স্কুলের খাতায় পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৪ জন। বাস্তবে স্কুলে আসে ১৫ থেকে ২০ জন। একজন পার্শ্বশিক্ষক-সহ শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২ জন। ফলে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে প্রচণ্ড ভাবে। দীর্ঘদিন ধরেই এই অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ শহরের এক নম্বর চক্রের নন্দদুলাল বিদ্যাপীঠ।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর আগে অবস্থাটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। বনগাঁর মতিগঞ্জ এলাকায় ১৯৬৬ সালে এই প্রাথমিক স্কুল তৈরি হয়। ২০০৮ সালে পড়ুয়া ছিল ১১০ জন। কিন্তু বর্তমানে প্রথম শ্রেণিতে ১০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১১ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩ জন এবং চতুর্থ শ্রেণিতে মাত্র ১০ জন পড়ুয়া। মূলত দারিদ্রসীমার নীচের পরিবারের ছেলেমেয়েরাই পড়তে আসে এখানে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমল কুমার ঘোষ বলেন, “মূলত মিড ডে-মিল খেতে এবং জামা-প্যান্ট কেনার অর্থ নিতেই এখন আসে পড়ুয়ারা। শিক্ষার প্রতি তাঁদের খুব বেশি আগ্রহ নেই।”
|
মাত্র ২ জন শিক্ষক এত জন ছাত্রকে সামলান কি করে? অমলবাবুর কথায়, “একসঙ্গে দু’টো করে ক্লাস নিয়ে কোনওরকমে চালাতে হচ্ছে।”
স্কুলে আসতে কেমন লাগে পড়ুয়াদের? চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ঝুমা দাসের বাবা-মা দুজনেই ইটভাটার শ্রমিক। ঝুমা বলে, “স্কুলে এলে রান্না করা খাবার পাওয়া যায়, তাই আসি।” এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ অনিল বৈরাগী বলেন, “ক্লাস ঠিকঠাক হলেও দিন দিন যে ভাবে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তাতে স্কুলটাই না বন্ধ হয়ে যায়।”
কিন্তু কেন স্কুলের এই করুণ অবস্থা?
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর আগে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিড ডে-মিল সহ নানা বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময়ে বহু ছাত্রছাত্রী এই স্কুল ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। ২০১১ সালে অমলবাবু স্কুলে যোগ দেওয়ার পর সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। স্কুলের বর্তমান অবস্থা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রয়োজনের কথা তিনি জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে।
জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) দ্বীপায়ন দাস বলেন, “অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে বলব স্কুলটি সম্পর্কে স্পষ্ট খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট দিতে। তারপর স্কুলে পঠনপাঠনের উন্নতির স্বার্থে যা পদক্ষেপ করা সম্ভব তা করা হবে।” |