ফের মুখোমুখি
ভোটের মাঠে হঠাৎ দেখা, ‘ভাই’ বললেন ‘দাদা’ কেন এখানে
ল ছাড়ার পরে ‘দাদা’র সঙ্গে আর দেখাই হয়নি তাঁর।
সোমবার সেই দাদার সঙ্গেই আড়াআড়ি দেখা, একেবারে ভোটের মাঠে।
আক্ষরিকই মেঠো জায়গা। মেঠো পথ। পাট খেত। বিশ মিটারের মধ্যে হু হু করে বইছে গঙ্গা।
শ্রাবণের চড়চড়ে রোদ্দুর মাথায় নিয়ে অধীর চৌধুরীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ‘ভাই’ হুমায়ুন কবীর নিচু গলায় শাসিয়ে গেলেন, ‘‘কর্মীদের গায়ে হাত পড়লে গুনে গুনে পুঁতে রাখব!’’
ক্রিম রঙের ঢোলা পাৎলুন, সাদা শার্ট অধীর, তাঁর কমান্ডো সুরক্ষিত ঘেরাটোপ থেকে ভাইয়ের হিসহিসে হুমকিকে উপেক্ষায় উড়িয়ে ভ্রূ কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলেন ঠায়। তারপর নীল-সাদা প্যাজেরোর দিকে পা বাড়িয়ে বললেন, “শক্তিপুর পার্টি অফিস।”
ঠোকাঠুকিটা লাগার মুখে ফের যেন থম মেরে গেল মানিক্যহার মোড়।
অনুগামীদের সঙ্গে অধীর চৌধুরী।
সোমবার মুর্শিদাবাদে পঞ্চায়েত ভোটের সকালটা এ ভাবেই ‘দাদা-ভাইয়ের’ শুম্ভ-নিশুম্ভ সাক্ষাৎ দিয়ে শুরু হল।
গত নভেম্বর মাসে কংগ্রেস ছেড়ে একেবারে মন্ত্রী হয়ে শাসকদলে যোগ দিয়েছিলেন একদা অধীরের ডান হাত হুমায়ুন। বরাত মন্দ। সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই উপনির্বাচন হেরে বিধায়ক পদটাই খুইয়ে হুমায়ুনের এলাকায় বোলবোলাও ঝিমিয়ে পড়ে।
তাঁর দাদা অবশ্য সাংসদ থেকে রেল প্রতিমন্ত্রী হয়ে দিল্লিতে জাঁকিয়ে বসেছেন। আর তাঁদের পুরনো ঘনিষ্ঠতার মাঝে তৈরি হয়ে গিয়েছে হাজার মাইলের দূরত্ব! সোমবার সেই ঘোর বিরোধ জিইয়ে রেখেই শুরু হল ভোটের সকাল।
পরে হুমায়ুন বলেন, “দাদা তো এই এলাকার ভোটার নন।
সান্ত্রী-পারিষদ নিয়ে রেজিনগর এলাকায় ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন কেন উনি? আমি দেখেছি, ১৬০ নম্বর বুথে ঢুকে ভোটারদের চমকানোর চেষ্টাও করেছেন। দলবল জুটিয়ে তাই রুখতে চেয়েছিলাম আমি।” স্থানীয় শক্তিপুর থানায় অধীরের বিরুদ্ধে নির্বাচন বিধি ভাঙার অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি।
যা শুনে শক্তিপুরে দলীয় কার্যালয়ে চিনি ছাড়া লাল চায়ে চুমুক দিয়ে অধীর বলছেন, “ও কী করেছে, জানি না। তবে আমি তো নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়েই ওই এলাকায় ঢুকেছিলাম। আমার গাড়ির কাচেও কমিশনের সেই অনুমতি পত্রের ফটোকপি সেঁটে রেখেছিলাম। তা ছাড়া ভোটটা তো নিজের দেশেই হচ্ছে রে বাবা, আমি তো কাবুলে ভোট দেখতে যাইনি!” রেল প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগ, গত ক’দিন ধরেই ওই এলাকায় কংগ্রেস কর্মীদের উপরে চড়াও হয়ে ‘হুমায়ুনের লোকজন’ মারধর করছে। রবিবার রাতে বেলডাঙার জেলাপরিষদ প্রার্থী শাহনাজ বেগমকে মদ্যপ অবস্থায় হেনস্থা করে জনা কয়েক তৃণমূল সমর্থক। তার মধ্যে হুমায়ুনের ছেলেও ছিল। অধীর জানান, এলাকার কংগ্রেস কর্মীদের ‘মনোবল’ কিঞ্চিৎ বাড়াতেই তাই এ দিন ওখানে কমিশনের অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
অনুগামীদের সঙ্গে হুমায়ুন কবীর।
হুমায়ুন পাল্টা বলছেন, “ও সবই অজুহাত। এলাকায় কোনও উত্তেজনা ছিল না। উনি এসেই সেই শান্তির আবহ ভাঙতে চেয়েছেন।” ‘দাদা’ এসেছেন খবর পেয়েই তাই সাত সকালে মানিক্যহারের বাড়ি থেকে দলবল জুটিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। কার্বাইন উঁচিয়ে থাকা অধীরের প্রহরীদের সামনে দিয়েই তাঁর ‘মিছিল’টা নিয়ে গঙ্গা পাড়ের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে সটান ফোন করেন জেলাশাসক থেকে পুলিশ সুপার সকলকে। স্পষ্ট হুমকি, “ভাল হবে না কিন্তু, কোনও গণ্ডগোল লাগলে দায়ী থাকবে প্রশাসন। ওঁকে মানে মানে কেটে পড়তে বলুন।”
তার পরে চিৎকার করে দলীয় সমর্থকদের জানিয়ে দেন, “দলের কোনও কর্মীর গায়ে যদি হাত পড়ে, গুনে গুনে পুঁতে রাখব কিন্তু! এ আমি বলে দিলাম।” উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে চার দিকে।
এসপি-ডিএম’কে ফোনের পরে উত্তেজিত হুমায়ুনের ফোন, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে, “দাদা, অধীরের আস্পর্ধাটা দেখেছেন...”। পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে যাচ্ছে যখন, তখন আচমকাই তাতে ইন্ধন না জুগিয়ে অধীরের কনভয় ছুটতে থাকে মানিক্যহার ছেড়ে রামনগরের দিকে। রোদ্দুর মুছে ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
হাঁফ ছেড়ে এক পুলিশ কর্মীকে বলতে শোনা যায়, “বাব্বাঃ!”

ছবি: সুদীপ আচার্য



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.