কড়া হেডস্যারের অসীম প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা এবং লেভেল থ্রি কোচিং ডিগ্রি।
ব্যাটিং-কোচের চাহিদা।
ময়দানের ক্লাবের ‘প্রেশার ট্যাকটিক্স’ সামলানোর মতো শক্ত শিরদাঁড়া।
প্রেক্ষাপট এই চার কারণ। এবং তাতেই শেষ পর্যন্ত অন্য কেউ নন, অশোক মলহোত্রকে বাংলার কোচ হিসেবে বেছে ফেলল সিএবি। বারো বছর পর আবার স্থানীয় কাউকে আনা হল বাংলা ক্রিকেটের দায়িত্বে। পলাশ নন্দীর পর। আগামী দু’বছরের জন্য চুক্তি করা হয়েছে অশোকের সঙ্গে।
বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ককে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো নাম কম ছিল না। সৌরাষ্ট্রের কোচ দেবু মিত্র ছিলেন। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী টিমের সদস্য বলবিন্দর সাঁধু ছিলেন। রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যেপাধ্যায় তো বটেই, ভরত অরুণের নামও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে বাকিদের ক্ষেত্রে ততটাও নিশ্চিন্ত হতে পারেনি সিএবি।
সাঁধু নিয়ে কর্তাদের বক্তব্য, গত দু’তিন বছরে তাঁর বলার মতো কোনও পারফরম্যান্স নেই। দেবু মিত্রের ক্ষেত্রে ক্রিকেট-জ্ঞান নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু বলা হচ্ছে, ময়দানের ক্লাবের চাপ কতটা সামলাতে পারবেন, সন্দেহ। তা ছাড়া বয়সও হয়েছে। সম্বরণের ব্যাপারে বলা হচ্ছে, তিনি মিডিয়ায় জনপ্রিয়। আর ভরত অরুণের সময় বাংলার অবনমন ঘটে গিয়েছিল। এক সিএবি কর্তার কথায়, “যেচে আবার ঝামেলা কে নেবে? মিডিয়াই তো ছিঁড়ে ফেলত আমাদের।”
অতএব অশোক।
গত দু’তিন বছর ধরেই রঞ্জিতে বাংলা ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স দেখে মনে হয়েছে, টিমটার কোথাও শৃঙ্খলায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ড্রেসিংরুমে চোরা দলাদলির ব্যাপার তো ছিলই, বাইশ গজে নেমেও শৃঙ্খলার অভাব টের পাওয়া যাচ্ছিল। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। যার সমাধান বেশ কয়েক বার সিএবি-কে বলেছিলেন অশোক। অতীতে ক্রিকেট ডেভলপমেন্ট কমিটির বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, বাংলায় প্রতিভা যথেষ্ট আছে, শুধু ক্রিকেটারদের মধ্যে নরম-সরম ব্যাপারটা বেশি। মুম্বই ক্রিকেটারদের মতো ‘খারুশ’ ব্যাপারটা নেই। দিল্লিওয়ালাদের মতো ‘দেখে নেব’ মানসিকতাও নেই। যেটা বড় মাপের যুদ্ধ জিততে গেলে প্রয়োজন।
পাশাপাশি আরও বলা হচ্ছে, বাংলায় কোচিং করাতে গেলে ময়দানি ক্লাবের চাপটা মারাত্মক ভাবে পোহাতে হয়। শেষ দিকে ডব্লিউ ভি রামনকেও যেটা সহ্য করতে হয়েছে। সোমবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অশোককে ডেকে পাঠান সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া। তাঁকে ক্লাবেদের অন্তহীন চাপের কথা সেখানে বলা হয়। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক কথা দেন, সিএবি নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। কোনও পরিস্থিতিতেই তিনি ও সব বরদাস্ত করবেন না। সঙ্গে আরও জানিয়ে দেন, রঞ্জিতে নামার আগে অন্তত দু’মাস তিনি প্রি-সিজন ক্যাম্প করতে চান লক্ষ্মীরতন শুক্লদের নিয়ে। কর্নাটকে বাংলার চলতি টুর্নামেন্টেও যাবেন অশোক। আর হালফিল ক্রিকেটারদের নিয়ে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, মাঠের বাইরে কে কোথায় কী করছে, নৈশপার্টি করছে কি করছে না, দেখতে যাবেন না। কিন্তু মাঠে কিছু না করতে পারলে মুশকিল আছে! কর্তাদের মনে হচ্ছে, ঠিক এই ওষুধেরই দরকার ছিল বাংলা ক্রিকেটের।
নইলে প্রেসিডেন্ট ডালমিয়াও আর বলবেন কেন, “আমাদের চিন্তাটা কমল।”
|
চুম্বকে নতুন কোচ |
নাম: অশোক ওমপ্রকাশ মলহোত্র
জন্ম: ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫৭ (অমৃতসর)
বয়স: ৫৬ বছর ১৭৭ দিন
প্রধান দল: ভারত, বাংলা, হরিয়ানা। ব্যাটিং ডান হাতি
টেস্ট: ম্যাচ ৭ , ইনিংস ১০, রান ২২৬, সর্বোচ্চ ৭২ ন.আ, গড় ২৫.১১, সেঞ্চুরি ০, হাফসেঞ্চুরি ১।
ওয়ান ডে: ম্যাচ ২০, ইনিংস ১৯, রান ৪৫৭, সর্বোচ্চ ৬৫, গড় ৩০.৪৬, সেঞ্চুরি ০, হাফসেঞ্চুরি ১।
প্রথম শ্রেণি: ম্যাচ ১৫৬, ইনিংস ২২৭, রান ৯৭৮৪, সর্বোচ্চ ২৫৮ ন.আ., গড় ৫০.৯৫ সেঞ্চুরি ২৪, হাফসেঞ্চুরি ৫২। |
|