ধৃত মহিলা আইনজীবীর অভিযোগ, তাঁকে ফাঁসিয়েছেন তাঁর আইনজীবী বন্ধু।
পুলিশি জেরার মুখে ওই আইনজীবী বন্ধুটি আবার বলছেন, তিনিই বরং ফেঁসে গিয়েছেন ওই মহিলার ভাল করতে গিয়ে।
লাভলি চাড্ডা এবং সব্যসাচী রায়চৌধুরী। ফুলবাগানের ফ্ল্যাটে নাবালিকাকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত শিয়ালদহ আদালতের এই দুই আইনজীবীর ঠিকানা আপাতত লালবাজারের লক-আপ। বুধবার গ্রেফতার হওয়ার পর দু’জনকেই আলাদা ভাবে জেরা করেছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু যে ভাবে দু’জনেই পরস্পরের উপরে দায় চাপিয়েছেন, তাতে তদন্তকারীরা কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত। তাই দু’জনকে এ বার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চাইছেন তাঁরা।
গোয়েন্দাদের দাবি, লাভলি অভিযোগ করেছেন, সব্যসাচী তাঁকে পুলিশের ভয় দেখাতেন। বিভিন্ন সময়ে তাঁকে ব্যবহার নানা জায়গা থেকে সুযোগ সুবিধে আদায় করতেন। তাঁর কথা শুনে না চললে পুলিশের বড়কর্তাদের দিয়ে সমঝে দেওয়ার হুমকিও দিতেন বলে লাভলির অভিযোগ। এক তদন্তকারী অফিসার বৃহস্পতিবার বলেন, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আধিকারিককে লেখা চিঠিতে এবং পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে নির্যাতিতা নাবালিকাও সব্যসাচীর বিরুদ্ধে পুলিশের ভয় দেখানোর অভিযোগ এনেছিল। |
শিয়ালদহ ফৌজদারি আদালতের আইনজীবী হওয়ার সুবাদে কলকাতা পুলিশের বড় একটা অংশের সঙ্গে সব্যসাচীর দহরম মহরম ছিল বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন। সেই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে সব্যসাচী বিভিন্ন জায়গায় কাজ হাসিল করতে পুলিশ অফিসারদের নাম ব্যবহার করতেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তকারীরা জানান, লাভলি ও তাঁর স্বামী সুব্রত মিশ্রের ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। লাভলির দাবি, ওই এজেন্সি থেকে মাঝেমধ্যেই পুলিশ অফিসারদের জন্য গাড়ি চাইতেন সব্যসাচী। কিন্তু গাড়ি নিলেও কখনওই ভাড়ার টাকা দেননি তিনি। লাভলির বক্তব্য, ওই গাড়ি সত্যি-সত্যিই কোনও পুলিশ অফিসার ব্যবহার করেছেন কি না, তা তিনি জানতেও পারেননি।
লাভলির অভিযোগ কতটা সত্যি, তা সব্যসাচীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, সব্যসাচী বলেছেন, লাভলির সঙ্গে তাঁর পরিচয় খুবই অল্প দিনের। ওই মহিলা আইনজীবীর কোনও উপকার বই অপকার তিনি কখনও করেননি। প্রতিটি গাড়ির ভাড়া তিনি মিটিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন সব্যসাচী। তাঁর বক্তব্য, লাভলির ভালর জন্যই তিনি ওই নাবালিকার ব্যাপারে নাক গলিয়েছিলেন। তা করতে গিয়েই ফেঁসে গিয়েছেন।
কী ভাবে? সব্যসাচীর দাবি, ওই নাবালিকা লাভলির গাড়িচালকের সঙ্গে পালাতে চেয়েছিল। তাই মেয়েটিকে বাঁচাতে তাকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে রেখে আসেন। কিন্তু মেয়েটি তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে ফাঁসিয়ে দেয় বলে সব্যসাচীর দাবি। দাবি এবং পাল্টা দাবির জট কাটাতে গোয়েন্দারা মুখোমুখি বসাতে চাইছেন দুই আইনজীবীকে। যাঁরা একদা ঘনিষ্ঠ, আপাতত যুযুধান। অবশ্য লক-আপে। |