|
|
|
|
তৈরি হয়নি জেলা পরিকল্পনা কমিটি |
অনুন্নত এলাকার উন্নয়নে টাকা পাওয়া নিয়ে সংশয়
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
জেলা পরিকল্পনা কমিটি তৈরি না হওয়ায় চলতি আর্থিক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘বিআরজিএফ’ (ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন গ্রান্ট ফান্ড)-এর অর্থ পাওয়া নিয়ে প্রবল সংশয় তৈরি হয়েছে।
জানা গিয়েছে, এর একমাত্র কারণ জেলা পরিকল্পনা কমিটি তৈরি না হওয়া। পিছিয়ে পড়া জেলা হওয়ায় কেন্দ্রীয় প্রকল্প বিআরজিএফ থেকে বরাদ্দ পায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। ঠিক মতো খরচ করতে পারলে বছরে ৩০-৩৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ মেলে। কিন্তু সেই অর্থ পাওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আবার তা মিললেও, সেটা কী আদৌ খরচ করা যাবে? থাকছে সেই সংশয়ও। কারণ, জেলা পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশ ছাড়া এই প্রকল্পে বরাদ্দ মেলে না, টাকা খরচও করা যায় না।
তা হলে কেন ওই গুরুত্বপূর্ণ কমিটি তৈরি করা গেল না?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কমিটির চেয়ারপার্সন হন জেলা পরিষদের সভাধিপতি। সদস্য সচিব থাকেন জেলাশাসক। পঞ্চায়েতের দু’টি স্তরের (পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ) একাধিক সদস্যও থাকেন ওই কমিটিতে। এ ছাড়াও মনোনীত সদস্যরা থাকেন। এত দিন ওই কমিটিতে তাই তৎকালীন শাসকদল সিপিএমেরই আধিক্য ছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ওই কমিটিতে ৬০ জন্য সদস্য ছিলেন। অধিকাংশই ছিলেন সিপিএমের। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কারণেই বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরেই জেলা পরিকল্পনা কমিটি তৈরি করা হবে। যাতে বর্তমান শাসকদলের সদস্যরাই এই কমিটিতে থাকতে পারেন। তারপরই বিআরজিএফের পরিকল্পনা সেই কমিটিতে পাশ করানো হবে। এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ায় সেই প্রকল্পে বরাদ্দ মিলবে কিনা সংশয় দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতে হতেই জুলাই মাস শেষ হয়ে যাবে। তারপর গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ গঠন। প্রথমে প্রধান, উপপ্রধান, সভাপতি, সহ-সভাপতি, সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতি নির্বাচন। তারপর রয়েছে কর্মাধ্যক্ষ। এ ছাড়াও রয়েছে স্থায়ী কমিটি। প্রশাসনিক কর্তাদের আশঙ্কা, প্রতিটি স্তরেই ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে সমস্যা হবে না এটা ঠিক। হয়তো প্রধান, সভাপতি, সভাধিপতির মতো পদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দ্রুত সমস্যা মিটতে পারে। কিন্তু তারপর? কর্মাধ্যক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটি? এগুলি না হলে জেলা পরিকল্পনা কমিটি তৈরি করা যাবে না। কারণ, এই কমিটিতে বিভিন্ন কর্মাধ্যক্ষ ও স্থায়ী কমিটির পদাধিকারীদেরও রাখতে হয়। তারপর মনোনীত সদস্যদের রাখার কথা।
শুধু তাই নয়, বিআরজিএফ তহবিল থেকে কোন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ কী কাজ করতে চায় তার পরিকল্পনা পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিকেই। জেলা পরিকল্পনা কমিটি কেবল তার অনুমোদন দেবে। এখন সবে নির্বাচন পর্ব চলছে। এরপর পঞ্চায়েত গঠন, তারপর পরিকল্পনা করে পাঠানো, তারপর অনুমোদন! এত কিছু করতে যদি সামান্য দেরি হয় তা হলেই বিপাকে পড়তে হবে। প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, যদি তড়িঘড়িও সব কিছু হয়ে যায় তাহলেও সেপ্টেম্বর মাসের আগে কিছুই হবে না। সেক্ষেত্রে চলতি আর্থিক বছরে হাতে সময় থাকবে ৬ মাসেরও কম! পরিকল্পনা অনুমোদন করিয়ে পাঠানোর পর বরাদ্দ মিলতেও কিছুটা সময় লাগবে। সেখানে যদি ২ মাস ধরা যায়, তা হলে হাতে থাকবে বড় জোর তিন মাস। তারপর বরাদ্দ সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে পাঠানো, কাজের জন্য টেন্ডার করা, ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া, কাজ শুরু করা, তা কী চলতি আর্থিক বছরে আদৌ সম্ভব হবে? নাকি পড়ে থেকে যাবে টাকা। যদি টাকা পড়ে থেকে যায় তা হলে পরের আর্থিক বছরে টাকা পেতেও অসুবিধে হবে। এই কারণেই বিআরজিএফের বরাদ্দ নিয়ে প্রবল সংশয়ে রয়েছে প্রশাসন।
অবশ্য এ সবের বাইরেও জেলা পরিকল্পনা কমিটির গুরুত্ব রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার সমস্ত দফতর যা-ই পরিকল্পনা করুক না কেন তা জেলা পরিকল্পনা কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। চলতি আর্থিক বছরে কমিটি না থাকায় তাও করা গেল না। জেলার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “অন্য ক্ষেত্রগুলিতে অবশ্য তেমন সমস্যা হবে না। কারণ, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী টাকা পেয়ে যাবে। ফলে ওই সব বিভাগের কাজের ক্ষতি হবে না। কিন্তু বিআরজিএফের ক্ষেত্রে টাকাই মিলবে না। তাই আমরা চেষ্টা করব, জেলা পরিষদ গঠনের পরেই যাতে দ্রুত জেলা পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা যায়। নতুবা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অনেক টাকাই পাওয়া যাবে না।” |
|
|
|
|
|