‘অর্থ’ টু

তখন রাত দেড়টা। শানের মিটিং শেষ হয়নি তখনও। শান কে?
না, ইনি আমাদের প্রিয় গায়ক শান নন। ইনি পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা শান শহিদ। ইতিমধ্যে ৪৫০টি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন। পরিচালনাও করেছেন বেশ কয়েকটি ফিল্ম। কয়েক বছর আগে তাঁর অভিনীত পাকিস্তানি সিনেমা ‘খুদা কে লিয়ে’ মুক্তি পেয়েছিল এখানে। তবে আপাতত মহেশ ভট্টর ‘অর্থ’য়ের উর্দুতে রিমেক করবেন শান। মিটিং সেরে তিনি কথা বললেন এই নিয়ে।

ঈদের জন্য ছবি নিয়ে কি আজকাল খুব ব্যস্ত?
হ্যাঁ, তা ঠিক। এত রাত পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করানোর জন্য আমি খুব দুঃখিত। আমার প্রোডাকশন কোম্পানি ‘ফিফথ্ এলিমেন্ট’-এর মিটিং সারতে মধ্যরাত পেরিয়ে গেল। ‘অর্থ’-এর রিমেকের জন্য কথা বলতে আপনাদের দেশের চিত্রনাট্যকার শগুফতা রফিক পাকিস্তানে আসছেন শনিবার। ছবির শ্যুটিং মূলত লাহৌর শহরেই হবে।

‘অর্থ’ রিমেক করছেন কেন?
আমি বড় হয়েছি পাকিস্তানের এক ফিল্মি পরিবারে। বাবা পরিচালক। মা অভিনেত্রী। একটা সময় ছিল যখন পাকিস্তানে অনেক ভারতীয় কনটেন্ট আসত। তখন পাকিস্তানের অনেকেরই একটা ভয় ছিল যে, ওগুলো এলে বোধহয় আমাদের নিজেদের সিনেমা ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাবে। অর্ধেক পাইরেটেড ছবি। আমাদের সরকার দেশের সংস্কৃতিকে তেমন সাপোর্ট করে না। কোনও সংস্কৃতি মন্ত্রী নেই। মধু থেকে পোলট্রি সব জিনিস নিয়ে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা চললে, সংস্ক্ৃতির বেলায় কেন ব্যাকডোর পলিসিতে কাজ হবে? ভারতের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে বুম এসেছে। এটাই তো সময়, যখন ভারত-পাকিস্তান মিলে যৌথ ভাবে কাজ করবে।

‘অর্থ’কেই কেন বেছে নিলেন?
‘অর্থ’ ছবিটা কাল্ট। কত বার দেখেছি! আর ভেবেছি মহেশ ভট্ট কী করে নিজের জীবনের কঙ্কালগুলোকে এ ভাবে দর্শকের সামনে তুলে ধরলেন? কুলভূষণ খারবান্দার চরিত্রটি আসলে ভট্ট সাব-এর নিজের জীবনী। এ রকম বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক তো আগেও সিনেমার জগতে হয়েছে। আজও হয়। আমি নিজে একটা ফিল্মি পরিবার থেকে এসেছি বলে এই ইস্যুগুলোর সঙ্গে আরও বেশি রিলেট করতে পারি। শো-বিজে এ রকমই তো হয়। কিন্তু ক’জনই বা নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এ ভাবে ছবি বানাতে পারেন? নিজের জীবন নিয়ে ছবি বানালে সবাই তো সেখানে হিরো। ছবির সংলাপগুলো অনবদ্য। মিউজিকও ঠিক সে রকমই।

‘অর্থ ২’-এ কী পাল্টাবেন?
আমি পাকিস্তানের কয়েক জন কলেজ পড়ুয়াকে ‘অর্থ’ দেখিয়েছিলাম। দু’তিনজন ছাড়া বাকি ছেলেমেয়েরা সবাই আমাকে বলেছিল কেন শাবানা আবার একটা সম্পর্কে জড়াননি। তাদের প্রশ্ন ছিল, প্রেম তো আর কোনও পাপ নয়। তা হলে কেন শাবানা ও ভাবে একটা লেডিজ হস্টেলেই জীবন কাটিয়ে দেবে বলে ঠিক করে ফেলল? আশির দশকের মহিলা আর ২০১৩-র মহিলার চিন্তাধারা কিন্তু আলাদা। প্রেম তো দেরিতেও আসতে পারে। পাকিস্তানের সমকালীন সমাজব্যবস্থার পটভূমিতে বানানো হবে ছবিটি। মানুষের একটা গতানুগতিক ধারণা রয়েছে পাকিস্তানি সোসাইটি নিয়ে। সেটা পুরোপুরি ঠিক নয়। আমাদের সমাজও বেশ কসমোপলিটান। সেটাও উঠে আসবে ছবিতে। মনে আছে গুলজার সাব-এর বানানো ‘মির্জা গালিব’ ছবিটির কথা? এমন ধাঁচে বানালেন যে, সবাই তখন গালিব পড়তে শুরু করল। ‘অর্থ ২’ দিয়েও আমি সেটাই করব। নতুন ভাবে পাকিস্তানের সমাজকে তুলে ধরব। আজ সম্পর্কও পাল্টে যাচ্ছে প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে। সেটাও দেখাব। এই যে ধরুন রাত দু’টোর পর আমি পাকিস্তান থেকে আপনাকে ফোনে সাক্ষাৎকার দিচ্ছি, এটা কি আশির দশকে ভাবা যেত? তা হলে হয়তো চিঠি লিখে পোস্ট করে পাঠাতাম।

