|
|
|
|
যানজটে নিত্য জেরবার, দু’দশকেও হয়নি উড়ালপুল
অভিজিৎ চক্রবর্তী • চন্দ্রকোনা রোড |
দু’দশকের দাবিতেও মেলেনি উড়ালপুল। এর জেরে খড়্গপুর-আদ্রা শাখার চন্দ্রকোনা রোডের ওই ক্রসিংয়ে যানজটে জেরবার হন এলাকাবাসী। অভিযোগ, ওই ক্রসিং পার হতে কোনও দিন আধ ঘণ্টা, আবার কোনও দিন তারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। ফলে কমছে গতি, বাড়ছে দুর্ভোগ।
রেল সূত্রে খবর, ব্রিটিশ আমলে, ১৯০২ সালে ওই খড়্গপুর-আদ্রা লাইন চালু হয়। তারপর থেকে ক্রমশ ট্রেন-সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন এই শাখা দিয়ে মালগাড়ি, লোকাল এবং দূরপাল্লা নিয়ে মোট ৬৫টি ট্রেন যাতায়াত করে। ফলে অধিকাংশ সময়ই প্রায় আধ ঘণ্টা অন্তর পড়ে গেট। আটকে যায় বাস থেকে শুরু করে অন্য যানবাহন। তা ছাড়া পথচলতি মানুষ তো রয়েছেনই। ফলে ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোড ব্যস্ততম এই সড়কের উপর বহু বছর ধরেই উড়ালপুল তৈরির দাবিতে সরব হয়েছেন একাধিক সংগঠন থেকে এলাকার মানুষ। তবে এই উড়ালপুল এখনই তৈরি হবে কিনা তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি আদ্রা ডিভিশনের ডিআরএম অরবিন্দ মিত্তল। |
|
চন্দ্রকোনা রোড লেভেল ক্রসিংয়ের দৈনন্দিন চিত্র। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
বরং তিনি বলেন, “এখনই ওখানে উড়ালপুল তৈরির কোনও পরিকল্পনা নেই।” অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দফতরেরই অন্য এক কর্তা বলেন, “টিভিইউ (ট্রেন অ্যান্ড ভেহিক্যাল ইউনিট) রিপোর্ট এবং এই স্টেশনের ব্যস্ততাই বলে দিচ্ছে ওখানে রেলওয়ে ওভার ব্রিজ তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। দফতরে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।”
জানা গিয়েছে, রেলের কোন লাইনে কোন ক্রসিং কত ব্যস্ত তা দেখভালের জন্য দফতরে পার্মানেন্ট ওয়ে (পিডব্লিউ) শাখা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সমীক্ষা করে। চলতি বছরের গোড়াতেই সেই সমীক্ষা করেছেন বিভাগের আধিকারিকরা। সমীক্ষায় ওই ক্রসিং-এর উপর দু-চাকা বাদে বাকি সব যানবাহনের উপর সাত দিনের একটা হিসাবের ভিত্তিতে ট্রেনের সঙ্গে অন্য যানবাহনের অনুপাত পরিমাপ করা হয়। চন্দ্রকোনা রোডের স্টেশন ম্যানেজার অমিতাভ মজুমদার বলেন, “ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে চলতি বছরে সপ্তাহে ওই ক্রসিং দিয়ে ৮৭ হাজার ৮৩৮টি গাড়ি (দু’চাকা বাদে) চলাচল করেছে।” কিন্তু এত গাড়ি যেখানে চলে সেখানে ওভারব্রিজ তৈরি করতে রেল দেরি করছে কেন? ওভারব্রিজের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করলেও অমিতাভবাবু উড়ালপুল প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোড সড়কের উপর খড়্গপুর-আদ্রা লাইনে রয়েছে ওই লেভেল ক্রসিং। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতি আধ ঘণ্টা ছাড়া গেট পড়ে যাওয়ায় নানাবিধ সমস্যায় পড়েন তাঁরা। এর প্রভাব পড়ে ক্রসিং সংলগ্ন রানিগঞ্জ-মেদিনীপুর সড়কেও। কেননা, চন্দ্রকোনা রোডের উপর দিয়েই ওই জাতীয় সড়কটি গিয়েছে। সমস্যা প্রবল হয় অফিস এবং স্কুলের সময়। এ ছাড়াও ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোড সড়ক দিয়ে লোকাল এবং দূরপাল্লার বাস মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক বাস চলাচল করে। তা ছাড়া এলাকাটি আলু ও সব্জি প্রধান এলাকা বলে পরিচিত হওয়ায় চলাচল করে সব্জি বোঝাই ছোট ছোট একাধিক গাড়ি। পাশাপাশি রয়েছ দশ-পনেরোটি হিমঘরও। তাতে আলুর মরসুমে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়।
ফলে প্রায় দু’দশকের বেশি সময় ধরে শুরু হয়েছে উড়ালপুলের জন্য আন্দোলন। এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে শুরু করে সরব হয়েছে খড়্গপুর-আদ্রা রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন (কার্ফা)। তা ছাড়া যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে যান চলাচল। ফলে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বহুবার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে একাধিক মন্ত্রী ও আধিকারিকদের। সংগঠনের সভাপতি অরবিন্দ সাঁই বলেন, “প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ লালুপ্রসাদ যাদব থেকে দফতরের ডিআরএম থেকে সব স্তরের অফিসারদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।” তাঁদের হুঁশিয়ারি সমস্যার সমাধান না হলে এ বার তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামবেন। |
|
|
|
|
|