খাবারের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে মা ও দুই সন্তানকে অজ্ঞান করে অবাধে লুঠপাট চালিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতী। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানার ছোট জিরাফপুর রাধাগোবিন্দ কলোনির দাসপাড়ায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন প্রতিবেশীরা। বুধবার ওই গ্রামে তদন্তে যান বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “অভিযুক্তের নাম-পরিচয় জানা গিয়েছে। শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করা হবে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, খাবারে বিষক্রিয়ার কারণেই ওই তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাধাগোবিন্দ কলোনির দাসপাড়ার বাসিন্দা মাখন মণ্ডল পেশায় মণিহারি জিনিসপত্রের বিক্রেতা। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মেয়ে বসিরহাট কলেজে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছেলে টাকি কলেজে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। কাজের কারণে ঘোরাঘুরি করতে গিয়েই সম্প্রতি সন্দেশখালি থানার তুষখালি গ্রামের বাসিন্দা সফিক গাজির সঙ্গে আলাপ হয় মাখনবাবুর। সেই আলাপের সূত্র ধরেই সফিক মাঝেমধ্যেই মাখনবাবুর বাড়িতে আসত। ক্রমশ মণ্ডল পরিবারের সঙ্গে সফিকের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বাড়তে থাকে আসা-যাওয়া। সফিককে কাকা বলে ডাকত মাখনবাবুর দুই ছেলেমেয়ে। |
কাজের জন্য মঙ্গলবার সকালে সফিক মাখনবাবুর সঙ্গে ধুনচেখালি যান। মাখনবাবু জানান, মাঝপথেই সফিক জানায় যে বসিরহাটে সে জরুরি কাজ ফেলে এসেছে। তাই তাকে ফিরে যেতে হবে। সেইমতো তিনি একাই ধুনচেখালি চলে যান। মাখনবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর নাগাদ সফিক তাঁদের বাড়িতে কলা, বিস্কুট, ক্যাডবেরি ইত্যাদি নিয়ে হাজির হয়। জানায়, কাজ থাকায় ধুনচেখালি যেতে পারেনি। এর পরে রাত আটটা পর্যন্ত সেখানে থেকে সে চলে যায়। ধীরাদেবী বলেন, “স্বামীর বন্ধু হওয়ায় যখন তখন আসা-যাওয়া নিয়ে কিছু বলতাম না। মঙ্গলবার সকালে একগাদা খাবার নিয়ে বাড়িতে আসে। রাত ৮টা নাগাদ ও চলে যাওয়ার পরে ছেলেমেয়েদের ওই খাবার খেতে দিই। নিজেও খাই। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই অসহ্য মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়। তারপর আর কিছুই মনে নেই।”
পুলিশ জানায়, মাখনবাবুর ছেলে শুভদীপ গৃহশিক্ষকতা করেন। বুধবার সকালে তাঁর কয়েকজন ছাত্রছাত্রী পড়তে এসে দেখে বাড়ির দরজা হাট করে খোলা। একটি ঘরের মধ্যে শুভদীপ পড়ে রয়েছে। তার মুখে রক্ত। আর একটি ঘরে শুভদীপের মা এবং দিদিও পড়ে রয়েছে। মুখে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা চিৎকার করে আশপাশের লোকজনদের ডাকে। তাঁরা এসে দেখেন ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। আলমারী খোলা। তাঁরা তিনজনকেই বসিরহাট হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। খবর দেওয়া হয় মাখনবাবুকে। খবর দেওয়া হয় থানাতেও। |
|
|
বসিরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা ও দুই ছেলেমেয়ে। |
|
এ দিন হাসপাতালে দাঁড়িয়ে মাখনবাবু বলেন, “স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ায় ফের বিয়ের জন্য সফিক বসিরহাটে মেয়ে দেখতে আসে। তখনও ওর সঙ্গে আলাপ হয়। ব্যবহার ভাল লাগায় বন্ধুত্বও গড়ে ওঠে। তবে স্বপ্নেও ভাবিনি আমার এত বড় সর্বনাশ করবে।”
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি ঘরেরই আলমারীর তালা ভাঙা। জিনিসপত্র সব ছড়িয়ে আছে। মাখনবাবুর দাবি, নগদ ৪০ হাজার টাকা ও বেশ কিছু সোনার গয়না খোয়া গিয়েছে। তিনি বলেন, “মেয়ের ডিভোর্স নিয়ে জামাইয়ের সঙ্গে মামলা চলছে। সফিকের মাধ্যমে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির কেউ এমন কাণ্ড ঘটাল কি না তা দেখার জন্য পুলিশকে বলেছি।”
তবে নিছক লুঠপাটের কারণে না কি অন্য কোনও কারণে এই ঘটনা, সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
|