শান্তির ভোট দেখল লোবা। চতুর্থ দফার যে পঞ্চায়েত নির্বাচন যে হিংসার বাতাবরণের মধ্যে হয়েছে, তার আঁচ পড়েনি বীরভূমের এই অঞ্চলে। মারামারি-কাটাকাটি কোথাও নেই, সকাল থেকে বুথে বুথে লম্বা লাইন ভোটারদের। চলেছে পুলিশ ও আধা সেনার টহল।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে হওয়া বিক্ষিপ্ত অশান্তি এবং পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলকে ঘিরে দুবরাজপুরের লোবায় যে আবহাওয়া তৈরি হয়েছিল, তাতে আশঙ্কা ছিল ভোটের দিনও অশান্তি হওয়ার। কিন্তু, ১৪টি আসন বিশিষ্ট লোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি বুথে সোমবার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকায় গোটা এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলে মনে করছে সিপিএম থেকে শুরু করে লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। |
সোমবার তোলা ছবি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত। |
ওই এলাকায় খোলামুখ কয়লাখনির জন্য জমি নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরে শাসকদলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটির। খনি সংস্থার মাটি কাটার যন্ত্র ছাড়াতে গত বছর ৬ নভেম্বর লোবা গ্রামে যে পুলিশি অভিযান চলে, তাতে পাঁচ গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন আরও অনেকে। তার পরই কমিটি ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্দেশ্য ছিল, লোবায় জমি অন্দোলনকে টিকিয়ে রাখা, যাতে স্থানীয় পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রেখে কয়লা খনির পরিবর্তে নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সমর্থ হন এলাকার মানুষ। ১৪টি আসনের দশটিতে প্রার্থী দিলেও এ বার ভাল ফল করার ব্যাপারে আশাবাদী ছিল কমিটি। কিন্তু, শাসকদলের কিছু স্থানীয় নেতা প্রচারের কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করে এসেছেন কমিটির নেতৃত্ব। কয়েক দিন আগেই লোবার মেটেগ্রামে সিপিএম কর্মীদের উপর আক্রমণ এবং কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
ভোটের দিন অশান্তির আশঙ্কা ছিল এই সব কারণেই। সে-সব অবশ্য এ দিন কিছুই ঘটেনি। শুধু লোবার ফকিরবেড়া সংসদের একটি বুথে ছাপ্পা ভোট পড়ছে, এই অভিযোগ কিছুক্ষণ ভোট বন্ধ ছিল। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা পরিস্থিতি সামাল দেন। লোবা পঞ্চায়েতে মূলত ত্রিমুখী লড়াইয়ে ছিল সিপিএম, তৃণমূল এবং কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার বলেন, “যে ভাবে ভোট হল, তাতে অমরা খুশি।” তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের হুমকিতে দু’টি বুথে তাঁরা পোলিং এজেন্ট দিতে পারেননি। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরুণ মিত্র বলেন, “প্রাক-নির্বাচন যে সন্ত্রাস তৃণমূল চালিয়েছে, তাতে এখানে ভোট নিয়ে আমাদের যথেষ্ট আশঙ্কা ছিল। তবে, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় ভোট মোটের উপরে শান্তিতেই মিটেছে।”
লোবায় জেতার অবশ্য আশাবাদী তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “লোবা, পলাশডাঙা, জোপলাইএই তিনটি সংসদ নিয়ে আমাদের কিছুটা সংশয় রয়েছে। এই এলাকাগুলিতে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সমর্থন আছে। বাকি সংসদগুলিতে অবশ্য জেতার ব্যাপারে আমাদের কোনও সংশয় নেই।” |