ওড়িশায় লগ্নি এখন আমাদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে নবীন পট্টনায়কের রাজ্যে তাদের ১২০০ কোটি ডলারের প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্প সম্পর্কে এই মন্তব্য জনৈক পস্কো কর্তার।
নাম গোপন রাখার শর্তেই অবশ্য বৃহস্পতিবার ভারতে প্রায় আট বছর ধরে ঝুলে থাকা প্রকল্পটি সম্পর্কে মুখ খোলেন ওই কর্তা। জানান, একেই দীর্ঘ দেরির জন্য খরচ বাড়তে থাকায় ভবিষ্যতে এর থেকে মুনাফা করা নিয়ে পস্কোর বহু শেয়ারহোল্ডাররেরই আশা-ভরসা কার্যত শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে। তার উপর বিশ্ব জুড়েই এখন মন্দা ইস্পাত শিল্পে। যার প্রেক্ষাপটে ওড়িশার কারখানা ভবিষ্যতে যদি তৈরি হয়ও, তা আদৌ সংস্থার জন্য ভাল হবে কি না, প্রশ্নচিহ্ন উঠেছে তাকে ঘিরেও। কারণ এই ক’বছরে একের পর এক অধিগ্রহণের জেরে এমনিতেই বিপুল দেনায় ডুবেছে বিশ্বের এই পঞ্চম বৃহৎ ইস্পাত নির্মাতা। শুধু গত তিন বছরেই দেনার অঙ্ক এক লাফে দ্বিগুণ হয়েছে। চিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাজারে ইস্পাতের দাম, মুনাফা, দু’ই-ই কমায় বৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহেই আকরিক লোহার সংস্থান না-হওয়ায় কর্নাটকে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত প্রকল্প গোটানোর কথা জানিয়েছে পস্কো। ফলে ওড়িশা প্রকল্পের ভবিতব্যও সেই দিকে যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে আজকের পর সন্দেহ দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। তবে পস্কো আধিকারিকেরা আবারও জানিয়েছেন, ওড়িশায় প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে সরছে না সংস্থা। |
প্রসঙ্গত, গত ২০০৫-এ প্রস্তাব দেওয়ার পর প্রায় দশক ঘুরতে চলেছে। কিন্তু জগৎসিংহপুরে এখনও দিনের আলো দেখেনি পস্কোর কারখানা। যার কারণ হিসেবে কখনও দেখা দিয়েছে জমি অধিগ্রহণ সমস্যা ও তার জেরে প্রকল্প-বিরোধীদের তীব্র প্রতিরোধ, কখনও বা বিভিন্ন দফতরের ছাড়পত্র পাওয়ায় অকারণ বিলম্ব। ফলে সংস্থার ব্যবসা বিস্তারে বাজি রেখে পস্কোর যে-লগ্নিকারীরা এক সময়ে বিনিয়োগ প্রস্তাবটিকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন, আজ তাঁদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে ও চিন্তায়।
ভারতের মতো সম্ভাবনাময় বাজারকে হাতিয়ার করে ব্যবসা বাড়ানো ও দেশীয় বাজারের উপর নির্ভরতা কমানো এই দুই কারণেই গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ও চিফ এগ্জিকিউটিভ চাং জুন-ইয়াঙের নেতৃত্বে বিশ্ব জুড়ে ব্যবসা বিস্তারের পরিকল্পনা করেছিল পস্কো গোষ্ঠী। যার অঙ্গ ওড়িশার লগ্নি। কিন্তু এখন এই লগ্নি সত্যিই কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে সংশয় দানা বাঁধছে, মনে করছেন কোরিয়া ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজের অ্যানালিস্ট চোই মুন-সান। কারণ এই প্রকল্পে ঢালার মতো যথেষ্ট অর্থ পস্কোর ভাঁড়ারে নেই বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
|