ভোট শেষে কোথায় চলে যান নেতারা, প্রশ্ন চা শ্রমিকদের
চা বাগান যখন প্রথম পঞ্চায়েতের আওতায় আসে, তখন আশায় বুক বেঁধেছিলেন সোমরা এক্কা, এমিলিয়া সোরেন। মন্ত্রী-বিধায়করা ব্যস্ত থাকেন দিল্লিতে, কলকাতায়। সোমরা, এমিলিয়াদের মতো চা শ্রমিকদের দিকে তাকানোর সময় কোথায়? কিন্তু পঞ্চায়েতের সদস্য? তিনি তো সব সময় থাকবেন হাতের কাছে। সরকারকে বলবেন চা বাগানের শ্রমিকদের দাবির কথা। সেই ভেবেই কংগ্রেসের শ্রমিক ইউনিয়ন ‘ইনটাক’-এর মিছিলের অনেক জোড়া পা বামেদের মিছিলে হেঁটেছিল। এখন ঘাসফুলের ভিড়ে মিশে থাকেন ওঁরা। লক্ষাধিক চা শ্রমিক পরিবার ভোট দিতে যায়। কিন্তু দশ বছর পেরিয়ে দিন বদলের আশা আর করেন না। বরং পঞ্চায়েতের অধীনে এসে চা বাগানের ভাল হল না মন্দ, তাই নিয়ে ওঁরা দোলাচলে।
কেন এই হতাশা? পঞ্চায়েতের আওতায় যাওয়ার আগে ‘টি প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট’ মেনে চা শ্রমিক পরিবারের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা মালিকপক্ষকে করতে হতো। চা বাগানের রাস্তাঘাট, ঘরদোর, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের দায়িত্ব ছিল মালিকদের। পঞ্চায়েতের আওতায় যাওয়ার পরে শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও দায়িত্ব নিতে মালিকরা আগ্রহী নন বলেই শ্রমিকরা মনে করেন। রাস্তাঘাট, বিদ্যুতের পুরনো ব্যবস্থা অকেজো হলে সারাবে কে, ঠেলাঠেলি চলে মালিকপক্ষ আর পঞ্চায়েতে। চা শ্রমিকদের সন্তান, কলেজ-পড়ুয়া পিটার টোপ্পো, সুশীল সোরেনদের ক্ষোভ, কর্মসংস্থানের জন্য কৃষিভিত্তিক শিল্প বা পর্যটন শিল্প তৈরিরও উদ্যোগ নেয়নি পঞ্চায়েত।
ফলে শ্রমিকদের ক্ষোভ বেড়ে চলেছে। বাম-ডান, দুই পক্ষই জমি খুইয়েছে। সেই সুযোগে ‘পঞ্চায়েতের নামে বঞ্চনা কেন’—প্রশ্ন তুলে মাথা তুলেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ, জন বার্লা গোষ্ঠী, ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এরা জোট বাঁধলে ভোটের ফল উল্টে যেতে পারে।
চা বলয়ের নানা এলাকায় জন বার্লা গোষ্ঠী ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার সঙ্গে জোট বেঁধেছে। কোথাও বা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে। কোনও কোনও আসনে দুই মোর্চাই হাত মিলিয়েছে জন বার্লার সঙ্গে। মেটেলি ও নাগরাকাটা ব্লকের চা বলয়ে তিনটে জেলা পরিষদ আসনে ঘাসফুল চিহ্নে ভোট দিতে আবেদন করছে জন বার্লা গোষ্ঠী ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি আসনেও তৃণমূল-মোর্চা এবং জন বার্লা গোষ্ঠী একসঙ্গে লড়ছে। জন বার্লা স্পষ্টই বলেন, “আমরা ডুয়ার্সের উন্নয়ন চাই। তাই শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছি।”
আদিবাসী বিকাশ পরিষদের তরফে হিসেবটাও কম জটিল নয়। কয়েকটি আসনে নির্দল প্রার্থীদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন করছে পরিষদ। তাদের কেউ কেউ তৃণমূল সমর্থনও পেয়েছেন। পরিষদের রাজ্য কমিটির নেতা তেজকুমার টোপ্পোর কথায়, “জেতা বা হারার জন্য লড়ছি না। রাজনৈতিক লড়াই শিখছি।”
কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মোহন বসুর অভিযোগ, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, জন বার্লা গোষ্ঠীর সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাতের অর্থ রাজ্য ভাগের দাবিদারদের প্রশ্রয় দেওয়া। তৃণমূলকে হারাতে কংগ্রেস অবশ্য সিপিএম আর আরএসপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে নানা এলাকায়। আলিপুরদুয়ারের পাতলাখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯টি আসনে আরএসপি, সিপিএম, কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়ছে। বামফ্রন্ট এ বার ডুয়ার্সের চা বলয়ে একটু ব্যাকফুটে। কিছু এলাকায় বামফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়নি। পরোরপার, কালচিনি, চুয়াপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম-আরএসপি মুখোমুখি লড়াই করছে।
জোটের এই জটিল হিসেব সোমরা-এমিলিয়ার কাছে অর্থহীন। তাঁদের সংকট অন্য। চার সন্তানের মা এমিলিয়ার স্বামী মারা গিয়েছেন। এক মেয়ে দিল্লিতে কাজে গিয়ে নিরুদ্দেশ। এমিলিয়া বললেন, “ভোটে যে নেতারা এসেছিলেন, তাঁদের একজন দিল্লিতে নিয়ে যাবেন বলেছেন। ভোট হলে দিল্লি যাব।” সোমরা কী বলছেন? বললেন, “ভোট এলে খানাপিনাটা জমে। ভোট ফুরোলে নেতারা কোথায় যান? সেটা আমার বাবাও বুঝতে পারে নাই, আমিও পারি নাই। আপনারা বোঝেন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.