|
|
|
|
গুরুপূর্ণিমার রথ মহিষাদলে |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
উল্টোরথ শেষ। মাসির থেকে ফিরে গিয়েছেন জগন্নাথ-বলভদ্র-সুভদ্রা। মহিষাদলে অবশ্য এখনও রয়েছে রথযাত্রার রেশ। সোমবার ফের রথ পথে বেরোল রথ। এ বার রাম-লক্ষ্মণ-সীতাকে নিয়ে। এই উৎসব গুরুপূর্ণিমার-রথ বলেই পরিচিত।
এ দিন স্থানীয় রঙিবসান থেকে শুরু হয় রথযাত্রা। তারপর গোটা এলাকা তা পৌঁছয় ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে। পিতল ও কাঠের তৈরি প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার রথ। বসেছিল মেলা। এই অনুষ্ঠান নিয়ে জনশ্রুতিও রয়েছে। মহিষাদলের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রার সূচনা হয়েছিল ২৩৭ বছর আগে। তখন বাড়ির মেয়েরা সে ভাবে উৎসবে সামিল হতেন না। তাই রাজা দেবপ্রসাদ গর্গ তাঁর দুই ভাগ্নি দীপ্তিময়ী ও প্রীতিময়ীর জন্য দু’টি পিতলের রথ গুরুপূর্ণিমা তিথিতে বের করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে রাজ গড়ের ভিতরে রাজ পরিবারের মহিলারাই এই উৎসব পরিচালনা করতেন। পরে বাইরের মহিলা ও শিশুরাও যোগ দিতে শুরু করেন। ১৯৭১-৭২ সালে নকশল আন্দোলনের সময়ে পুরনো রথ দু’টি নষ্ট হয়ে যায়। এর পর কিছু বছর গুরুপূর্ণিমার বন্ধ ছিল। ১৯৭৮ সালে স্থানীয়দের আবেগের কথা মাথায় রেখে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মহিষাদল শাখা পুনরায় গুরুপূর্ণিমার রথযাত্রা চালু করে। |
|
রথযাত্রায় ভিড় ভক্তদের। ছবি: আরিফ ইকবাল খান |
রঙিবসানে সঙ্ঘের এই শাখাটি চালু হয় ১৯৫৫ সালে। প্রতিষ্ঠাতা স্বামী মুক্তানন্দজি মহারাজ। তাঁদের উদ্যোগে রথযাত্রা চালু হলে স্থানীয় রামবাগে রাজ পরিবারের রামমন্দিরের রাম-লক্ষ্মণ-সীতার অষ্টধাতুর মূর্তি ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গুরুপূর্ণিমার রথে রাম-লক্ষ্মণ-সীতার মূর্তির সঙ্গে থাকে সঙ্ঘের গোপাল মূর্তি ও প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজের প্রতিকৃতি। এই উপলক্ষে সঙ্ঘের সদস্যদের সংকীর্তন, মহাভারতের রচনাকার ব্যাসদেবের কাহিনি বর্ননা, লাঠি ও ছোরা খেলার আয়োজন থাকে। উৎসবের ব্যয় বহন করে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ।
এ দিনও নিয়ম মেনে সব অনুষ্ঠান হয়। বিকেল ৩টে ৪০ মিনিটে রথযাত্রার সূচনা হয় রঙিবসানের আশ্রম থেকে। সিনেমা মোড়, পুরনো বাসস্ট্যান্ড, বাজার থেকে রাজগড় হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে কলেজ রোড হয়ে তিন ঘণ্টা পরে রথ ফেরে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের রঙিবসানের আশ্রমে। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মহিষাদল শাখার সঞ্চালক মহারাজ স্বামী ত্রিগুণানন্দজি বলেন, “মানুষের আবেগের কথা মাথায় রেখেই আমরা এই রথযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছি।” এ দিন গুরুপূর্ণিমার রথ বেরিয়েছে সুতাহাটার চৈতন্যপুর ও হলদিয়ার দুর্গাচকেও।
|
|
|
|
|
|