নিহত সাগর ঘোষের বাড়িতে কংগ্রেসের দল
খালি গায়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল পুলিশ
সবা পঞ্চায়েতের বাঁধনবগ্রামে বৃদ্ধ সাগরচন্দ্র ঘোষের খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির কাছে নিহতের পরিবারকে নিয়ে যাবে কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার নিহত সাগরবাবুর ছেলে, কসবা পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) হৃদয় ঘোষকে এ কথা জানিয়েছেন কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি।
এ ব্যাপারে নিহতের পরিবারকে সাহায্য করার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি খুনের ঘটনায় পাড়ুই থানার ভূমিকার নিন্দাও করেছেন ওই কংগ্রেস নেতা। এলাকায় তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের’ প্রতিবাদে পথ অবরোধ থেকে শুরু করে লাগাতার আন্দোলন করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁর নেতৃত্বে বোলপুর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মহম্মদ জাহাঙ্গির হোসেন-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার দলীয় নেতাদের নিয়ে ৩০ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল নিহত সাগরবাবুর বাড়িতে আসেন। কড়া নেড়ে হৃদয়বাবুকে ডাকেন। কংগ্রেস নেতৃত্ব বাড়ির চৌকাঠের ভিতরে পা রাখতে না রাখতে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেন হৃদয় ঘোষ। বলেন, “আমাকে আর আমার পরিবারকে খুনের হুমকির কথা জানিয়েছিলাম জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে। তা সত্ত্বেও আমার বাবাকে ওরা গুলি করে খুন করল। আমরা সুবিচার চাই।”

জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন নিহতের স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
হৃদয়বাবুকে বুকে জড়িয়ে ধরে জেলা কংগ্রেস সভাপতি সান্ত্বনা দেন। বাড়িতে ঢুকে সবিস্তার ঘটনার রাতের বর্ণনা শোনেন। হৃদয়বাবু ও তাঁর পরিবারের লোকজন খুনের ঘটনায় যুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি ওই রাতে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় সাগরবাবুকে ফেলে পাড়ুই থানার পুলিশকর্মীদের একাংশের ‘অমানবিক’ আচরণ এবং ‘নির্দোষ’দের সাজানো মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করেন। হৃদয়বাবুর দাবি, “বাবা হামলাকারীদের চিনে ফেলেছিলেন। ওদের নাম করে করে বলেছিলেন, ‘আমাকে তোরা গুলি করলি!’ কিন্তু, ওরা শোনেনি। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে ফের গুলি করে।” বাড়ির দেওয়ালে গুলির চিহ্ন ও রান্না ঘরের মেঝেয় তখনও পড়ে থাকা রক্ত দেখতে দেখতে নিহত সাগরবাবুর স্ত্রী সরস্বতীদেবীকে সান্ত্বনা দেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের সামনেই ‘আমার ছেলেকে বাঁচান’ বলতে বলতে জ্ঞান হারান সরস্বতীদেবী।
কসবা পঞ্চায়েত এলাকার পরিবেশ এখনও থমথমে। পুলিশি হেনস্থার ভয়ে, বাঁধনবগ্রাম এখনও কার্যত পুরুষশূন্য। খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে পাড়ুই থানার পুলিশ এক একাদশ শ্রেণির ছাত্র-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা নির্দোষ বলেই দাবি সাগরবাবুর পরিবার ও গ্রামবাসীদের বড় অংশের। ধৃতেরা কোনও না কোনও ভাবে সাগরবাবু পরিবারের সম্পর্কিতও। ওই স্কুলছাত্র সম্পর্কে হৃদয়বাবুর ভাগ্নে। বাকি তিন জন হলেন হৃদয়বাবুর মেয়ের গৃহশিক্ষক মানস রায়, মানসবাবুর বাবা নেপাল রায় ও কাকা নবকৃষ্ণ রায়। গ্রামের দুর্গামন্দিরের পিছন দিকে রায় পরিবারের বাড়ি।
