোলমাল হয়। একটি বুথে দেখা যায় বেলা ১২টার মধ্যে ৯৫% ভোট পড়েছে! গোলমালে সেখানে ভোট বন্ধই করতে হয়। ইটাহারের নন্দনগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথ-জ্যামের অভিযোগকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংঘর্ষে দু’পক্ষের ৭ জন জখম হন। জখম রাজ্য পুলিশের চার কর্মীও। ইটাহারে দক্ষিণ বীরনগরে দু’টি ব্যালট বক্স ছিনতাই করে পুকুরে ফেলে দেওয়ায় ভোট বন্ধ করা হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও ওই সব বুথে তাদের পাঠানো হয়নি কেন সেই প্রশ্ন উঠেছে।
বস্তুত, ভোট প্রক্রিয়া শুরুর পরে উত্তরবঙ্গের যে জেলায় সব চেয়ে বেশি সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে, সেই কোচবিহার নিয়ে সব দলেরই আশঙ্কা ছিল। সেইমতো ১৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। তা সত্ত্বেও দিনহাটা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দিনভর রাস্তা আটকে বামেদের আটকানোর বিস্তর অভিযোগ ওঠে। বুড়িরহাট, নাজিরহাট, শালমাড়া, সিতাই-সহ বহু জায়গায় বাম প্রার্থী এবং তাঁদের এজেন্টদের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তৃণমূল ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। ফব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক ও বিধায়ক উদয়ন গুহর হুঁশিয়ারি, “বুথের মধ্যে ভোটার ও প্রার্থীদের সুরক্ষিত রাখার যে প্রতিশ্রুতি নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে দিয়েছিলেন তা রাখতে পারেননি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করব।” এক সময়ে বাম দুর্গ হিসেবে পরিচিত জলপাইগুড়িতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে সিপিএম সাংসদ মহেন্দ্র রায় ভোট দিতে গিয়ে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। মহেন্দ্রবাবুর দাবি, “অনেককেই বাধা দেওয়া হয়েছে।”
মারমুখী: রায়গঞ্জে একটি সংঘর্ষে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে
মারমুখী পুলিশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
কলকাতায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুরও অভিযোগ, “সবাই মনে করেছিল, শেষ পর্বের ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে। কিন্তু তা হয়নি। অবাধে বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, সন্ত্রাস হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হয়েছিল। এর দায়-দায়িত্ব তৃণমূল সরকারের!” কেন্দ্রীয় বাহিনী পুরোদস্তুর ব্যবহার করতে না পারা, ভোটে হিংসা ও প্রাণহানি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে বলেন, “এ সব ভোট প্রক্রিয়ারই অঙ্গ। ভোটটা তো করাতে পারলাম।” ইটাহারে এক জনের খুন হওয়া ছাড়াও বিজু দাস নামে এক মহিলা প্রার্থীর হাতের তিনটি আঙুল এবং সিরাজুল হকের ডান হাত কেটে নেওয়া হয়েছে বলে বিমানবাবুর অভিযোগ। ভোটপর্বে হানাহানি নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের পাল্টা বক্তব্য, “কমিশনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য এত মানুষ মারা গিয়েছেন! পাঁচ দফায় ভোট করেছে কমিশনই।” রাজ্য সরকার যে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ মানেনি, তা নিয়ে সরব হন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহেরা।
রাত ৮টা অবধি পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ দিনাজপুর ও জলপাইগুড়িতে ৮০% ভোট পড়েছে। উত্তর দিনাজপুরে ৭৫% ও কোচবিহারে ৭৬% ভোট পড়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের প্রশ্ন, “ভোট দিতে বাধা দেওয়া হলে এত মানুষ কোথা থেকে এলেন? কারা ভোট দিলেন? আসলে পঞ্চায়েতেও পরিবর্তন আসছে।” তাঁর দাবি, “বাহিনী নিয়ে অভিযোগ করলে হবে না। কমিশন ঠিক করেছে, কোথায়, কোন বুথে তাদের পাঠানো হবে। তবে বহু জায়গায় বিনা কারণে বাহিনী লাঠি চালিয়েছে।” ভোট দিতে গিয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে জলপাইগুড়ির ডাবগ্রামের জলেশ্বরী এলাকায় মহেন্দ্র বর্মন (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। কোচবিহারের দিনহাটায় উত্তম মণ্ডল (৩১) নামে এক যুবকের সান স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.