|
|
|
|
পাঁশকুড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে |
পদের গুরুত্ব নেই, সস্ত্রীক ইস্তফা মন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
তৃণমূল পরিচালিত পাঁশকুড়া পুরসভার মুখ্য উপদেষ্টার পদ থেকে সরতে চাইলেন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। সৌমেনবাবুর স্ত্রী সুমনা মহাপাত্রও পুরসভার অর্থ স্থায়ী সমিতির সভাপতির পদ থেকে সরতে চেয়ে পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলরের বৈঠকে আলোচ্যসূচিতে ছিল বিষয়টি। যদিও শেষমেশ দলের কাউন্সিলরদের আপত্তিতে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি পুরবোর্ড। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন পড়েছে রাজনৈতিক মহলে। অন্দরের খবর, পুরপ্রধান জাকিউর রহমানের সঙ্গে বিরোধের জেরেই সস্ত্রীক পদত্যাগ করতে চেয়েছেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র।
সরাসরি সে কথা না বললেও পদত্যাগ করার কথা স্বীকার করেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “পুরসভার কাজে সাহায্যের জন্য মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে আমাকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যদিও ওই পদের আইনি স্বীকৃতি নেই। তা ছাড়া আমি পুরসভার কাজে সক্রিয় ভাবে যুক্ত থাকতে পারিনি। পুরসভার তরফ থেকেও আমার সাহায্য চাওয়া হয়নি। শুধুমাত্র আলঙ্কারিক ভাবে ওই পদে থাকতে চাই না। দলীয় নেতৃত্বকে তা জানিয়েছি।” স্ত্রী-র পদত্যাগ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুরসভার কাজে অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে পুরপ্রধান ও নির্বাহী আধিকারিকই সব সিদ্ধান্ত নেবেন বলে পুরপ্রধান নির্দেশিকা জারি করেছিলেন। এর ফলে পুরসভার অর্থ স্থায়ী সমিতির আর কোনও প্রশাসনিক গুরত্ব নেই। তাই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
গত বছর মে মাসে পাঁশকুড়া পুরসভায় ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পুরপ্রধানের পদ নিয়ে দলে কোন্দল বাধে। এলাকার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের জলসম্পদমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের স্ত্রী সুমনাদেবীর পুরপ্রধান হিসাবে নাম উঠলেও শেষ পর্যন্ত দলের জেলা নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে ওই পদে আসীন হন জাকিউর রহমান খান। আর উপপুরপ্রধান হন নন্দ মিশ্র। সৌমেনবাবুকে পাঁশকুড়া পুরসভার মুখ্য উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করা হয়। অন্য দিকে পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত তৃণমূল কাউন্সিলর সুমনা মহাপাত্রকে পুরসভার অর্থ বিভাগের স্থায়ী সমিতির চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়।
কয়েকমাসের মধ্যেই পুরপ্রধান জাকিউর রহমান খান, দলের ব্লক সভাপতি দীপ্তিকুমার জানার গোষ্ঠীর সঙ্গে সৌমেন মহাপাত্র, উপপুরপ্রধান নন্দ মিশ্র, কাউন্সিলর সুমনা মহাপাত্র, আনিসুর রহমানদের গোষ্ঠীর ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়ে যায়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দুই গোষ্ঠীর আলাদা সভার কর্মসূচি নিয়ে সেই কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার কাজ নিয়ে মতবিরোধের পাশপাশি গোষ্ঠীকোন্দলের কারণেই সৌমেনবাবু ও তাঁর স্ত্রী পুরপ্রধানের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পুরসভার মাসিক বোর্ড মিটিংয়ে এই বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ৬ জুলাই বৈঠক ডাকা হয়। পঞ্চায়েত ভোটের কারণে সেই বৈঠক বাতিল করা হলেও বৃহস্পতিবার পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ের আলোচ্যসূচিতে ওই বিষয় রাখা হয়। এ দিন বোর্ড মিটিংয়ে এই প্রসঙ্গ উঠলে কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলর এটাকে দলের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে আলোচনা স্থগিত রাখার দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত এই নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান জাকিউর রহমান খান বলেন, ‘‘পদত্যাগ পত্র পেয়েছি। তবে পদত্যাগের কারণ জানাননি ওঁরা। এই নিয়ে আলোচনা হলেও এদিনের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।” |
|
|
|
|
|