শ্রীনি-র প্রত্যাবর্তন ঘটছে ক্রিকেটমর্তে
ব কিছু ঠিকঠাক চললে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের ক্রিকেটমর্তে প্রত্যাবর্তন ঘটছে আর মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টা পরে। রোববার কলকাতায় ভারতীয় বোর্ডের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে শ্রীনিবাসন সম্পর্কিত দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিশনের রায় জানানো হবে। তবে শুধুমাত্র রায়-ই জানানো হবে। বিচারের খুটিনাটি, কী ভাবে তদন্ত হল, কাকে কাকে জেরা করা হয়েছিল, সব কিছু নয়।
ওয়াকিবহাল মহল ধরেই নিচ্ছে বিচারপতি জয়রাম চৌটা এবং আর বালাসুব্রহ্মণ্যম, মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রাক্তন দুই বিচারপতির রায় শ্রীনিবাসনের পক্ষে যাবে। এঁদের রিপোর্ট যে জমা পড়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারের কাছে স্বীকার করলেন বোর্ডের শীর্ষকর্তা। গড়পড়তা মামলায় রায় বার হওয়ার আগে সব সময় একটা অনিশ্চয়তা থেকে যায় কোন দিকে যাবে তা নিয়ে। এক্ষেত্রে সে অনিশ্চয়তার পরিমাণ অনেক কম। যেহেতু শ্রীনিবাসনের ঘনিষ্ঠরা চলতি সপ্তাহে একাধিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকর্তাকে বলেছেন, “বেশি ট্যাঁ-ফোঁ করতে যাবেন না। যেমন চলছে চলতে দিন। শ্রীনি লাইনে থাকুন। ওটাই আজও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মত। আর উনি দিন দশেকের ভেতর ফেরত আসছেন।” বিদেশি ক্রিকেট কর্তারা পড়েছেন প্রবল সমস্যায়। এত দিন তাঁরা ভাবছিলেন শ্রীনিবাসন-অধ্যায় ভারতীয় ক্রিকেটে শেষ। তাঁরা এ বার নরমপন্থী ডালমিয়া-লাইন অনুসরণ করবেন। এই খবর পাওয়ার পর তাঁরা কেউ কেউ রীতিমতো আতঙ্কিত।
পুনঃপ্রবেশ ও প্রস্থানের পথে।
কলকাতার বৈঠকে প্রকাশিত রায় যদি শ্রীনিবাসনের পক্ষে যায়, তা হলে তাঁর আর সেপ্টেম্বরের বোর্ড নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করায় কোনও বাধা থাকবে না। এত দিন বিরোধীরা যে স্বপ্ন দেখছিলেন তদন্ত করতে সময় লাগবে অনেক বেশি, বিচারপতিদের রায় দিতেও সময় লাগবে অনেক বেশি। সেপ্টেম্বরে মধ্যে যদি রায় না বেরোয় তা হলে শ্রীনিবাসন প্রতিদ্বন্দিতাই করতে পারবেন না। এক মোচড়ে সেই ভাবনাকে শ্রীনি একটা ধোনি সদৃশ ছক্কা হাঁকালেন।
বোর্ড সদস্যদের কেউ কেউ এ দিন বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, কবে তদন্ত হল, কবে লোককে জেরা করা হল, সে সব তো আমরা জানতেই পারলাম না। আর একজন জানতে চান গুরুনাথ মইয়াপ্পনকে কি আদৌ ডাকা হয়েছিল? শ্রীনি-র বিরোধীরাও কেউ খবর পাননি যে, কমিশনের কাজ শেষ। এ দিন রাতে ললিত মোদীর সঙ্গে যখন আনন্দবাজার যোগাযোগ করে তখন তিনি লন্ডনের কাছাকাছি স্পিডিং বোটে। টেক্সট মেসেজে জানালেন, “কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়েছে? জানি না তো!” আর এক বিরোধী আইএস বিন্দ্রার চণ্ডীগড়ের বাড়িতে ফোন বেজে গেল। বিন্দ্রাও সম্ভবত জানেন না যে, শ্রীনির প্রত্যাবর্তন ঘটতে চলেছে। জানলে অবশ্যই তাঁর ব্লগে লিখতেন, ‘শুরু থেকেই তো আমরা এটা বলে আসছিলাম। গোটা ব্যাপারটাই শো-অফ। শ্রীনি আজও পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে।’ কমিশন যখন প্রথম গঠন হয়, তখন সেখানে প্রাক্তন বোর্ড সচিব সঞ্জয় জাগদালেও ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি ইস্তফা দেওয়ায় পরিবর্ত হিসেবে কাউকে নেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্ট ডালমিয়াকে অনুরোধ করা হলে তিনি অস্বীকৃত হন। বিরোধী পক্ষ থেকে তখনও বলা হয়েছিল, কমিশনের দু’জন বিচারপতিই কী ভাবে তামিলনাড়ু থেকে নির্বাচিত হতে পারেন? বলা হয়েছিল, এটা আদতে বোর্ড নিযুক্ত প্রহসন।
বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়াকে এই এক মাসে সদস্যরা প্রেসিডেন্ট বলেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন। চিঠিপত্রে কার্যনির্বাহী শব্দটাও লিখছিলেন না। ডালমিয়া কি জানেন নতুন পরিস্থিতির কথা? রাতে বোর্ড প্রেসিডেন্ট বললেন, “রোববার এ সব নিয়ে কথা বলা যাবে। তবে আমি কোনও কামড়াকামড়ির মধ্যে নেই।” রোববার শ্রীনিবাসন কলকাতায় আসছেন না। তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিত্ব করবেন কাশী বিশ্বনাথন। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে যে, সেপ্টেম্বরে ডালমিয়াই যে প্রেসিডেন্ট থেকে যাবেন, এই আশা যাঁরা দেখছিলেন সেখানে আচমকাই শ্রাবণের কালো মেঘ। বৈঠকে কথা ছিল, ললিত মোদীর শাস্তি নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু ডালমিয়া ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়ে দিয়েছেন, মোদী নিয়ে কোনও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত কলকাতার বৈঠকে নিতে চান না। ওয়াকিবহাল মহলের মনে হচ্ছে, বোর্ড যখন ফের শ্রীনিবাসনের হাতেই চলে যাচ্ছে, তখন ডালমিয়া খামোখা এখন সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন কেন?
শ্রীনির হয়ে ঘনিষ্ঠমহল পরিষ্কার বলছে, আর দিন দশেকের মধ্যেই ছবিটা সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখনই সবাই বুঝতে পারবে, যে তিনি স্বমহিমায় ফেরত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কর্তারা প্রথমে এই নরম স্বরের হুমকি পেয়ে খুব বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। এখন খোঁজ করে দেখছেন, শ্রীনি সত্যিই ক্রিকেটমর্তে ফেরত আসছেন। আইপিএল স্পট ফিক্সিং বিতর্কের জন্য যে মর্ত থেকে তাঁকে স্বেচ্ছা অন্তর্ধানে যেতে হয়েছিল। বোর্ডে কেউ কেউ দাবি করছেন, যদি কমিশনের রায় পক্ষেও যায় এবং শ্রীনি পুনর্নির্বাচনের জন্য প্রার্থীও হন, নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী। এমনকী তাঁরা এ-ও ভাবছেন, কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধেও কেউ কেউ সুপ্রিম কোর্টে চলে যেতে পারেন। কেউ তাঁকে ওয়াকওভার দেবে না। গরিষ্ঠ অংশ অবশ্য মনে করে শ্রীনির বোর্ডে যেমন দাপট ছিল, আজও তাই আছে। জাতীয় মিডিয়া যদি বিশাল চিৎকার-চেঁচামেচি না করে তা হলে ফের সিংহাসনে বসে পড়তে তাঁর কোনও অসুবিধে হবে না।
রোববারের কলকাতার বোর্ড সভা তাই ভারত বনাম জিম্বাবোয়ে একপেশে ম্যাচের চেয়ে অনেক চিত্তাকর্ষক হতে যাচ্ছে।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.