ভোট-বাজির ফয়সালা বাকি, হাত পড়েনি কাঁঠাল-পাটে
গাছে কাঁঠাল, ভোটে কে জানে পাশ না ফেল!
শ্রাবণেরও হপ্তাখানেক পেরিয়ে গেল। নতিবরের বাগানের দু’টি কাঁঠাল গাছে এখনও হাত পড়ল না। জৈষ্ঠ্যের শুরুতে কাঁঠালে পাক ধরতে শুরু করে। পাকা কাঁঠালের গন্ধে তখন থেকেই পাড়া তোলপাড়। প্রতিদিনই একটা-দু’টো করে কাঁঠাল খসে পড়ে। নতিবর সেগুলি এনে ঘরে রেখে দেন। এ বারে দু’টি গাছে এখনও অন্তত পঞ্চাশটি কাঁঠাল রয়ে গিয়েছে। ভোট না থাকলে গাছ এত দিনে ফাঁকা হয়ে যেত। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতে শুধু নতিবরের গাছের কাঁঠাল গাছে নেই, নিরঞ্জনের খেতের পাটও খেতে রয়েছে। সব খেতের পাট কাটা হয়েছে। জলে পচছে। নিরঞ্জনের এক বিঘা জমির পাট কাটার কাজ আপাতত বন্ধ।
এ হচ্ছে ভোট-বাজির খেলা! ভোটে কে জিতবে, কে হারবে তাই নিয়ে বাজি ধরা দীর্ঘদিনের রেওয়াজ এই এলাকায়। এ বার নতিবর সিপিএমের হয়ে কাঁঠাল বাজি ধরেছেন। আর নিরঞ্জন তৃণমূলের হয়ে এক বিঘা জমির পাট। ২৯ জুলাই ভোটের ফল বের হওয়ার আগে পাট কাটাচ্ছেন না নিরঞ্জন। কেন? নিরঞ্জনের কথায়, “কেন আবার! যদি হেরে যাই, সব পাট তো ওই নতিবর নিয়ে যাবে। কষ্ট করে লোক লাগিয়ে পাট কাটব, আর আমার হাতে থাকবে কি লবডঙ্কা!”
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
শুধু পাহাড়পুর বা ময়নাগুড়ি নয়। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বাহাদুর, রাজগঞ্জ, বেলাকোবায় ভোট নিয়ে দেদার বাজি ধরা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কৃষিপণ্যই বাজি। তবে সে কথা সবাই জানেন, কিন্তু কথা পাঁচ কান করতে রাজি নন বেশির ভাগই। যদি প্রশাসনের ঝঞ্ঝাটে পড়তে হয়!
বেলাকোবার এক কংগ্রেস নেতা ধানী জমি পর্যন্ত বাজি ধরেছেন। তিনি বলেন, “নাম-টাম আবার লিখবেন না। তবে প্রতি ভোটেই এমন হয়।” ময়নাগুড়ি ব্লকে কেউ কেউ আবার হালের বলদও বাজি রেখেছেন বলে কানে এসেছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিকের। তাঁর কথায়, “আসলে গ্রামে এখনও টাকার মূল্য শুধু টাকায় নয়। গাছ-গাছালি, খেতের ফসল আর গরু-বলদও আছে। কাজেই গ্রামে যে ভোটে কাঁঠাল-ধান-পাট বাজি ধরা হবে, সে আর নতুন কী!” জেলা কংগ্রেস নেতা পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “পাতকাটা এলাকায় এক ব্যক্তি ২০টা হাঁস আর ৫০টি মুরগি বাজি ধরেছেন। কংগ্রেস জিতলে সেগুলি এলাকার এক তৃণমূল সমর্থকের হাতে তুলে দিতে হবে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক প্রবাল রাহা বলছিলেন, “নারকেল-সুপারি গাছের বাজিও ধরা হয়। ভোট যে গ্রামে একটা উৎসব, সেটা এ থেকেই বোঝা যায়।” নেতারা ভোটের লাগিয়া ভিখারি সাজেন!
এলাকার মানুষের বক্তব্য, বাজি ধরা নিয়ে উত্তেজনা কিছুটা থাকে। তবে আসল ব্যাপারটা মজাই। তবে সকলেই যে নতিবর বা নিরঞ্জন, তা নয়। অনেকেই কাঁঠাল বা পাট বাজি রেখে ফল বেরোনোর পরে তা বেমালুম ‘ভুলে’ যান। তখন শুরু হয় বিতণ্ডা। তবে তা-ও কখনও সীমা ছাড়ায় না বলেই গ্রামবাসীদের দাবি।
নিরঞ্জন ও নতিবরের সঙ্গে তাই সারা গ্রামই সোমবারের অপেক্ষায়। যিনিই জিতুন, অত কাঁঠাল একা খাবেন কী করে? বিলোতে হবে সারা গ্রামে। গ্রামের আতিকুর রহমান এক গাল হেসে বললেন, “ওইটুকু উপরি!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.