চরমেঘনায় এক পাত্রে প্রাতঃরাশ সব প্রার্থীর
কাঠের চেয়ারের উপরে রাখা থালাভর্তি শুকনো মুড়ি। সঙ্গে চানাচুর, লঙ্কা, পেঁয়াজ। ভোটের সকালে এক সঙ্গে বসে একই পাত্রে রাখা সেই মুড়ি দিয়েই প্রাতঃরাশ সারলেন চরমেঘনার কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি এবং বিএসপি-র প্রার্থীরা। চরমেঘনা প্রাথমিক স্কুলের বুথ লাগোয়া শ্যামল বিশ্বাসের বাড়ির সামনে এমন দৃশ্য দেখে বোঝার উপায় নেই, তাঁরা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। বিএসপি-র প্রার্থীর আসতে দেরি হচ্ছিল দেখে তৃণমূলের প্রার্থী মজা করতেও ছাড়লেন না, “কী রে বাবা, হাতি চিহ্নে দাঁড়িয়েছিস বলে হাতির মতোই হাঁটবি না কি?’’ সকলে এক সঙ্গে হাসিতে ফেটে পড়লেন। চতুর্থ দফার ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসন, সকলেই যখন উদ্বিগ্ন তখন তারকাঁটার ওপারে চরমেঘনা রীতিমতো উৎসবের মেজাজে।
ভোটের সকালে। চরমেঘনায় ছবিটি তুলেছেন কল্লোল প্রামাণিক।
এই প্রথম চরমেঘনা নিজের গ্রামেই ভোট দিচ্ছে। ৫২৯ জন ভোটারের জন্য বুথ হয়েছে গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অন্য বার গ্রামের মানুষকে ভোট দিতে যেতে হত পাশের গ্রাম মেঘনায়। গ্রামের মহিলারা জানাচ্ছেন, “সে এক বড় ঝামেলা ছিল। সকাল সকাল রান্নাবান্না সেরে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে ভোট দিতে যেতাম। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যেত। এটা ভেবেও খারাপ লাগত যে একেই ছিটমহলে বাস করছি। গ্রামে সেই অর্থে কিছুই নেই। তাই বলে গ্রামে ভোটটাও দিতে পারব না! তবে এ বার নিজের গ্রামে দাঁড়িয়েই নিজের ভোটটা দিতে পেরে সত্যিই খুব ভাল লাগছে।’’
ভাল লাগছে কাঁটাতার পেরিয়ে চরমেঘনায় ভোট করতে আসা ভোট কর্মীদেরও। প্রিসাইডিং অফিসার সুমন্ত সরকার, পুলিশকর্মী শান্তনু সরকাররা বলছেন, “লোকমুখে ও কাগজ পড়ে জেনেছিলাম, চরমেঘনা যাওয়া আর বাংলাদেশ যাওয়া না কি প্রায় একই ব্যাপার। তাই যে দিন জানতে পেরেছিলাম যে ভোটের ডিউটি পড়েছে তাঁরকাটার ওপারের এই প্রত্যন্ত গ্রামে, তখন সত্যিই খুব ভয় ভয় করছিল। কিন্তু এখানে এসে আমরা আপ্লুত। এত শান্তিপূর্ণ ভোট আর কোথাও হচ্ছে কি না কে জানে! আর এখানকার মানুষের আন্তরিকতা ভোলার নয়। আমাদের থাকা, খাওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করেছেন গ্রামের মানুষ। কিছুতেই টাকাপয়সা নিতে চাইল না।’’
রবিবার রাত থেকেই ভোটকর্মীদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করছেন গ্রামের মানুষ। সোমবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল শ্যামল বিশ্বাসের বাড়ির দাওয়ায় সব্জি কাটছেন পাড়ার মহিলারা। পাশের বাড়ির উঠোনে উনুন খুঁড়ে চলছে রান্না। গ্রামের স্কুলে কর্মীদের থাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। আপনারা নাকি নিখরচায় ভোটকর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন? প্রশ্নটা শুনে গ্রামের চম্পা মাহাতো, নিখিল সর্দার, সমর বিশ্বাসরা সমস্বরে জানালেন, “ওরা আমাদের অতিথি যে। এই প্রথম আমাদের গ্রামে ভোট হচ্ছে। আবার ওরা কবে আসবেন কে জানে!’’
গ্রামের প্রার্থী তৃণমূলের উত্তম সর্দার, সিপিএমের বুদ্ধদেব মাহাতো, বিজেপির সপ্তমী বিশ্বাস, বিএসপির দিনেশ সর্দার ও কংগ্রেসের অনুপ বিশ্বাসরা বলেন, “আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দলের হয়ে আমরা ভোটে দাঁড়িয়েছি ঠিকই। কিন্তু সেটাই তো আর আমাদের একমাত্র পরিচয় হতে পারে না। আমাদের সব থেকে বড় পরিচয় আমরা চরমেঘনার মানুষ। সারাটা বছর আমরা হাজার প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে এক সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করি। সবাই সবার সুখ দুঃখ সমানভাবে ভাগ করে নিই। আজ ভোট বলে তার অন্যথা হবে কেন?’’
এক দিকে স্কুল ছুটি, অন্য দিকে বাড়ির বড়রা মেতেছে ভোট উৎসবে। তাই মাথাভাঙার পাশ দিয়ে বয়ে চলা সরু রাস্তা ধরে হাতে নানা দলের পতাকা নিয়ে দিনভর ছুটে বেড়িয়ে খুদেরাও যেন মেতে উঠল ‘ভোট ভোট খেলায়’। ভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে ঘটে চলা অশান্তির গুমোট পরিবেশে চরমেঘনাই যেন স্বস্তির দখিনা বাতাস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.