পানিশালাতেই পঞ্চায়েতে নিশ্চিন্ত নয় কংগ্রেস
ইমসের জন্য কংগ্রেসের হাত ধরে রেখেছে পানিশালা। কিন্তু রাস্তাঘাট সারানোর মতো কাজের জন্য অন্য পথও খোলা রাখতে চান এই গ্রামের মানুষ। উত্তর দিনাজপুরের শীতগ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষের স্বপ্ন এইমস। গ্রামের সোলেমান আলির বক্তব্য, “কংগ্রেসই ওই হাসপাতালের স্বপ্ন দেখিয়েছে আমাদের। তাই লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতা নিয়ে এলে সেই স্বপ্ন সফল হতে পারে।” কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে কাকে সমর্থন করছেন? সোলেমান বিরক্ত হয়ে বলেন, “রাস্তা হয়নি। জলসেচের ব্যবস্থা ভাল নয়। স্থানীয় স্তরে উন্নয়ন তেমন হয়নি।” সোলেমান সোজাসুজি কিছু ভাঙলেন না। কিন্তু ইঙ্গিত মিলল, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বঞ্চিত হতে পারে কংগ্রেস।
তিন দশক ধরে উত্তর দিনাজপুরের শীতগ্রাম কংগ্রেসের দখলে। এই এলাকা কংগ্রেসের ‘দুর্গ’ বলেই পরিচিত। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এখানেই পানিশালায় ওই হাসপাতালের কথা ঘোষণা করা হয়। এলাকায় তাতে সাড়া পড়ে যায়। বিশাল ওই হাসপাতাল হলে তার অনুসারী শিল্প তৈরি হবে বলে বুঝতে পারেন এলাকার মানুষ। রায়গঞ্জ চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত সোম বলেন, “এইমস হলে গোটা এলাকার চেহারাই বদলে যাবে। শুধু তো চিকিৎসা পরিষেবা নয়, সেই সঙ্গে এই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নও হু হু করে হবে। বহু মানুষ আসবেন, থাকবেন। তাঁদের জন্য একটি উপনগরীই গড়ে উঠতে পারে। সেই স্বপ্ন মানুষকে বুঁদ করে রেখেছে।”
কিন্তু তার পরে অনেক দিন কেটে গিয়েছে। যে মানুষটার হাত ধরে ওই স্বপ্নের সূচনা হয়, সেই প্রাক্তন মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এখনও নয়াদিল্লির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার পরেও কাজটা ‘হচ্ছে-হবে’ করে এগোচ্ছে না।
হাসপাতালের জন্য একশো দশ একর জমি ঠিক হয়েছে। সেই জমির মালিক ৮৪ জনই জমি দিতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছেন। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ হয়নি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে জানায়, কৃষিজমি নিয়ে হাসপাতাল হবে না। পানিশালাতেই হাসপাতালের দাবিতে কংগ্রেস আন্দোলনে নামে। জমি দিতে ইচ্ছুক চাষিদের নিয়ে কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি মহাকরণ অভিযানও করেন। সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক টাকা দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করবে, সে কথাও ওঠে।
মহাকরণে দীপার সঙ্গে অভিযানে ছিলেন জমি দিতে ইচ্ছুক পানিশালার কৃষিজীবী রফিক আযম। তিনিও সোলেমান আলির সুরেই বলছেন, “পঞ্চায়েত ভোটে অগ্রাধিকার এলাকার উন্নয়ন।” তৈমুর আলি, আতাউর রহমানের মতো জমি দিতে ইচ্ছুক চাষিরাও জানাচ্ছেন, এলাকায় কংগ্রেস পঞ্চায়েত তেমন উন্নয়ন করতে পারেনি। তাঁরা জানাচ্ছেন, জাতীয় সড়ক থেকে নেমে গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তাটাই পানিশালার মেরুদণ্ড। কিন্তু সামান্য বৃষ্টিতেই সেখানে হাঁটাচলা করা শক্ত। বর্ষাকালে হাঁটু পর্যন্ত কাদা হয়ে যায়।
বিদায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের নবকান্ত বর্মনের কথায়, “সবটাই অপপ্রচার। অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বাকি উন্নয়ন আমরা পঞ্চায়েতে ফিরে এসে করব।” কিন্তু সিপিএমের রায়গঞ্জ জোনাল কমিটির সম্পাদক বাপি ভৌমিকের বক্তব্য, “এইমস নিয়ে কংগ্রেস রাজনীতি করছে। তেমনই তৃণমূলও রাজনীতি করছে। সেটা এলাকার মানুষ বুঝতে পারছেন। তাই তাঁরা এ বার আমাদেরই সমর্থন করবেন।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্যের অবশ্য বক্তব্য, “কংগ্রেস আসলে একটা স্বপ্ন দেখিয়ে ওই এলাকার মানুষকে ব্যবহার করছে। একের পর এক নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে। কিন্তু ওই এলাকার মানুষ এ বার সত্যিটা বুঝেছেন। তাঁরা জানেন, শুধু স্বপ্ন দেখলেই হয় না, স্থানীয় স্তরে উন্নয়ন জরুরি। তাই শীতগ্রাম এ বার আমরা দখল করতে পারি।”
কংগ্রেস সাংসদ দীপা অবশ্য এই সব কথায় কোনও গুরুত্বই দিতে চান না। তাঁর সোজা কথা, “স্বপ্ন যে সত্যি হবে, সে কথা পানিশালা জানে। শুধু ওই গ্রাম পঞ্চায়েত নয়, কংগ্রেস উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদ দখল করতে পারলে, ওই হাসপাতালের জন্য লোকসভা ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। সে কথাও ওই এলাকার মানুষ জানেন। তাই কংগ্রেসের এই দুর্গ কংগ্রেসেরই থাকবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.