‘সরকারি জমি’ ঘিরে ফেলার চেষ্টার আভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নবগোপাল বাউড়ি নামে ওই ব্যক্তি এ বার ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে জেলা পরিষদের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ঘটনাটি খয়রাশোলের। নবগোপালবাবু খয়রাশোলের বিদ্যালয় পরিদর্শকের (দক্ষিণচক্র) কার্যালয়ের জায়গার একাংশ সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং সেটা দেখেই বিদ্যালয় পরিদর্শক বিষয়টি খয়রাশোলের বিডিওকে লিখিত ভাবে জানান। বিডিও মহম্মদ ইসরার বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েই খয়রাশোল থানার ওসিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
যদিও ‘বিতর্কিত’ জায়গায় সীমানা প্রাচীর তৈরির প্রস্তুতি বৃহস্পতিবারও বন্ধ ছিল না দেখে খানিকটা হতাশ বিদ্যালয় পরিদর্শক ললিতা নামতীর্থ। তিনি বলেন, “যেটুকু আমি জানি, যে জায়গাটির উপর আমাদের কার্যালয়টি রয়েছে সেটি আদতে খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির জায়গা এবং ওই ভদ্রলোক সেই সরকারি জায়গারই একাংশকে ঘেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেখে বিষয়টি বিডিওকে জানাই। কারণ, বিডিও সাহেবই স্থানীয় প্রশাসক। যা করার উনিই করবেন।”
|
কাজ চলছে বিতর্কিত জায়গায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত |
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যালয় পরিদর্শকের কার্যালয়ের ওই জায়গায় জোর করে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টার বিরুদ্ধে এর আগেও প্রতিবেশী নবগোপালবাবুর সঙ্গে দফতরের সমস্যা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, বাড়ি করলেও ঘরের বাইরে আসার জায়গা না থাকায় বছর দু’য়েক আগে জোর করে বিদ্যালয় পরিদর্শকের সীমানা প্রাচীর ভেঙে যাতায়াত শুরু করেন নবগোপালবাবু। পরে যখন সেটি প্রশাসনের নজরে আনা হয় তখন ততকালিন খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের সমীর রায় উভয় পক্ষের মধ্যে একটা মধ্যস্থতা করে নবগোপালবাবুকে যাতায়াতের জন্য কিছুটা অংশ ছেড়ে দিয়েছিলেন। নিন্দুকদের মতে, সুবিধাবাদী নবগোপালবাবু তখন বাম রাজনৈতিক দল ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্য ছিলেন। আর সেই জন্যই সেই সুবিধা পেয়েছিলেন। এখন তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার পরে আবার সুবিধা নিতে চাইছেন তিনি।
বিষয়টি কিছুটা হলেও মেনে নিয়েছেন সদ্য প্রাক্তন খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের সমীর রায়। তিনি বলেন, “ওঁর কেনা জায়গার পরে আর কোনও জায়গা না থাকায় মানবিকতার খাতিরে সেটা করা হয়েছিল। এর পরেও যদি উনি জায়গা ঘিরতে যান সেটা আইন বিরুদ্ধ হবে। এ ব্যাপারে যা করার বিডিও-ই করবেন।” বিডিও মহম্মদ ইসরার বলেন, “যেটুকু জানতে পেরেছি বিদ্যালয় পরিদর্শকের যে কার্যালয় রয়েছে তার পিছনের দিকে একটি গলির মতো অংশ ঘিরে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। জায়গা কার এই বিতর্কে না গিয়েও গলি বা রাস্তা এ ভাবে কেউ ঘিরতে পারেন না। আমি সেটাই খয়রাশোল থানাকে দেখতে বলেছি।” খয়রাশোলের ওসি হাবিবুল হাসান জানান, নির্দেশ না পেলে পুলিশ সাধারণত জায়গা জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পার না। বিডিও-র চিঠি পাওয়ার পরে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে আনুরোধ করা হবে, জায়গাটি আসলে কার সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য। তার পরেই কিছু করা সম্ভব।
যাঁর বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ সেই নবগোপালবাবু অবশ্য এ সব মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা দাবি, “যে জমিটি আমি ঘিরতে চাইছি সেটা আমারই কেনা কেনা জায়গা। আর এ বিষয়ে কোনও পক্ষের আপত্তির কথাও আমি জানি না।” তবে বাড়ি থেকে বেরনোর জায়গা না থাকায় স্কুল পরিদর্শকের আফিসের একটি অংশ তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা মেনে নিয়েছেন তিনি। |