|
|
|
|
রাতে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব শিল্পশহরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
ফের আতঙ্কের আবহ হলদিয়া উপনগরীতে।
বুধবার গভীর রাতে উপনগরীর সেক্টর ৮-এর এইচএফসি ও টাটা স্টিল আধিকারিকদের আবাসনে হানা দেয় একদল দুষ্কৃতী। নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাঁদের মারধর করে দুষ্কৃতীরা। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আধিকারিকরা বেরিয়ে এলে তাঁদেরও মারধর করে। এরপর একের পর এক আবাসনে ইট ছুড়ে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। পথবাতি ভাঙে। খবর পেয়ে পুলিশ এলে ছুটে পালায় দুষ্কৃতীরা। কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। ফলে এই হামলার উদ্দেশ্য কী ছিল, তা পরিষ্কার হয়নি। পুলিশের অনুমান, চুরি-লুঠপাটের উদ্দেশ্যেই জড়ো হয়েছিল দুষ্কৃতীদল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়া বাসস্ট্যান্ড ঘেষা এই এলাকার আবাসনগুলি মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশনের (এইচএফসি)। কোম্পানির মূল প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পরে দীর্ঘ দিন আবাসনগুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। কয়েক বছর আগে আবাসনগুলির একাংশ টাটা স্টিল (হুগলি মেটকোক ডিভিশন) সংস্কার করে গেস্টহাউস হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। ওই চত্বরেই থাকেন হলদিয়ার মহকুমাশাসক, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক, অতিরিক্ত জেলাশাসক। তবে বাকি অংশ এখনও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে মাঝেমধ্যেই জানালা, লোহার রড, আসবাব চুরির ঘটনা ঘটে। তবে এ দিনের ঘটনা নজিরবিহীন। |
 |
ভাঙা বাতিস্তম্ভ দেখাচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মী।—নিজস্ব চিত্র। |
রাত দু’টো নাগাদ সেক্টর-৮ আবাসন এলাকায় বেশ কিছু দুষ্কৃতীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেন টাটা স্টিলের আবাসনের নিরাপত্তাকর্মীরা। টহলদারিতে থাকা দুই নিরাপত্তাকর্মী দুষ্কৃতীদের তাড়া করলে পাল্টা হামলা চালায় তারা। চিৎকার শুনে আবাসন থেকে বেরিয়ে আসেন এইচএফসি-র জেনারেল ম্যানেজার শুভেন্দুশেখর গোস্বামী, টাটা স্টিলের সিনিয়র ম্যানেজার (ফায়ার অ্যান্ড সেফটি) বিপুল লাহিড়ীরা। শুভেন্দুবাবুকে লাঠি দিয়ে দুষ্কৃতীরা মারধর করে। টাটা স্টিলের ম্যানেজার বিপুলবাবুকেও মারধর করে। বানেশ্বর আদক নামে এক কেয়ারটেকার আটকাতে গেলে তাঁকেও মারধর করে। বানেশ্বরের কথায়, “আমি বেরোতেই ওদের একজন আমার নাম ধরে বলে গালাগালি করে। যেখানে পেরেছে মেরেছে।” টাটা স্টিলের নিরাপত্তাকর্মী শেখ নজরুল ও শক্তি কুমারকেও মারধর করা হয়।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আধিকারিকরা যে-যার বাড়িতে ঢুকে পড়েন। দুষ্কৃতীরা তখন একের পর এক আবাসনে ইট ছুড়ে, লাঠি দিয়ে জানালার কাচ ভাঙতে থাকে। ইতিমধ্যে পুলিশ এলে ছুটে পালায় দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার সকালে হলদিয়া টাউনশিপ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন টাটা স্টিলের সিনিয়র ম্যানেজার বিপুল লাহিড়ী। তিনি বলেন, “আগে কখনও এমনটা ঘটেনি। নিরাপত্তাকর্মীদের আওয়াজ পেয়ে বেরিয়েছিলাম। পরে দুষ্কৃতীদের এক জনকে বঁটি নিয়ে ছুটে আসতে ঘরে ঢুকে যাই। বাংলাতেই কথা বলছিল ওরা।” এইচএফসি-র জেনারেল ম্যানেজার শুভেন্দুশেখর গোস্বামী বলেন, “মাঝে মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটে এখানে। এমনটা কখনও হয়নি। তবে কাউকে চিনতে পারিনি। আমিও থানায় লিখিত জানিয়েছি।”
পুরো ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের শিল্পশহরে। এমনিতেই হলদিয়ায় সমাজবিরোধী কার্যকলাপ বাড়ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। গত বছর অক্টোবরে উপনগরীর শঙ্খিনী আবাসনে গভীর রাতে হামলা চালিয়ে এবিজি-র তিন কর্তাকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। পুরবাসীর অভিযোগ, পুলিশ নিষ্ক্রিয় বলেই সমাজবিরোধীদের দাপট বাড়ছে। যদিও পুলিশের বক্তব্য, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে, এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
কাছাকাছিই থাকেন অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, “রাতে আমি টের পাইনি। পরে জানতে পেরে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’ |
|
|
 |
|
|