সিতাইয়ে তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় কোচবিহারের ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ নৃপেন রায়-সহ ৬৪ বাম নেতাকর্মীর নামে খুনের মামলা রুজু করল পুলিশ। রবিবার রাতে সিতাইয়ের কোনাচামটা এলাকায় দুষ্কৃতীদের হামলায় শামসুল হক (৪৫) নামে তৃণমূল কর্মী খুন হন। পুলিশ জানায়, কুড়ুল দিয়ে তাঁর মাথায় মারা হলে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান। তাঁর সঙ্গীকেও মারধর করা হয়েছে। ওই ঘটনায় কোচবিহারের ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ নৃপেনবাবু, ফরওয়ার্ড ব্লক সিতাই লোকাল সম্পাদক আবদুল্লা প্রামাণিক, স্থানীয় সিপিএম নেতা কানু পাটোয়ারি-সহ ৬৪ জনের নামে খুনের অভিযোগ করা হয়। অভিযুক্তদের নামে খুন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সিতাই পঞ্চায়েত সমিতির ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নুরুল হক-সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “সাংসদ-সহ ৬৪ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। ১১ জনকে ধরা হয়েছে।”
রবিবার রাতে দিনহাটা মহকুমার সিতাইয়ে তৃণমূল নেতা তথা সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় দুটি সভা করেন। বামেদের তরফেও সিতাইয়ে সভা করেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। রাতে সেচমন্ত্রীর সভা শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন একদল তৃণমূল কর্মী সমর্থক। রাস্তায় বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিমান বসুর উস্কানিতে সাংসদ নৃপেন রায় ওই খুনের ছক কষেন। সভার পর বাড়ি ফেরার পথে পরিকল্পিত ভাবে আমাদের কর্মীকে খুন করা হয়।”
বামেরা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বামেদের দাবি, ওই এলাকায় তৃণমূলের বাইক বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে হুমকি দিচ্ছিলেন। তার জেরে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কোচবিহারের ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ নৃপেন রায় বলেন, “১০টা বাইক নিয়ে তৃণমূলের সমর্থকরা রাতে ওই এলাকায় গিয়ে দাদাগিরি করছিলেন। তার জেরেই দলমত নির্বিশেষে বাসিন্দারা একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ান। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এক জন মারা যান।”
নৃপেনবাবু জানান, আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ হল তা নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। বামেদের কেউ ঘটনায় জড়িত নয়। বিমানবাবু জাতীয় স্তরের নেতা। রবিবাবুদের মত স্থানীয় নেতা নন। তাই ভিত্তিহীন মন্তব্যের মানে হয় না। সিপিএম জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। কোথাও খুন হলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা উচিত। শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাম নেতাদের নামে উস্কানির অভিযোগ তোলা হাস্যকর।”
সোমবার রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং বনমন্ত্রী হীতেন বর্মন সিতাই যান। সেখানে সিতাই বাজারে তৃণমূল পার্টি অফিসে শামসুল হকের দেহটি আনা হয়। মন্ত্রীরা ফুল দিয়ে মরদেহে শ্রদ্ধা জানান। তার পরে দেহটি নিহতের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন মন্ত্রী সেখানে গিয়ে নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানান। সেখানে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রতবাবু এই দিন বলেছেন, ‘‘পুরোটাই পরিকল্পিত খুন। নিহতের নেতৃত্বে এলাকায় তৃণমূল শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। তা ছাড়া বিমান বসুর সভায় গত রবিবার লোক হয়নি। সেখান থেকে প্ররোচণামূলক বক্তব্য রাখা হয়। তার পরেই খুন।” |