‘আমার আরামকেদারায় বসে সমালোচনা করার দিন শেষ’
বারো বছর পর বাংলার প্রথম স্থানীয় কোচ! চাকরির প্রথম দিনে সেই অশোক মলহোত্র-র কথা শুনে মনে হল আক্রমণাত্মক ক্রিকেটলিখিয়ে থেকে দ্রুত ধূর্ত ক্রিকেট প্রশিক্ষকে উত্তরণের চেষ্টা আজই শুরু করলেন।

প্রশ্ন: আপনার পূর্বসুরির কোচ হিসেবে পারফরম্যান্স বিচার করুন।
মলহোত্র: এটা কী প্রশ্ন হল (হাসি)।

প্র: কেন? ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যায় অসুবিধে কী?
মলহোত্র: আমার পক্ষে রামনকে বিচার করা খুব কঠিন। ওর কোচিংয়ে ওয়ান ডে টুর্নামেন্টে টিম ভাল খেলেছে। কিন্তু রঞ্জিতে একদমই ভাল খেলেনি। আমার মতে যে টিমে ছ’টা প্লেয়ার ইন্ডিয়া খেলার মতো রয়েছে সে অনুপাতে খুবই আন্ডার পারফর্ম করেছে।

প্র: আপনার মতে এই টিমের অন্তত ফাইনাল খেলা উচিত ছিল?
মলহোত্র: এ ভাবে বলতে পারব না। তবে অনেক বেটার করা উচিত ছিল। এত ভাল টিম নিয়ে আমাদের অনেক ভাল খেলা উচিত ছিল। কিন্তু আমার এই চিন্তাধারাটা একান্তই দূরে বসে আর্মচেয়ার ক্রিটিক হিসেবে। এ বার আমার সে আরামের দিন শেষ। এখন আমি ও ধারে। এখন আমায় প্রমাণ করতে হবে আমার কথা আর বাস্তবে মিল আছে। ইংরেজিতে বললে নাও আই হ্যাভ টু ওয়াক দ্য টক।

প্র: স্থানীয় ক্রিকেটমহলের কৌতুহলী চোখ থাকবে আপনার ড্রেসিংরুমের দিকে। শোনা যায় রামনের ড্রেসিংরুম সময়ে সময়ে অঘোষিত ‘বুল রিং’-এর চেহারা নিত। একটা গোষ্ঠীর নেতা লক্ষ্মীরতন শুক্ল। আর একটা গোষ্ঠীর মনোজ তিওয়ারি। মধ্যিখানে ঋদ্ধিমান সাহা চুপচাপ।
মলহোত্র: ড্রেসিংরুমের দিকে নজর দেওয়া আমার অন্যতম লক্ষ্য।

প্র: কিন্তু তার জন্য তো আপনাকে কড়া হতে হবে। বাংলার তারকাদের প্রয়োজনে বলতে হবে শোনো ভাই, বস আমি। তোমরা প্লেয়ার। পারবেন?
মলহোত্র: আমার মনে হয় না অত দূর যেতে হবে বলে। প্লেয়ারদের অনেকের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। আমার ম্যান ম্যানেজমেন্ট স্কিলটা এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার মুখে পড়বে। আর আমার ধারণা তাতে আমি ভালই করব।
অতীত কৃতিত্ব পিছনে রেখে আগামীর দিকে মুখ। বাংলার নতুন কোচ হয়ে
নিজের বাড়িতে অশোক মলহোত্র। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
প্র: আর একটা সমস্যা ক্লাবগুলোর চাপ অগ্রাহ্য করে সেরা টিম মাঠে নামানো। ভিন রাজ্যের কোচেরা অবধি সমস্যায় পড়েছেন। আপনি তো সেখানে স্থানীয় ছেলে।
মলহোত্র: আমি কোনও ক্লাবের সঙ্গে জড়িত নই। মোহনবাগানে খেলেছি। ইস্টবেঙ্গলে খেলেছি। এমনকী নির্বাচক হয়ে টার্ম শেষ করার পর তিন বছর তপন মেমোরিয়ালেও খেলেছি। ক্লাবের চাপ নেওয়ার কোনও ব্যাপারই নেই।

প্র: তারকা সামলানোর ব্যাপারেও আপনার ভয়ডর নেই বলছেন?
মলহোত্র: কী বলছেন! ইন্ডিয়ান ড্রেসিংরুমে যখন আমি খেলতাম তখন সুপারস্টারের কিছু অভাব ছিল? আমার জীবনে আমি প্রচুর সুপারস্টার দেখেছি।

প্র: বাংলা ক্রিকেটের ইদানীংকালে আরও এক সমস্যা খবর ক্রমাগত ‘লিক’ হয়ে যাওয়া। নির্বাচক কমিটির মিটিং। ড্রেসিংরুমে গণ্ডগোল। কোনও কিছু মিডিয়ার কাছে গোপন থাকে না। এই ডেলিভারিটা আপনি কী করে সামলাবেন?
মলহোত্র: ভুলে যাবেন না ছ’বছর আমি বাংলার ক্যাপ্টেন ছিলাম। এই খবর লিক হওয়া-টওয়া আমার আমলেও হয়েছে। আমার কাছে নতুন কিছু নয়।

প্র: প্রতিদ্বন্দ্বী বাকি চার জনকে ছেড়ে আপনাকে যে বাংলা কোচ করল, তারা বাড়তি কী পাবে?
মলহোত্র: আমার আন্তরিকতা পাবে। আমার সঙ্কল্প পাবে। আর একটা বড় তফাত হবে আমার স্থানীয় ভাষা জানাটা। ছ’বছর আগে যখন আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম তখন আমার বাংলাটা অতি খারাপ ছিল। এখনও যে দারুণ ভাল তা নয়। তবে আগের চেয়ে অনেক ভাল। ভাঙা ভাঙা হলেও যেটা বলি, সেটা বাংলাই বলি। আমার সংক্ষিপ্ত কোচিং জীবনে দেখেছি প্লেয়ারদের নিজের ভাষাটা বোঝানো আর তাদের ভাষাটা বোঝা, এটাই আসল। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে বারবার অস্ট্রেলীয় কোচগুলোকে দেখি। কিছুতেই স্থানীয় ছেলেদের সঙ্গে সড়গড় হতে পারছে না। আমার সেই সমস্যা নেই। আপনার কথা অনুযায়ী ড্রেসিংরুমে যদি হালকা সমস্যাও থেকে থাকে, আমার বাংলা আশা করি সেটাকে সামলাতে পারবে।

প্র: আপনি কি জানেন বারো বছর পর বাংলা ভিন রাজ্যের অতিথিদের ছেড়ে স্থানীয় কোচ বাছল?
মলহোত্র: জানি। সে জন্যই চ্যালেঞ্জটা আরও বড়। আমি তো ঠিক করেছি আমাদের স্ট্র্যাটেজির মধ্যে পিচ প্রস্তুতকারককেও রাখব। গত ক’বছর দূর থেকে লক্ষ্য করেছি আমরা কিছুতেই হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগাতে পারি না। এটা হবে কেন? পিচ যিনি তৈরি করেন, তাঁকে নিয়ে বসব। প্লেয়ারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ঘুরে ঘুরে ক্লাব ম্যাচ দেখব। ভাল স্পিনার খুঁজব। এই টিম নিয়ে না হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে আবার বলি, বিশেষজ্ঞ হিসেবে টেনশনটাই ছিল না। এখন আমাকে যে করে দেখাতে হবে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.