ফুলদানিতে রাখুন তাজা ফুল নিজে খুব বেশি সাজবেন না
ত বছর ধরে বাড়িতে লোকজন ডেকে নেমন্তন্ন করে খাইয়ে আমি এটা বুঝেছি যে ব্যাপারটা বাড়িতে সুন্দর-স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ম্যানেজ করাটাই সবচেয়ে বুদ্ধির কাজ। গত বছর মহেশ ভট্টর একটি নাটক ‘দ্য লাস্ট স্যালুট’ দেখতে গিয়ে এ রকম একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। নাটকটা ইরাকি সাংবাদিক মুন্তাজের আল জাইদির একটি বইকে ভিত্তি করে (বলে রাখা ভাল ইনিই সেই সাংবাদিক, যিনি প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে ‘কুকুর’ বলে জুতো ছুড়ে মেরেছিলেন)।
আমাদের বাড়ির পাশেই বিড়লা সভাঘরে নাটকটা শেষ হতে আমরা ঠিক করি মহেশ এবং তাঁর পরিচালক অরবিন্দ গউরের সঙ্গে হেঁটেই বাড়ি ফিরব। নাটক-পরবর্তীআলোচনা চালানোটাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু যথেষ্ট দেরি হয়ে গিয়েছিল। কাজেই ওঁদের সবাইকে ডিনারের জন্য থেকে যেতে বলি।
সত্যি বলতে, আট জন লোকের খাবার চটজলদি বানানোটা বেশ চাপের ব্যাপার। আমি বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করতে যাচ্ছিলাম প্রায়। এমন সময় ভট্ট সাহেব বলেন ডাল-রুটি হলেই চলে যাবে তাঁর।
পুরো রাতের খাবার তৈরিতে আধ ঘণ্টার বেশি সময় লাগেনি। ড্রিঙ্কসের রাউন্ড চলতে চলতেই হাজির হতে শুরু করে ধোঁয়া ওঠা চাপাটি। টাটকা ছোলার ডাল, টেস্টি আলু-মটরের ঝোল, অনেকটা আচার, আর ঝিরিঝিরি কাটা পেঁয়াজ, টমেটো, শশার স্যালাড-সহ ডিনারটা জম্পেশ হয়েছিল। খিদের পেটে গপগপিয়ে খেয়েছিল সবাই। দু’বছর হয়ে গিয়েছে ঘটনাটার। কিন্তু এখনও মিঃ ভট্ট আমাদের রাঁধুনি যমুনাকে সেই অপূর্ব খাবার পরিবেশনের জন্য ধন্যবাদ জানাতে ভোলেন না। তবে আমি এটা বলতে চাইছি না যে, বাড়িতে সন্ধেবেলা লোকজন নেমন্তন্ন করে খুব সাধারণ খাবার খাইয়ে দিতে। আমার মনে হয় মেনু প্ল্যান করার সময় তিনটে খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মাথায় রাখা দরকার। প্রথমত, বাড়িতে যে রান্নাটা সবচেয়ে ভাল করা হয় সেটা বানানো। দ্বিতীয়ত, কেবলমাত্র দেখানোর তাগিদে পরীক্ষানিরীক্ষা করে খুব কেতার ডিশ না বানানো। আর অবশ্যই অতিথিরা কে কীভালবাসেন, সেটা ঠিকঠাক মাথায় রাখা। হতেই পারে আপনি পাঁচ জন দম্পতিকে বাড়িতে নেমন্তন্ন করেছেন। হয়তো জানেন না কে ভেজ পছন্দ করে বা কে নন-ভেজ। বা তাদের কারও সি-ফুডে অ্যালার্জি আছে কি না। বা তারা রেড মিট খান কি না। এখন আপনি যদি তাঁদের প্রত্যেককেই পাঁচ-ছ’বার ফোন করে একটু জেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন, তা হলে তাঁরা অন্তত এটুকু বুঝবেন যে আপনি তাঁদের একটা ভাল ডিনার দিতে আপনার সাধ্য মতোই চেষ্টা করেছেন।
এক বার এক বাঙালিবাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিলাম। ওখানে এঁচোড়ের ডালনা, মোচার ঘণ্ট, থোড়, চাপড় ঘণ্ট, চিংড়ির পাতুরি, রুই কালিয়া, তোপসে মাছের ঝোল, বড় বড় গলদা চিংড়ি খেতে যে কী অপূর্ব লেগেছিল! বিশেষ করে গলদা চিংড়ির মাথাটা রেলিশ করে চিবোতে গিয়ে যেন স্বর্গীয় স্বাদ পাচ্ছিলাম। দিল্লি থেকে আমাদের কাছে বেড়াতে আসা এক পঞ্জাবি দম্পতিকেও নিয়ে গিয়েছিলাম আমাদের সঙ্গে। ওঁরা খালি লুচি, ছানার ডালনা আর পায়েস খেয়েই ক্ষান্ত হলেন। সব সময় যে আমাদের খাবার খাইয়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোককে আমরা তৃপ্ত করতে পারব, এমনটাও নয়।
কাজেই চলুন প্ল্যানিং-এর কথাতেই ফিরি। যাঁরা আসছেন নেমন্তন্ন খেতে, তাঁদের কথা ভেবে আগে থাকতেই ঘাবড়ে যাবেন না যেন। যদি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষজনআসেন, তা হলে কখনওই একটা আঞ্চলিক রান্নার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। অন্তত তিনটে নন-ভেজ পদের পাশাপাশি একই সংখ্যক ভেজ আইটেমও যেন থাকে। কারণটা খুব সোজা। অনেকেই ডায়েট সচেতন হন, বা খাবারের বিধিনিষেধও থাকে বহু সময়। কিন্তু জিততে তো আপনাকে হবেই। তাই নয় কি?
ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ দিয়ে নানা রকম সুস্বাদু নিরামিষ পদ বানানো যায়। আর একটা দারুণ আলুর দম হলে তো কথাই নেই। এমন মাছ রাঁধবেন যাতে কাঁটা না ছাড়াতে হয়। ভেটকি বা চিংড়ি সে দিক থেকে একদম ঠিকঠাক। আর চিকেন তো নানা ভাবেই রান্না করা যায়। (আমি তো অনেক সময় প্রেমিলা লালের শেখানো গাজর মশলা মুর্গি রান্না করতাম। পালক চিকেনও রাঁধতাম। আর রান্না করতাম ডাব চিংড়ি। সঙ্গে নিরামিষ পদ হিসেবে করতাম ডাব ঝিঙে আর টমেটো পিউরি দিয়ে নার্গিসি কোপ্তা)। প্রতিটা রান্নাই চেষ্টা করতাম পাঁচমিশেলি রঙে করতে যাতে টেবিলে সাজানো অবস্থায় খাবারগুলো দেখতেও ভারী সুন্দর লাগে। সহযোগী পদ হিসেবে বানানো দই বড়াও বেশ একটা আলাদা মাত্রা এনে দেয় খাবারে রংয়ের হোলি খেলতে। এই প্রত্যেকটি খাবারই কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের। আর যাঁরা খাবেন, তাঁরা বিভিন্ন রুচির মানুষ। কাজেই যে কোনও একটা নির্দিষ্ট আঞ্চলিক খাবার যে তাঁদের খুশি করতে পারবে না, তা তো বলাই বাহুল্য।
মাছ রাখুন। তবে কাঁটা ছাড়া ডাব চিংড়িই হিট কুছ মিঠা হো যায়ে
মিষ্টির দোকানগুলোতে এত রকমের মিষ্টি পাওয়া যায়। দরকারে সেগুলোও আনিয়ে নিন। সবই তো হল। কিন্তু টেবিলটাও যাতে দেখতে আকর্ষণীয় লাগে, সেটার দিকেও নজর দিতে হবে। তাই সার্ভিং ডিশগুলো যেন এক রকম হয়। ‘শ্যাফিং’ ডিশ বা বিভিন্ন সাইজের আর রঙের আর্টিস্টিক সেরামিক ডিশগুলোও কিন্তু গোটা ব্যাপারটায় একটা ক্লাসি লুক এনে দেয়। তাই পার্টির জন্য এগুলোকে আলাদা করে রেখে দেওয়াই ভাল। অন্য খুঁটিনাটি দিকেও নজর রাখতে হবে। ড্রিঙ্কস থাকলে যেন অনেক রকমের ড্রিঙ্কসের ব্যবস্থা থাকে তা দেখতে হবে। সোডা, বরফ, ঠান্ডা জল, ফিজি ড্রিঙ্কস আর জুসের সুবন্দোবস্ত থাকা চাই। ফুলদানিতে রাখুন তাজা ফুল। ঘরের চারপাশে বোলের মধ্যে জুঁইয়ের মালাও রেখে দিতে পারেন। টয়লেটে অতিথিদের জন্য রাখুন ফ্রেশ তোয়ালে, নতুন সাবান। সম্ভব হলে সুগন্ধী মোমবাতিও। ব্যাকগ্রাউন্ডে চালাতে পারেন হাল্কা গানও। দারুণ একটা পরিবেশ তৈরি হবে। তবে কথাবার্তা বলার সময় প্রয়োজনে গান বন্ধ করে দেবেন। শেষ পাতে যদি ‘গুন্ডি’ পানের ব্যবস্থা রাখতে পারেন, তা হলে তো জমে ক্ষীর। তো? অতিথিরা সব জমিয়ে বসেছেন? তা হলে আর দেরি কীসের? চটপট হারমোনিয়ামটা বের করে ফেলুন। বা পিয়ানোর ডালাটা খুলে দিন। গানে গানে আসর জমানোর এটাই তো সময়! তবে হ্যাঁ, একটা ফ্রেশ ড্রিঙ্কসের রাউন্ড রাখতে পারলে ভাল এই সময়টায়। ধোঁয়া ওঠা মশলা চা-ও চলতে পারে।
