এক আদিবাসী নাবালিকাকে দিনের পর দিন ধর্ষণের অভিযোগে একটি বেসরকারি হোম-এর দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করল পুলিশ। শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানার পঞ্চনই সেতু লাগোয়া অগমসিং নগর এলাকার ওই হোমটি থেকে মঙ্গলবার বিকেলে সেই নাবালিকাকে উদ্ধারও করা হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শাখা হিসেবে প্রায় ৮ বছর ধরে চলছে ওই হোমটি। ওই নাবালিকার ডাক্তারি পরীক্ষাও করা হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হোম কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত বছর জুলাইয়ে হুগলির গুড়াপে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ হোমের পাঁচিলের পাশের মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় গুড়িয়া নামে ওই হোমের আবাসিক এক মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণীর দেহ। হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। গুড়িয়াকে নিয়মিত ধর্ষণ করার পরে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। |
গুড়াপের মতো শিলিগুড়ির হোমটিতেও অভিযুক্তেরা হোমের সঙ্গে যুক্ত। দুই শিক্ষকই হোমে থাকতেন। জর্জ স্যামুয়েল ও জনসন ইডি নামে ওই দুই শিক্ষককে এই দিন শিলিগুড়ি আদালতে তোলা হলে তাঁদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকা ৮ বছর ধরে ওই হোম-এ রয়েছে। তার মা বিবাহবিচ্ছেদের পরে অন্যত্র থাকেন। বাবা নেশাসক্ত। এলাকার লোকজনই সে জন্য তাকে ওই হোমে রাখার ব্যবস্থা করেন। সম্প্রতি তার এক পিসি তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য হোমে যান।
অভিযুক্ত শিক্ষক
জনসন ইডি
|
সেই সময়ে হোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু তখনই তিনি অনুমান করেন, তাঁর ভাইঝির উপরে নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন হয়। দু’জন শিক্ষক যে এই ঘটনায় জড়িত, সে কথাও তিনি জানতে পারেন। তিনি এলাকার লোকজনকে সে কথা জানান। তারপরে শিশু কল্যাণ কমিটি-র কাছে খবর পৌঁছয়। তাঁরা জানান পুলিশকে। পুলিশ সূত্রের খবর, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে একজন আদিবাসী মহিলাকেও ওই হোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই নাবালিকা পরিষ্কার বাংলা বলতে পারে না। ওই দোভাষীর মাধ্যমে তখন সকলের সামনেই ছাত্রীটি প্রথমে একজন শিক্ষককে দেখিয়ে তিনি কী ভাবে নির্যাতন করেছেন, সে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। এর পরে ওই নাবালিকা দ্বিতীয় শিক্ষককে দেখিয়ে অভিযোগ করে,
তিনিও তার উপরে নির্যাতন করেছেন। সেই দোভাষী তখন পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেন, নাবালিকার বয়ান অনুযায়ী, তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক
জর্জ স্যামুয়েল
|
ওই হোমে মূলত দুঃস্থ ও অনাথ মেয়েদের রাখা হয়। এখন সেখানে মোট ১০ জন আবাসিক। যাদের মধ্যে ৭ জনের বয়স ৬ থেকে ৮ বছরের মধ্যে। দু’জনের বয়স ১৭। অভিযোগকারিণীর বয়স ১৬ বছর হলেও বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া। ওই হোমের কর্ণধার একজন মধ্যবয়সী মহিলা। তাঁর নাম সারা চাকো। সারার দাবি, “ধর্ষণের অভিযোগ ঠিক নয়। ওই দু’জন শিক্ষক তাকে পড়াত। এখন ওদের নামে ধর্ষণের অভিযোগ তুলল কেন, তা জানি না।”
পুলিশ জানিয়েছে, হোমটি প্রশাসনের বিনা অনুমতিতেই চলছিল। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “হোম-এ এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ জানা মাত্র একজন অফিসারকে বিশদে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি।
দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি। আমাদের তরফে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শিশু কল্যাণ সমিতির শিলিগুড়ি শাখার চেয়ারম্যান মৃণাল ঘোষ বলেন, “আমরা নাবালিকাটিকে নিয়ে এসেছি। তার কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে।”
এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের কাছ থেকে পুলিশ ওই হোমটি সম্পর্কে নানা তথ্য পেয়েছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ওই হোম-এর অন্য আবাসিকেরা কেমন রয়েছে, সে বিষয়েও তদন্ত করা হবে। |