|
|
|
|
শর্ত চাপিয়ে রাজ্য পিছিয়ে দিচ্ছে নন্দীগ্রাম-বিচার, বলল সিবিআই
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এ বার নন্দীগ্রাম গুলিচালনা মামলাতেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠল। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই অভিযোগ করল, একের পর এক শর্ত চাপিয়ে নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে বিচারের কাজ পিছিয়ে দিচ্ছে রাজ্য। এই নিয়ে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা কেউ মুখ খুলতে চাননি। দলীয় সূত্রে বলা হয়েছে, নন্দীগ্রামের এই মামলা রাজ্য সরকার তথা শাসকদলের কাছে যথেষ্ট স্পর্শকাতর বিষয়। দলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, “গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দেখছেন।”
২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালায় পুলিশ। অভিযোগ, সেই ঘটনায় প্রাণ হারান ১৪ জন গ্রামবাসী। পরে এই নিয়ে জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে দেয় বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চ। গত ছ’বছর ধরে সেই তদন্ত চালিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তার চার্জশিটও পেশ করা হয়েছে। কিন্তু মামলা এখনও শুরু হয়নি। এই নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে সম্প্রতি একটি জনস্বার্থ মামলা শুরু হয়। বিচারপতিরা সিবিআইকে রিপোর্ট দিতে বলেন। সেই রিপোর্ট নিয়ে শুনানির সময়ে এ দিন রাজ্যের বিরুদ্ধে পর পর অভিযোগ করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী আসরফ আলি।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আইনজীবী এ দিন হাইকোর্টকে বলেন, “সিবিআইয়ের তদন্ত শেষ। চার্জশিটও জমা পড়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মামলা করার অনুমতি না দেওয়ায় বিচারের কাজই শুরু হতে পারছে না।” শুধু আদালতের এজলাসেই নয়, বাইরে এসেও আসরফ বলেন, “রাজ্য তদন্তে শর্ত আরোপ করতে চাইছে। সিবিআই তদন্তে যা পেয়েছে, তার ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে। সিবিআইয়ের কাজ সত্য উদ্ঘাটন করা। নির্দোষকে ফাঁসানো নয়।”
|
|
এজলাসে শুনানির সময়ে আসরফের আরও বক্তব্য, “রাজ্য সরকারের কাছে বহু দিন আগেই অভিযুক্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে চেয়ে আবেদন করেছিল সিবিআই। কিন্তু এক এক বার এক একটা শর্ত চাপিয়ে সেই ফাইলে সই-ই করেনি রাজ্য সরকার।” তাঁর আরও অভিযোগ, “নির্দিষ্ট কিছু পুলিশ অফিসারের নাম অভিযুক্তদের তালিকায় ঢোকাতে বলছে রাজ্য। কখনও আবার কয়েক জন নেতার নাম কেন চার্জশিটে ঢোকানো হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছে। শর্ত পালন না করলে সিবিআইয়ের আবেদন মঞ্জুর হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
সিবিআই সূত্রে পরে বলা হয়, তারা রাজ্য সরকারের কাছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশিস বড়াল, সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৎকালীন নন্দীগ্রাম থানার ওসি শেখর রায়ের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করার অনুমতি চেয়েছিল। সরকার সেই অনুমতি না দিয়ে সিবিআইয়ের কাছে কিছু ব্যাখ্যা চায়। তখন থেকেই সমস্যার শুরু।
গত শুনানির সময়ে রাজ্য প্রশ্ন তোলে, এই মামলায় কেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম রাখা হল না? রাজ্যের বক্তব্য ছিল, বুদ্ধদেববাবুর নির্দেশেই গুলি চলেছিল। তাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হবে। একই কারণে পূর্ব মেদিনীপুরের কয়েক জন সিপিএম নেতা এবং ২০০৭-র ১৪ মার্চ পুলিশি অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েক জন পুলিশ অফিসারের নাম চার্জশিটে থাকা উচিত ছিল বলেও হাইকোর্টে জানিয়েছিল রাজ্য। তখনই সিবিআইকে রিপোর্ট জমা দিতে বলে হাইকোর্ট।
সেই রিপোর্টে সিবিআই জানায়, তদন্তে তারা ওই ঘটনায় যে সব পুলিশ অফিসারের যোগসাজস পেয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করার অনুমতি দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। তাই নিম্ন আদালতে বিচার শুরু করা যাচ্ছে না। রিপোর্টে খুশি না হয়ে হাইকোর্ট জানতে চায়, অভিযুক্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের আপত্তি কোথায় তা কেন সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসে মিটিয়ে নিচ্ছে না সিবিআই?
এই প্রশ্নের পরেই সিবিআইয়ের আইনজীবী তদন্তে শর্ত আরোপের অভিযোগ তোলেন। এ ভাবে শর্ত চাপিয়ে তদন্তে সিবিআই অভ্যস্ত নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের অফিসারেরা তদন্তে যাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছেন, তাঁদের নামেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। কে কী চাইছেন, তার উপরে সিবিআইয়ের তদন্ত নির্ভর করে না।”
এই সময় আবেদনকারীদের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার বলেন, “ছ’বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু আইনি টানাপোড়েনে ক্ষতিগ্রস্তরা বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় তখন সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বলেন, “আপনারা আপনাদের এই সব বক্তব্য রিপোর্ট আকারে লিপিবদ্ধ করুন।” রাজ্য ও সিবিআই, দু’পক্ষকে বৈঠকে বসে মতভেদ মিটিয়ে নিতেও বলেন তাঁরা। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সেই দিন সিবিআইকে আদালতে রিপোর্টটি জমা দিতে হবে।
যে দু’জায়গার জমি আন্দোলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যে পালাবদলের অক্সিজেন জুগিয়েছিল, নন্দীগ্রাম তার অন্যতম। তাই সব দিক থেকে নন্দীগ্রাম তৃণমূলের কাছে স্পর্শকাতর বিষয়। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরাও এ দিন সে কথাই জানিয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, কেউই তাই এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। উল্টো দিকে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “যাঁদের জন্য নন্দীগ্রামে গুলিচালনা নিয়ে হইচই হয়েছিল, পরে তাঁদেরই পদোন্নতি হয়েছে। পদোন্নতি তো আর আকাশ থেকে পড়ে না!”
|
পুরনো খবর: বুদ্ধের রেহাইয়ে কোর্টেও প্রশ্ন সরকারের |
|
|
|
|
|