‘অর্থ’য়ের প্রযোজক কুলদীপ পাল তো রিমেকের কথা শুনে ক্ষুব্ধ...
আমি উর্দুতে ছবিটি বানাচ্ছি। ভট্টসাব এক পয়সাও নেননি, ছবিটির রিমেক করার অনুমতি দেওয়ার সময়। আপনাদের দেশে ছবির টাইটেলের রাইট দশ বছর পর্যন্ত থাকে। আর এই ছবি ভট্ট সাব-এর জীবনী নির্ভর। সেই গল্পের অধিকার লেখকেরই।

‘অর্থ’ (১৯৮২)
কাস্ট ঠিক হয়ে গিয়েছে?
ভেবেছি স্মিতা পাতিলের চরিত্রটা করবেন হুমাইমা মালিক। উজমা হুসেন করবেন শাবানার চরিত্রটা। কুলভূষণের চরিত্রে আমি। শগুফতা এলে সব ঠিক হবে। আমি তিন-চারটে ড্রাফ্ট বানিয়েছি। ইচ্ছে আছে শঙ্কর-এহসান-লয়কে অ্যাপ্রোচ করার।

আপনি বলিউডের বহু ছবিতে অফার পেয়েও করেননি। কেন?
শুধু নিজের জন্য ছবি করে পয়সা রোজগার করাটা আমার লক্ষ্য নয়। ‘গজনি’তে আমাকে বলা হয়েছিল ভিলেনের চরিত্রটা করতে। আমির খানকে মারধোর করতে হবে ছবিতে। আমি রাজি হইনি। সেটা দেখে অনেকে ভাবত আমি বোধহয় ভারত-বিদ্বেষী। তা কিন্তু একদম নয়। আপনার নিজের বাড়ির কিছু নষ্ট হয়ে যাবে বলে যদি ভয় হয়, তখন কি আপনি তা রক্ষা করবেন না? আপনি ভারতকে ভালবাসেন। আমি আমার দেশকে। কিন্তু আমি চাই দুই দেশের মধ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক হোক। মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। অ্যাপল কোম্পানি চিনকে বেস হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাই আইফোন আজকে এত সস্তা। ভারত তো পাকিস্তানকেও একটা ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। আসলে কোলাবরেশন চাই। তা হলেই তো দু’টো ‘মুল্ক’ এগোবে।

ভারতীয় ছবি দেখেন?
‘ভাগ মিলখা ভাগ’ দেখে আমি অভিভূত। ফারহানকে আমার সেলাম। হি ইজ আ ট্রু অ্যাক্টর। রণবীর (কপূর) ভাল কাজ করছে। আমরা তো ঋষি কপূরের ছবি দেখেই বড় হয়েছি। অপর্ণা সেনের ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার’ দারুণ ভাল লেগেছিল। কিন্তু আপনাদের উচিত এমন ছবি বানানো যা দেখে ভারতের গন্ধ পাওয়া যায়। ঠিক যেমন ‘ভাগ মিলখা ভাগ’। এই নয় যে হিন্দি ছবি দেখলাম আর মিউট করে দিলে মনে হল ইংরাজি ছবি দেখছি। আর একটা কথা, জানি না কেন আপনাদের ওখানে কিছু স্টার তিন-চার মিনিট দৈর্ঘ্যের রোল করেন হলিউডের ছবিতে? কী দরকার ও ভাবে ‘মিশন ইমপসিবল’য়ে অভিনয় করার! এঁরা তো যথেষ্ট উঁচু মানের অভিনেতা। এঁদের ওই দু’সেকেন্ডের রোল করা কেন গোরাদের ছবিতে?

কোনও দিন ভারতে এসেছেন?
না, এখনও যাওয়া হয়নি। আমি নিউ ইয়র্ক আর পাকিস্তানেই মানুষ হয়েছি।

আর কোনও ইন্দো-পাক কোলাবরেটিভ কাজ করতে চান?
একটা লাভস্টোরির কথা ভেবেছি। পাকিস্তানি ছেলে। ভারতীয় মেয়ে। ছেলেটি বিবাহবিচ্ছিন্ন, মেয়েটি অবিবাহিত। থাকে লন্ডনের সাউথহল-এ। প্রেম করে। কিন্তু বিয়ে করতে গেলে তখন ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট তার মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। শগুফতা এলে এটা নিয়েও কথা বলব। আর ইচ্ছা আছে ‘মওসম’-এরও রিমেক করার। আজও রেখার ‘উমরাও জান’ দেখে অভিভূত হই। আর ‘অভিমান’য়ে সেই সুতির শাড়ি পরা জয়া ভাদুড়ি। ওই ধরনের ছবি এখনও বানানো উচিত। সেই ছবি সবার ভাল লাগবে অবশ্যই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.