তুমুল রাজনৈতিক অশান্তির পর ভোট এসে দাঁড়িয়েছে কোচবিহারের দোরগোড়ায়।
ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্ত ঘাঁটি কোচবিহারে অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত বাম দখলে। পঞ্চায়েত সমিতিরও ১২টির মধ্যে ১০টি বামেদের। গত বিধানসভা নির্বাচনে পাল্লা ছিল প্রায় সমান-সমান, তৃণমূল-৫, ফরওয়ার্ড ব্লক-৪। বিনাযুদ্ধে কেউ জমি ছাড়বে না। তাই পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে সংঘর্ষ তীব্র হয়েছে।
এ বারই কোচবিহার দেখেছে অভূতপূর্ব দৃশ্য। মনোনয়ন দাখিল করার পর সিপিএম এবং কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা অফিস প্রায় ত্রাণশিবিরের চেহারা নিয়েছিল। দলীয় প্রার্থীরা অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূলের সন্ত্রাসে তাঁরা ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দু’সপ্তাহের আগে ঘরে ফিরতে পারেননি কেউ। তিনশোরও বেশি সংঘর্ষে আহত হাজারেরও বেশি দলীয় কর্মী। প্রার্থীদের বাড়িতে হামলা, হুমকি, বুথ অফিস ভাঙচুর, আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে অজস্র। প্রাণ গিয়েছে চার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের। জেল থেকেই নির্বাচন লড়ছেন জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি মণীন্দ্র বর্মন। তাঁকে নিয়ে ২৩ জন বাম নেতা-কর্মী সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হয়ে জেলে। সিতাইয়ে এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ নৃপেন রায়-সহ ৬৪ জন বাম নেতা-কর্মীর নামে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক এবং দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহর নামে তৃণমূল কর্মী খুনের মামলা রয়েছে।
অন্য দিকে, নানা ঘটনায় তৃণমূলের ১৬ জন গ্রেফতার হলেও তারা সকলেই এখন জামিনে মুক্ত। ফলে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। বিশেষত পুলিশ সুপার অনুপ জয়সোয়ালকে নিয়ে তাঁদের অনেক অভিযোগ। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, অনুপবাবুকে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। তবে কোচবিহার জেলা তৃণমূল পুলিশ সুপারের ভূমিকা ‘সন্তোষজনক’ বলে বারেবারেই ঘোষণা করছে।
সংঘর্ষের জন্য বিরোধীদেরই দায়ী করছেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “পায়ের তলায় মাটি নেই বাম-কংগ্রেস-বিজেপির। সে জন্য রক্ত ঝরাচ্ছে।” তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনারও উল্লেখ করেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনিই এখন কোচবিহারের অবিসম্বাদিত তৃণমূল নেতা। দলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা সরে গিয়েছেন। মিহির গোস্বামী আলিপুরদুয়ারে, জয়গাঁ ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান। অর্ঘ্য রায়প্রধানও জেলা নেতৃত্বের কেন্দ্র থেকে সরে গিয়েছেন। ভোটের লড়াই তাই তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বনাম ফরওয়ার্ড ব্লকের উদয়ন গুহ, এই দ্বৈরথের চেহারা নিয়েছে।
জেলার বাসিন্দাদের ভরসা, ভোটের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। তাতে গোলমাল কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা নিয়েই এখন জল্পনা চলছে কোচবিহারে। |