রাস্তা আটকানো হল ডালুর, কৃষ্ণেন্দু অফিসেই
রপর ফোন আসছিল নানা প্রান্ত থেকে। ‘কংগ্রেস বুথ জ্যাম করছে দাদা, আমাদের ঢুকতে দিচ্ছে না।’ ‘মারধর করছে আমাদের, আপনি একটু দেখুন।’ তাঁর সঙ্গী এক তরুণ ফোনগুলো ধরছেন। আর এক তরুণ চটপট সেই সব অভিযোগ লিখে নিচ্ছেন খাতায়। আর যাঁর কাছে এত উত্তেজিত আবেদন-নিবেদন, সেই কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী কী করলেন?
একটুও উষ্মা প্রকাশ করলেন না। গলা চড়ল না একবারও, ছুটোছুটি করতেও দেখা গেল। এক এক বার ফোন করে পুলিশকে মৃদু অনুরোধ করলেন, ‘একটু দেখুন।’ কখনও বা দলের লোকেদের বললেন, ‘তোরা একবার দ্যাখ।’ সকাল সকাল মুড়ি-আম খেয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন নিজের অফিসে। পরনে গোলাপি শার্ট, গলায় স্পন্ডিলাইটিসের ‘কলার’, মুখে মুচকি হাসি। দুপুরে এক বার ছাড়া অফিস থেকে বেরোলেন না দিনভর। ভোটগ্রহণ যখন শেষের পথে, মুখে তখনও হাসি ঝুলছে মালদহের ইংরেজবাজারের তৃণমূল বিধায়ক তথা পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর।
ভোট দেওয়ার পর আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) ও মৌসম বেনজির নুর। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেজাজ গরম হল আর এক জনের। তিনি জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীও (ডালু)। চার দিক থেকে ছাপ্পা, বুথ দখলের অভিযোগ শুনে আর বসে থাকতে না পেরে বেরিয়েই পড়েছিলেন। পৌঁছতে তো পারলেনই না, বরং নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে মাঝরাস্তায় আটকে দিল পুলিশ। দিনভর ঘরবন্দি থেকে ছটফট করে কাটালেন ডালুবাবু। তৃণমূল বুথ দখল করছে, বারবার সেই খবর আসছে। ক্ষুব্ধ ডালুবাবু বললেন, “এই ভাবে ভাঙবে গনি-মিথ? সাহস থাকে তো সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করুক, বুঝবে গনি-মিথ ভাঙা যায় না!” আর কৃষ্ণেন্দুর মন্তব্য, “গনিখান মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। কিন্তু এখন যাঁরা কংগ্রেসে রয়েছেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। গনি-সাম্রাজ্য তাই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে।”
কার্যালয়ে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। সোমবার মালদহে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
সকাল সাড়ে ৮টায় ভাগ্নি মৌসম বেনজির নুর ও ভাই আবু নাসের খান চৌধুরীকে নিয়ে কোতোয়ালির বুথে গিয়ে ভোট দেন ডালুবাবু। তার আগে থেকেই দলের কর্মীরা বারবার ফোনে অভিযোগ করছেন, নানা জায়গায় বুথ দখল করছে তৃণমূল। ভোট দিয়েই ডালুবাবু যান দলের অফিসে। সেখানে চা খাওয়ার ফাঁকে খবর আসে, কালিয়াচকে বুথ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দলের এজেন্টদের। ডালুবাবু গাড়ি নিয়ে বেরোন। রাস্তায় কয়েক জায়গায় কর্মীরা পথ আটকে সন্ত্রাসের অভিযোগ জানান। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়ে ছাড়া পান তিনি।
কালিয়াচকের মোজামপুরে পৌঁছতেই ডালুবাবু খবর পান, মানিকচকে মাথা ফেটেছে দলের পাঁচ কর্মীর। গাড়ি ছোটে সে দিকে। কিন্তু রাস্তা আটকে পুলিশ জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে মহকুমাশাসক (মালদহ সদর) পুলিশ সুপারের কাছে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ করেছেন। তাই তাঁকে আর কোথাও যেতে দেওয়া হবে না। ডালুবাবুর ক্ষোভ, “মহকুমায় ঘোরার জন্য অনুমতি দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কেন আটকানো হল জানি না!” তাঁর দাবি, “তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তাই আমাকে ঘরে আটকে ভোট করল।” মৌসমেরও অভিযোগ, “আমরা যেখানে বাহিনী চেয়েছি, সেখানে দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের কথামতো দেওয়া হয়েছে।” মহকুমাশাসক পুষ্পেন্দু মিত্র অবশ্য বলেন, “ওঁকে (আবু হাসেম) ২০ জুলাই পর্যন্ত ঘোরার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ দিনের অনুমতি নেননি।”
কৃষ্ণেন্দু অবশ্য বেরনোর চেষ্টাই করলেন না। সারাদিন কাটালেন অফিস ঘরে। দুপুরে এক বার কেবল হাসপাতালে যান কালিয়াচকে বোমা ফেটে আহত তিন শিশুকে দেখতে। আর কোথাও গেলেন না? কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “অফিসে কন্ট্রোল-রুম খুলেছি। ছেলেরাই সব দেখছে।”
ভোটের ফল বেরনোর পর বোঝা যাবে, কে ঠাণ্ডা থাকেন, আর কার মাথা গরম হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.