ফাইবার মিশন প্রকল্প
প্রশিক্ষণের তিন মাস পরেও বিলি হয়নি তাঁত বোনার যন্ত্র
তিন মাস আগে শেষ হয়েছে প্রশিক্ষণ। এখনও মেলেনি তাঁত বোনার যন্ত্র (লুম)। ফলে। শেখা কাজ ভুলতে বসার দশা!
অথচ প্রশিক্ষণ শিবিরের পরই বিনামূল্যে ওই যন্ত্র বিলির কথা। ঠিক ছিল যন্ত্র থেকে তৈরি উন্নতমানের সামগ্রী বাজারে বিক্রি হবে। কিন্তু, কোথায় কী! মাস তিনেক আগে শিবির শেষ হয়েছে। যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশের কাছেই পৌঁছয়নি লুম। সমস্যার কথা মানছেন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক। তাঁর কথায়, “শিবিরের পর খুব বেশি দিন সব মনে রাখা সম্ভব নয়। দ্রুত হাতে-কলমে কাজ শুরু হলেই তা মনে থাকতে পারে।” তা হলে কেন তাঁত বোনার যন্ত্র বিলি করা হচ্ছে না? ওই আধিকারিকের কথায়, “আসলে ক’মাস ধরেই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ততা ছিল। এখন ভোট মিটেছে। এ বার আর সেই সমস্যা নেই।”
তবে সংশ্লিষ্ট সব মহলই মনে করছে, প্রশিক্ষণ শিবির শেষ হয়েছে তিন মাস আগে। সদিচ্ছা থাকলে তার পরপরই লুম বিলি করা যেত।
তাঁত বোনার এই যন্ত্রই প্রশিক্ষণের পর দেওয়ার কথা। আগে এমন যন্ত্র অল্প
কয়েকজন কুটিরশিল্পীকে দিয়েছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। ফাইল চিত্র
মাদুর শিল্প নিয়ে এখনও পর্যন্ত ৪১টি প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছে। প্রতিটি শিবির এক মাসের। মাদুর ছাড়াও বাঁশ ও সাবাই ঘাসের কাজ শেখাতে দু’টি করে মোট ৪টি শিবির হয়েছে। এই শিবিরগুলো হয় দাঁতন-১, বিনপুর-১ এবং বিনপুর-২ ব্লকে। প্রতিটি শিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২০ জন। সবংয়ে ২৬টি, পিংলায় ৫টি এবং নারায়ণগড়ে ১০টি শিবির হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, শিবিরে প্রশিক্ষণ নেওয়া ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনকে লুম দেওয়া হবে। বাকি ২ জনকে দেওয়া হবে টেলারিং মেশিন-সহ অন্য যন্ত্রাংশ। একটি পরিবারের একজনই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। কারা প্রশিক্ষণ নেবেন, তা ঠিক করবে ‘ব্লক প্রোজেক্ট ইমপ্লিকেশন কমিটি’ (বিপিআইসি)। জানা গিয়েছে, পিংলার শিবিরগুলোয় যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, শুধুমাত্র তাঁদেরই লুম বিলি করা হয়েছে। বাকি দু’টি ব্লকে এখনও যন্ত্র পৌঁছয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। সবংয়ের শিবিরে প্রশিক্ষণ নেওয়া এক যুবকের কথায়, “সেই কবে প্রশিক্ষণ হয়েছে। শুনছি, যন্ত্র দেওয়া হবে। কিন্তু, কবে পাব, বুঝতে পারছি না! যা শিখেছি, তার তো অনেক কিছুই আর মনে নেই!”
পশ্চিম মেদিনীপুরে ‘ন্যাচরাল ফাইবার মিশন’ প্রকল্পের অধীনেই এমন প্রশিক্ষণ শিবির হচ্ছে। ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে শুরু হওয়া এই প্রকল্প পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। সব মিলিয়ে ৪৮৫টি শিবিরে ৯৭০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশাসনের বক্তব্য, প্রকল্প রূপায়িত হলে জেলার কুটিরশিল্প প্রসারিত হবে। ক্ষুদ্র শিল্পের বাজার বাড়বে। প্রকল্পের ব্যয়ভার কেন্দ্রের। অর্থ আসবে ‘স্পেশাল ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্র্যান্ট ফান্ড’ থেকে।
জেলার প্রায় এক লক্ষ মানুষ কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত। সে ভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ ছিল না। সর্বত্র উন্নতমানের সামগ্রী তৈরি করা যেত না। ভাল বাজারও পাওয়া যেত না। তাই ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পের মান বাড়াতে উদ্যোগী হয় সরকার। ‘ন্যাচরাল ফাইবার মিশন’ প্রকল্পে ২৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হবে। ইতিমধ্যে ৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তা দিয়ে ‘কমিউনিটি প্রোডাকশন সেন্টার’, ‘কমিউনিটি ফেসিলিটি সেন্টার’ তৈরি হবে। পঞ্চায়েত স্তরেও এই কেন্দ্র হবে। সেখানে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার শেখানো হবে হস্তশিল্পীদের। জেলা স্তরে ‘কমন ন্যাচরাল ফাইবার সেন্টার’ তৈরি হবে খড়্গপুরে বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে। এ জন্য রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম ২৫ একর জায়গা দিয়েছে।
এই যন্ত্র দিয়ে মাদুর কাঠির টেবিল কভার, পর্দা, চশমা-মোবাইলের কভার ইত্যাদি নানা সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব। শিবিরে সে সবই শেখানো হয়েছে। কুটির শিল্পে বরাবরই জেলার শিল্পীদের আগ্রহ রয়েছে। তাই প্রস্তাবিত প্রকল্প রূপায়িত হলে শিল্পীরা উপকৃত হবেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “এখন অনেকেই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। জেলার অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা নেয় ক্ষুদ্র শিল্প। এর ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন হয়। তেমনি মুনাফা আসে, শিল্পদ্যোগী উপকৃত হন, কর্মসংস্থানও হয়।” উন্নতমানের সামগ্রী তৈরি হল। কিন্তু, তা বিক্রি হবে কী ভাবে? প্রশাসন সূত্রে খবর, বিপণনের জন্য ওয়েবসাইটের সাহায্য নেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। ফলে, অন্য রাজ্যেও এই সব সামগ্রী বিক্রির সুযোগ থাকবে। তবে, এ সব ছাপিয়ে সামনে আসছে প্রশিক্ষণের তিন মাস পরও তাঁত বোনার যন্ত্র বিলি না-হওয়ার ব্যাপারটি। জেলা প্রশাসনের ওই আধিকারিকের অবশ্য আশ্বাস, এ বার যন্ত্র বিলি হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.