কিন্তু আপনি তো হস্টেস। তা নিজের সাজপোশাক নিয়ে ভেবেছেন কিছু? খুব বেশি সেজে ফেলবেন না। সেটা মাথায় রাখুন। তবে এমন পোশাকও পরবেন না যাতে মনে হয় সদ্য রান্নাঘর সামলে বেরিয়েছেন। আপনাকে তরতাজা দেখতে লাগা চাই। আপনার কর্তাটি যদি দক্ষ বারটেন্ডার হন, তা হলে দশ জন বা তারও কম অতিথির জন্য তিনিই পানীয়ের দায়িত্বটি সামলে দিতে পারেন। তবে অতিথিরা সংখ্যায় বেশি থাকলে পেশাদার কাউকে আনিয়ে নেওয়াই ভাল।
মন খুলে, মস্তিতে পার্টি করুন। এতে আপনাদের অতিথিরাও আনন্দ পাবেন। স্বতঃস্ফূর্ত থাকাটাও খুব দরকার। এমন ভাবে পার্টি করুন যাতে অতিথিরা দীর্ঘ দিন তা মনে রাখেন।
নিরামিষাশীদের
জন্য আলুর দম
পানীয়ের সঙ্গে রাখুন
পর্যাপ্ত সোডা-বরফ
বাথরুমে অতিথিদের জন্য
নতুন তোয়ালের সেট রাখুন

কী করবেন কী করবেন না
• বাড়িতে যে রান্নাটা সবচেয়ে ভাল রাঁধেন, সেটা নিশ্চিন্তে রেঁধে ফেলুন
• পার্টির দিন অতিথিদের জাস্ট চমকে দেবেন বলে নতুন আইটেম নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে যাবেন না
• অতিথিরা কী ভালবাসেন সেটা যতটা সম্ভব জেনে রাখার চেষ্টা করুন। তাঁরা ইমপ্রেসড হবেনই
• অনেক সময় অতিথিরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হন। সে ক্ষেত্রে কখনওই একটা আঞ্চলিক রান্নার মধ্যে আপনার পার্টি রেসিপি সীমাবদ্ধ রাখবেন না
• ভেজ বা নন-ভেজ, পদের সংখ্যা যেন একই রকম থাকে। যদি পাঁচটা ভেজ আইটেম রাখেন, তা হলে নন-ভেজ আইটেমও পাঁচটাই রাখুন
হাল্কা গান, গুন্ডি পান
কেতাদুরস্ত সার্ভিং অ্যারেঞ্জমেন্ট না থাকলে পার্টির মুডটাই কিন্তু মাঠে মারা যাবে। সার্ভিং ডিশ এক রকমের হওয়াই ভাল। শ্যাফিং ডিশ রাখতে পারেন। ভাল আর্টিস্টিক ডিজাইনার ক্রকারি ব্যবহার করলে একটা ক্লাসি ব্যাপার আসতে বাধ্য
• অনেক রকম ড্রিঙ্কস রাখুন। সঙ্গে মজুত থাক সোডা, বরফ, ঠান্ডা জল, ফিজি ড্রিঙ্কস, জুস
• ঘরের পরিবেশ যদি হয় সুন্দর, তা হলে পার্টির অ্যাম্বিয়েন্সটাই বদলে যাবে। ফুলদানিতে তাজা ফুল, বোল-এ করে সুগন্ধী
জুঁইয়ের মালা ঘরে রাখলে এমনিতেই একটা পার্টিমেদুর ভাব আসতে বাধ্য
• ব্যাকগ্রাউন্ডে হাল্কা গান চালিয়ে রাখুন। দেখবেন সবাই কেমন রিল্যাক্সড মোডে এসে গিয়েছে
• পার্টি কিন্তু শেষ হবে না যত ক্ষণ না গেস্টদের গুন্ডি পান খাওয়াচ্ছেন। তাই পানেই হোক মধুরেণ সমাপয়েৎ

পরের কলাম: মনসুন পার্টি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.