জওয়ানের গুলি, হত কংগ্রেসকর্মী
ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে প্রচারের অভিযোগে এক কংগ্রেস প্রার্থীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া নিয়ে ক্ষিপ্ত জনতা ও সিআরপি-র জওয়ানদের মধ্যে সংঘর্ষের সময়ে গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সোমবার সকাল ১০ টা নাগাদ সম্বলপুর অঞ্চল হাইস্কুলে ভোটগ্রহণ চলাকালীন ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম আবদুল মান্নান (৫০)। আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানের ছোড়া গুলিতে কংগ্রেস সমর্থকের মৃত্যুতে সম্বলপুর অঞ্চল হাই স্কুল চত্বরের চারটি বুথে প্রায় ঘন্টা খানেক ভোট বন্ধ ছিল। পরে মালদহ শহর থেকে অতিরিক্ত আধা সামরিক বাহিনী সম্বলপুরে পাঠিয়ে বেলা ১১টা নাগাদ ফের ভোটগ্রহণ শুরু করা হয়। সরকারি নিয়ম মেনে গুলি চালানোর ঘটনার প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হয়েছে। মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “আধা সামরিক বাহিনী ৬ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। গুলি চালানোর প্রয়োজন ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
গুলি চলার পরে স্কুলে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর টহল।
সিআরপি-র দাবি, ওই এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী মোজাহার আলি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে প্রচার করছিলেন। সেই সময়ে তাঁকে নিরস্ত করতে গেলে তিনি গোলমালের সূত্রপাত। অভিযোগ, সিআরপি-র এক জওয়ান লাঠি দিয়ে আঘাত করলে মোজাহার আলির মাথা ফাটে। এর পরেই শুরু হয় হট্টগোল। ইঁট-পাটকেল বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে আধা সামরিক বাহিনীর উপরে। লাইনে দাঁড়ানো পুরুষ ও মহিলা ভোটাদের একাংশে হুড়মুড় করে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। তখনই সিআরপি-র তরফে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁনা হয় বলে অভিযোগ। সেই সময়ে আবদুল মান্নানের পিঠে গুলি লাগে। গুলি তাঁর পিঠে লেগে বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছুটে আবদুল মান্নান ভাই আবদুস সাত্তারের দোকানের সামনে মুখ থুবড়ে পড়েন। তাঁকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
স্কুল চত্বরে জমাট বাঁধা রক্ত।
যাঁকে ঘিরে গোলমালের শুরু, সেই কংগ্রেস প্রার্থী মোজাহার আলির দাবি, “বুথের ভিতরে গিয়ে কেন প্রচার করব? আধা সামরিক বাহিনী বিনা অপরাধে আমার মাথা মেরে ফাটিয়ে দিয়েছে।” তবে সিআরপি-র ৬৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের অ্যাসিট্যান্ট কমান্ডান্ট বিনোদ কুমার কিন্তু অন্য দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, “এক জন প্রার্থী বুথের ভিতরে ঢুকে প্রচার করায় জওয়ানেরা বাধা দিয়েছিলেন। প্রচারে বাধা পেয়ে ওই প্রার্থী জওয়ানদের উপর চড়াও হয়ে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকেন। সে সময়ে তাঁর মাথা ফাটে। তখন আত্মরক্ষার্থে জওয়ানেরা গুলি চালান।” পর পর গুলির শব্দ শুনে ভোট দিতে যাওয়া সেলিনা বিবি, মর্জিনা বিবিরা আতঙ্কে কান্নাকাটি জুড়ে দেন। তাঁদের কথায়, “যে ভাবে গ্রামের লোকেরা ইট ছুঁড়ছিল ও জওয়ানরা গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছিল তা দেখে প্রাণ বাঁচাতে বুথের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলাম। তবুও কাঁপছিলাম অনেকেই।” ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার জগবন্ধু সর্দার বলেন, “ইট বৃষ্টি ও গুলির শব্দে ভোটাররা বুথের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন। দরজা বন্ধ করে ভোট বন্ধ করে দিয়েছিলাম। গোলমাল মিটে যাওয়ার পরে ঘর খুলেছি।”
এই ঘটনার পরে জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী অবশ্য সিআরপি-কে দূষেছেন। তাঁর কথায়, “সকাল থেকেই আধা সামরিক বাহিনী গ্রামবাসীদের মারধর করছিল। বিনা অপরাধে আমাদের এক পঞ্চায়েতের প্রার্থীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদ করলে আধা সামরিক বাহিনী গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। এতে আমাদের এক সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে।”
এই ঘটনার জন্য কংগ্রেসকেই দায়ী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “কংগ্রেস প্রাথী ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে প্রচার করছিলেন। আধা সামরিক বাহিনী বাধা দিলে ওই কংগ্রেস প্রার্থী ও কংগ্রেস সমর্থকরা তাদের উপর চড়াও হয়ে এলোপাথাড়ি ইট পাটকেল ছোঁড়ে। আধা সামরিক বাহিনী আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালিয়েছে। পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেসই দায়ী।” জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গ্রামবাসীরা আধা সামরিক বাহিনীকে লক্ষ করে ইট পাটকেল ছুড়লে পাল্টা আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা গুলি চালিয়েছে।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় মৃত কংগ্রেস সমর্থকের চাপ চাপ রক্ত স্কুলে পাশে বাজারে পড়ে রয়েছে। স্কুল থেকে প্রায় ১৫০ মিটার দূরে বাজারের দেওয়ালে রয়েছে গুলির চিহ্ন।

ছবি তুলেছেন বিশ্বনাথ বণিক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.