ওই বাড়িতে গিয়ে পাওয়া গেল দুই বধূকে। ধৃত নবকৃষ্ণবাবুর স্ত্রী আরতি রায়ের অভিযোগ, “রবিবার মাঝরাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে পাড়ুই থানার মেজো বাবু দ্বিজরাজ সাহানা পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢোকেন। দরজায় লাথি মেরে আমাদের ঘুম থেকে তোলেন। আমি আর আমার স্নাতক স্তরে পড়া মেয়ে কত অনুনয়বিনয় করে হাতজোড় করে বলেছিলাম। পুলিশ শোনেনি। বারবার জানতে চেয়েছিলাম কেন ওঁদের ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। জবাব পাইনি!” খড়ের চালার মাটির দোতলা বাড়িতে তখনও স্পষ্ট দরজার সঙ্গে চৌকাঠ এবং মাটির ভাঙা টুকরো। আরতিদেবীর জা সরস্বতী দেবীর কথায়, “পুলিশ মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া সময় বলেছিলাম স্বামী, দেওর আর ছেলে নির্দোষ। সাগরবাবু আমাদের আত্মীয়। কোথাও নিশ্চয় ভুল হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কোনও কথা ওরা শোনেনি।”
পুলিশের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ জানিয়েছে ধৃত একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ার পরিবার। ওই ছাত্রের দাদুর শারীরিক অসুস্থতার জন্য বাবা ও মা বাড়িতে নেই। সেই সময় তাঁদের নাবালক ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে গ্রামে। ছাত্রটির ঠাকুরমা ও দুই জেঠিমা বলেন, “গভীর রাতে ছেলেটা ভাল করে চোখ খুলে তাকাতেও পারছিল না! ঘুমের ঘোরে ঢোলে পড়ছিল। ওই অবস্থায় খালি গায়ে টানতে, টানতে নিয়ে গেল পুলিশ! কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ঘরে ঢুকে তল্লাশিও চালিয়েছে পুলিশ।” তাঁদের অভিযোগ, বিনা দোষে সাজানো মামলায় পুলিশ ওই নাবালককে ফাঁসিয়েছে।
একই দাবি করেছেন কসবা পঞ্চায়েতের ১২ নম্বর সংসদে নির্দল হিসাবে প্রার্থী হওয়া হৃদয়বাবু ও তাঁর পরিবার। হৃদয়বাবুর স্ত্রী শিবানী ঘোষ বলেন, “পুলিশ ওই রাতে আমাদের দিয়ে জোর করে অভিযোগ লিখিয়েছিল। যাদের নামে অভিযোগ লেখানো হয়, তারা আদৌ খুনের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু চাপের মুখে ওই নামগুলো লেখা ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। শ্বশুরমশাইকে খুনের ঘটনায় ওঁরা কোনও ভাবেই যুক্ত নন।”
সাগরবাবুর খুনের ঘটনায় যাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পুলিশ সুপারকে চিঠি মারফত পাঠিয়েছেন শিবানীদেবী, সেই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল পর্যন্ত মঙ্গলবার বলেছিলেন, “পুলিশ যাদের ধরেছে, তারা খুনে জড়িত নয়।” জোর করে অভিযোগ লেখানো বা নির্দোষদের ধরার অভিযোগ প্রসঙ্গে অবশ্য পাড়ুই থানার পুলিশ মুখে কুলুপ এঁটেছে। জেলার পুলিশকর্তারাও কিছু বলছেন না।
হৃদয়বাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে বৃহস্পতিবার সৈয়দ সিরাজ জিম্মি অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের বলি হয়েছেন সাগরবাবু। নিহতের পরিবারের আমরা সমব্যথী। এই পরিবারের পাশে আমি,আমার দল রয়েছে। পুলিশ নিষ্ক্রিয় এবং আসল খুনিদের আড়াল করে সাজানো মামলায় নিরপরাধ আত্মীয়দের গ্রেফতার করার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলব।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.