পাণ্ডবেশ্বরে ‘গোপন’ অঙ্ক
জোটে নকশাল, কংগ্রেসের ‘বন্ধুত্ব’ কবুলে নারাজ বামেরা
য়েক বছর আগেও, গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের আঁচল ধরেছিল নকশালেরা। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে পাণ্ডবেশ্বরে তারা সেই জোট ভেঙে সিপিএমের সঙ্গ নিয়েছে।
জোট সমীকরণের এই বদল যা-ও বা দুই বাম দল প্রকাশ্যে স্বীকার করছে, কংগ্রেসের সঙ্গে তলায়-তলায় আসন সমঝোতার কথা তারা মানতে নারাজ। দীর্ঘদিনের একবগ্গা বাম বিরোধিতাই যে তৃণমূলের ‘শক্তি’, তারা চিরকালই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিপিএমের আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে এসেছে। কংগ্রেস কোনও দিনই তা স্বীকার করেনি, এ বারও করছে না।
পাণ্ডবেশ্বরে গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের সংখ্যা ১০২। এর মধ্যে অন্তত ৬৭টিতে প্রায় সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছে তৃণমূল। কোথাও নকশাল, কোথাও কংগ্রেস, কোথাও আবার সিপিএমের সঙ্গে তাদের দ্বৈরথ। গত বার, ২০০৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েত দখল করেছিল সিপিএম। কেন্দ্রা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯টি আসনেও তারা বিনা বাধায় জেতে। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট তিনটি আসন পেয়েছিল।
পাণ্ডবেশ্বর ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত ছ’টি। ১৯৮৩ সালে প্রথম পঞ্চায়েত ভোট থেকে মাত্র দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত বৈদ্যনাথপুর ও বহুলা সিপিএম-সিপিআইয়ের দখলে ছিল। প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে জোট বেঁধে কেন্দ্রা গ্রাম পঞ্চায়েত ক্ষমতা দখল করেছিল সিপিএম এবং নকশালেরা। ১৯৯৮ সালে জোট ভাঙে। ২০০৩ সাল থেকে ওই পঞ্চায়েতটি সিপিএমের দখলে। ১৯৯৮ সালেই কংগ্রেসের থেকে হরিপুর ও নবগ্রাম পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নিয়েছিল সিপিএম। ছোড়া পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে আসে ২০০৩ সালে। অর্থাৎ পরিবর্তনের আগে গোটা এলাকায় সিপিএমই ছিল দলে বেশি ভারী।
২০০৮ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস এবং নকশালেরা সিপিএমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, ছাপ্পা এবং মনোনয়ন দাখিল করতে না দেওয়ার অভিযোগে সোচ্চার ছিল। কিন্তু রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ অনেক হিসেবই বদলে দিয়েছে। সিপিএমের এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের বক্তব্য, “ঘুরে দাঁড়ানোই আমাদের কাছে বড়। তার জন্য যার সমর্থনই নিতে হোক!” পঞ্চায়েত সমিতিতে তাঁরা নকশালদের একটি আসন ছেড়েও দিয়েছেন। নকশালদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় দাবি, “পরিবর্তনের পরে আমাদের মতো ছোটো দলগুলির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। দলবাজি ও দূর্নীতিতে আপাদমস্তক ভরে গিয়েছে তৃণমূল। নীতিগত কারণেই আমরা তৃণমূলের জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি। পরিস্থিতি বিচার করে সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতা করেছি। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট হয়নি।”
সোমনাথবাবু এমন দাবি করলেও বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েতে ১৫টি আসনের মধ্যে ১২টিতে সিপিএম এবং বাকি তিনটিতে একটি করে আসনে নকশাল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের নির্দল সমর্থিত প্রার্থীরা দাঁড়িয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। কেন্দ্রায় নকশাল, সিপিএম, কংগ্রেস এবং সিপিআই আসন সমঝোতা করেও পাঁচটি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কেন্দ্রা এবং বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েতে জবকার্ড নিয়ে ব্যপক দূর্নীতি হয়েছিল। তৃণমূল এবং নকশালদের চাপে ২৩ জন দলীয় সদস্যকে বহিষ্কার করেছিল সিপিএম। দুই গ্রাম প্রধানকেই পদ থেকে অপসারিত করেছিল দল। এর পরেও জোট?
সিপিএমের দামোদর জোনাল সম্পাদক তুফান মণ্ডলের দাবি, “কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট হয়নি। জোট হয়েছে নকশালদের সঙ্গে। মতাদর্শগত মতান্তর থাকলেও দু’টি বাম দল নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এক হতেই পারে।” কংগ্রেসের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি গোপীনাথ নাগও দাবি করেন, কারও সঙ্গেই তাঁরা জোট করেননি। যদিও তাঁর নিজের হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেস পাঁচটি এবং সিপিএম একটিতে সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ছে। অন্য কোনও প্রার্থী নেই। গোপীনাথবাবুর সতর্ক ‘ব্যাখ্যা’, তফসিল জাতি ও উপজাতির প্রার্থী যেখানে আছে, সেখানেই জাতিগত শংসাপত্র পেতে সমস্যা হয়েছে। সেই সব জায়গায় তাঁরা প্রার্থী দিতে পারেননি। সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণে অন্য কিছু আসনেও প্রার্থী দেওয়া যায়নি।
তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তী অবশ্য অভিযোগ করেন, “রীতিমতো ছক কষে অনৈতিক জোট করা হয়েছে। তা প্রকাশ্যে স্বীকার করলে মানুষ কী ভাবে নেবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্বে ভুগছে বিরোধীরা। কংগ্রেস মোট আসনের অর্ধেকের কিছু কমে প্রার্থী দিয়েছে। পাণ্ডবেশ্বর বাজারের মতো যেখানে-যেখানে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি, সেই সব জায়গায় প্রার্থী খুঁজে পেতে কংগ্রেসের অসুবিধা হয়নি। তৃণমূলের ভোট কেটে সিপিএমকে জিতিয়ে দেওয়াই ওদের ছক।”
ভোটের দিন কেন্দ্রা পঞ্চায়েতের ভুঁইয়াধাওড়া বুথ থেকে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনেই নকশাল প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টকে বের করে করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাকি এলাকায় ভোট যে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে, বিরোধীরাও তা স্বীকার করছেন। ভোটারেরা কাকে বেশি ভালবেসেছেন, তা অবশ্য তাঁরাই জানেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.