জেল থেকে এক প্রার্থী কর্মীদের বলছেন, “জেলে রয়েছি তো কী হয়েছে? সকলেই তো চেনে আমাকে। জানে আমি সাদাসিধে মানুষ। আমাকে খুনের অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। তোরা শুধু মানুষের বাড়ি বাড়ি যা। জয় নিশ্চিত।” এমনই আত্মবিশ্বাসী বাম প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের মণীন্দ্র অধিকারী।
শুনে মুচকি হাসেন তৃণমূল প্রার্থী মকবুল হোসেন সরকার। বলেন, “আক্ষরিক অর্থেই মানুষ ওঁকে চেনেন। ওঁকে বললে ভুল হবে, চেনেন ৩৪ বছরের বাম শাসনকেই।” কোচবিহার জেলা পরিষদের ২৬ নম্বর আসনের এই লড়াইয়ে প্রার্থী মণীন্দ্রবাবুর মতো অবশ্য নিশ্চিত
নন বাম নেতা কর্মীরা। স্বাভাবিক। ময়দান বলছে অন্য কথা। দু’বছরে জেলা পরিষদের এলাকা দিনহাটা ২ ব্লকের বড়শাকদল, কালমাটি, বামনহাটে তৃণমূলের শক্তি যতটা বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে ততটাই কমেছে বাম তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্তি। তৃণমূল প্রার্থীও আগে ফরওয়ার্ড ব্লকেরই সদস্য ছিলেন। বামনহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও ছিলেন দু’দশক। দল বদলে জনবাদী হয়েছিলেন। এ বার তৃণমূলে।
তাই ময়দানটা চেনেনও ভালমতোই। তার উপর, মণীন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে খট্টিমারির তৃণমূল কর্মী রতন বর্মনকে খুনের অভিযোগ। |
মণীন্দ্রবাবু কোচবিহার জেলা পরিষদের বিদায়ী সহকারী সভাধিপতি। আগে পর পর দু’বার পঞ্চায়েত সদস্য হন। এক বার প্রধানের দায়িত্বেও ছিলেন। এলাকায় তাঁর দাপট অক্ষুণ্ণ ছিল বছর খানেক আগে পর্যন্তও। তার পরে যেন একটু ঢিলে পড়ে গিয়েছে। ভোট আসতেই একটু সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। চেষ্টা করছিলেন ‘দাপট’ ফিরে পেতে। কিন্তু তৃণমূলও ওই এলাকায় প্রচারে ঝড় তোলে। তাদের পক্ষে ছিল বামেদের শরিকি দ্বন্দ্বও। এর মধ্যেই খুন হন তৃণমূলকর্মী রতনবাবু। তৃণমূলের প্রচারে ‘সন্ত্রাসের নায়ক’ হন মণীন্দ্রবাবু। দলের প্রচারে অবশ্য তিনি ‘চক্রান্তের শিকার’। তাই বাম শিবিরের আশা, ভোট আসবে সেই সহানুভূতিতেই।
বামনহাটের এক বাসিন্দা পিন্টু গোস্বামী বললেন, “তৃণমূল প্রার্থী এলাকায় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। সকলেই তাঁকে চেনে। আবার বাম প্রার্থীও এলাকায় জনপ্রিয়। দু’পক্ষই নিজেদের কথা বলছে। শেষ সিদ্ধান্তটা ভোটের দিনই নেব।” দু’পক্ষের প্রচারের ভরকেন্দ্র এক। মানুষের রায় কোন পক্ষে যায়, জানাবে সময়। |