পানশালায় চেয়ারে বসা নিয়ে বচসার জেরে এক যুবককে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠল অন্য এক যুবকের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার রাতে হুগলির শ্রীরামপুরের বিবির বেড় এলাকার ঘটনা। নিহতের নাম সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (৩৮)। শ্রীরামপুরের নেতাজি সুভাষ অ্যাভেনিউতে ভাড়া থাকতেন। তাঁকে খুনের অভিযোগে সুব্রত দেব ওরফে বাবু নামে মাহেশের শশীভূষণ ঘোষ লেনের এক যুবককে পুলিশ খুঁজছে। পানশালার সিসিটিভি দেখে বিষয়টি জানতে পারে তারা। এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় জানান, অভিযুক্ত যুবকের দুই সঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে প্রতারণার একাধিক অভিযোগ ছিল পুলিশের খাতায়। একাধিক বার তিনি গ্রেফতারও হন। তবে, এই ঘটনার আগে অভিযুক্ত সুব্রতর বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় কোনও অভিযোগ ছিল না। যে এলাকায় সে ভাড়া থাকে, সেখানকারই এক প্রোমোটারের গাড়ি চালাত। সম্প্রতি ওই প্রোমোটার তাঁকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দীপ মঙ্গলবার রাতে সহদেব রাম এবং রাজকুমার চৌধুরী নামে দুই যুবকের সঙ্গে শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুরে দিল্লি রোড লাগোয়া একটি পানশালায় যান। সহদেব শহরের তৃণমূল পরিচালিত একটি ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক। সেখানে তাঁরা মদ্যপান করেন। সেই সময় সুব্রতও দুই সঙ্গীকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিল। চেয়ারে বসা নিয়ে দু’পক্ষের কথা-কাটাকাটি হয়। তখনকার মতো বিষয়টি মিটেও যায়। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ সন্দীপরা একটি বাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ, বিবির বেড়ে সুব্রত এবং তাঁর এক বন্ধু পিছন থেকে বাইকে চেপে এসে তাঁদের পথ আগলে দাঁড়ায়। পাইপগান থেকে সন্দীপকে গুলি করা হয়। রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন ওই যুবক।
সঙ্গীর ওই অবস্থা দেখে তাঁকে ফেলে রেখেই সহদেব এবং রাজকুমার পালান। পুলিশ জানিয়েছে, রাজকুমার এবং সহদেব কোনও ভাবে চোট পান। চিকিৎসার জন্য তাঁরা শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে যান। ঘটনার কথা অবশ্য বেমালুম চেপে যান। তবে অত রাতে রক্তাক্ত ওই যুবকদের দেখে হাসপাতাল থেকে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে শ্রীরামপুর থানার আইসি তথাগত পাণ্ডে হাসপাতালে গিয়ে দু’জনকে জেরা করলে সন্দীপ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে তাঁরা জানান। তবে সঠিক জায়গা বলতে পারেনি। কখনও জানান পানশালায় ঘটনা ঘটেছে, কখনও বলেন রাস্তায়। পুলিশ প্রথমে পিয়ারাপুরের দু’টি পানশালায় যায়। সেখানে কিছু না পেয়ে শেষে অনেক খোঁজাখুজির পরে বিবির বেরে রাস্তার ধার থেকে সন্দীপের দেহ উদ্ধার হয়। দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দেহ উদ্ধারের পরে রাতেই এসডিপিও এবং আইসি বাহিনী নিয়ে ওই পানশালায় যান। সেখানকার সিসিটিভি-র ছবি খুঁটিয়ে দেখেন তাঁরা। তখনই তদন্তকারীদের কাছে বিষয়টি অনেকটা পরিস্কার হয়ে যায়। তদন্তকারীদের দাবি, সিসিটিভিতে দেখা যায় সুব্রতর সঙ্গে সন্দীপদের বচসা হচ্ছে। ওই ছবি দেখে সুব্রতকে চিহ্নিত করে নিহতের সঙ্গীরা। পরে সুব্রতর দুই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। তাঁদের এক জন কনস্টেবল বলে জানিয়েছে পুলিশ। |