রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের চতুর্থ দফায় আজ, সোমবার ভোট মালদহে। আর ভোট যেন আবর্তিত হচ্ছে সেই গনি-মিথকে ঘিরেই।
প্রথমে গনি পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন সাবিত্রী মিত্র। গনি পরিবারের চরম বিরোধিতার পরেও বিধানসভায় নিবার্চনে তৃণমূলের হয়ে মানিকচক থেকে জিতে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন তিনি। কিছুদিন পর সেই পথ ধরেই গনিখান চৌধুরীর আরেক সেনাপতি কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীও কোতুয়ালির বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণা করে কংগ্রেস বিধায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেস যোগ দিয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই গনি পরিবারের দুই সাংসদ, দুই বিধায়কের বিরুদ্ধে লড়াই করে ইংরেজবাজার বিধানসভা উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ফের রাজ্যের পযর্টন মন্ত্রী হয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী।
আর তাই তাঁরা আত্মবিশ্বাসী। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলছেন, “মালদহের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে। আর গনিখান চৌধুরী ছিলেন উন্নয়নের অগ্রদূত। কিন্তু গনিখান মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের দু’জন সাংসদ, দু’জন বিধায়ক হয়েছেন। তাঁরা কেউ মালদহের জন্য কাজ করেননি। জেলার উন্নয়ন না করার জন্যই আমি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম।”
রাজ্যের পযর্টন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “গনিখান চৌধুরী মারা যাওয়ার পর এখন গনি পরিবারের সদস্যরা এখন গনিখানের নাম ভাঙিয়ে চলছে। বরকতদা জেলায় ঘুরে ঘুরে জেলার উন্নয়ন করতেন কিন্তু তার পরিবারের সাংসদ, বিধায়করা এখন ঘরে বসে থাকেন।”
কী ভাবে জেলায় গনি ভিতকে টলালেন? কৃষ্ণেন্দুবাবুর জবাব, “জেলার মানুষ যখনই কোনও বিপদে পড়েছেন ছুটে যাই। আর গনি পরিবারের সদস্যরা কোনওদিন কারও পাশে দাঁড়াননি। সেই কারণে মালদহের মানুষ গনি পরিবারকে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। যে জেলার উন্নয়ন করবে মালদহের মানুষ তার পাশে থাকবেন।” তাঁর কথায়, “মমতা বন্দোপাধ্যায় জেলার উন্নয়ন করছেন তাই মালদহের মানুষ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসছেন।”
তৃণমূল কংগ্রেসের দুই মন্ত্রীর ধাক্কায় কংগ্রেসের ভিত নড়ে যেতে দেখে খুশি বাম শিবির। যদিও মুখে খুশির কথা স্বীকার করতে নারাজ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। তাঁর কথায়, “কাদের ধাক্কায় কার ভিত নড়ল, কার দলে ধস নামল তাতে আমরা উৎসাহী নই! কারণ সিপিএম সিপিএমের ভূমিকা পালন করবে।” তিনি জানান, অতীতে গনিখান চৌধুরীর যখন দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল সেই সময়ও সাতবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মালদহ জেলা পরিষদ চারবার বামফ্রন্ট দখল করেছিল।
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলার দুই মন্ত্রীর ধাক্কায় মালদহে গনি মিথ ধসের মুখে, কংগ্রেসের ভিত নড়ে গিয়েছে বলে যারা ভাবছেন তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন বলে মনে করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী। তিনি বলেন, “মালদহের মানুষের মনের ভিতরে গনিখান ঢুকে রয়েছে। মালদহের মাটি কংগ্রেসের মাটি, গনিখান চৌধুরীর মাটি। এখানে কোনওদিন কেউ কংগ্রেসের ভিতকে নড়াতে পারবে না। ধসে পড়া তো দূরে কথা।” তাঁর কথায়, “যারা আমাদের দল থেকে বেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে ঢুকেছে তারা ধান্দাবাজ, সুবিধাবাদী। ওরা যখন কংগ্রেসে ছিল তখনও তারা কংগ্রেস থেকে সবথেকে বেশি সুবিধা নিয়েছে। এখন আরও বেশি সুবিধা নিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে।” |