উত্তরে শেষ পর্বের প্রচারে ব্যস্ত সব দল
বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের চার জেলা দিয়ে শেষ হবে পঞ্চায়েত ভোট। শেষ পর্বের প্রচারে রবিবার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গাতেই ব্যস্ত ছিল রাজনৈতিক দলগুলি। আজ, ভোট মালদহে। তার আগে রবিবার কংগ্রেস কর্মীদের ভয় দেখিয়ে, টাকা পয়সা লেনদেন করে ভোট আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ উঠল রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগে রবিবার কালিয়াচক থানায় অভিযোগ করেছেন জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারি। পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগটি জেলা পঞ্চায়েত নিবার্চন আধিকারিকের কাছে পাঠানো হচ্ছে।” এই প্রসঙ্গে কৃষেন্দুবাবু বলেন, “কংগ্রেস ঝাড়খণ্ড থেকে মাওবাদীদের ভুটভুটি নৌকায় পঞ্চানন্দপুরে এনে সন্ত্রাস করাচ্ছে। প্রার্থীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। এক জন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে দেখতে আমি পঞ্চান্দপুরে গিয়েছিলাম। অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন।”
শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়িতে সভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
জেলা কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারির অভিযোগ, “প্রচার শেষ হওয়ার পর রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী পঞ্চানন্দপুর ১ পঞ্চায়েতে গিয়ে গ্রামবাসীকে ভয় দেখিয়ে ভোট চান। টাকা পয়সা লেনদেন করেছেন। কংগ্রেস কর্মীদের হুমকি দিয়েছেন। কলিয়াচক থানায় ওঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন বিভিভঙ্গ-সহ সন্ত্রাস সৃষ্টি, টাকা বিলির অভিযোগ করেছি।” মোথাবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনও জেলা পর্যবেক্ষকের কাছে পর্যটন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন।
রবিবার ডুয়ার্সে বাগরাকোটে ভানু ময়দানে যৌথ সভা ছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার ডুয়ার্স-তরাই শাখার। প্রবল বৃষ্টিতে কর্মী সমর্থকদের ভিড়ের চাপে ভেঙে পড়ে সভামঞ্চ। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ অল্পের জন্য রক্ষা পান। বিমলকে বার করার সময় উপর থেকে বাঁশ খসে পড়ে তাঁর এক নিরাপত্তা রক্ষী-সহ কয়েকজন সামান্য জখম হন। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে ভাঙা মঞ্চের পাশে বাগরাকোট চা বাগানের ‘লেবার ক্লাবে’র বারান্দায় ফের সভা শুরু হয়। যোগ দেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা শিবু সোরেন। সভায় বিমল এবং শিবু কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামফ্রন্টের সমালোচনা করেন।
বালুরঘাটে অধীর চৌধুরী। ছবি অমিত মোহান্ত।
এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি নিয়ে আন্দোলন না করে উত্তর দিনাজপুর জেলার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক মেরামতিতে উদ্যোগী হওয়া উচিত রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির। রবিবার হেমতাবাদের শালবাগান মাঠে সভার দীপাদেবীকে ওই পরামর্শই দেন সমাজবাদী পার্টির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যসভার সাংসদ কিরণময় নন্দ। দীপাদেবীর দাবি, “রাজ্য সরকারের গাফিলতির জেরে জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় জেলায় চার লেন রাস্তার তৈরির কাজ আটকে গিয়েছে। আর তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের জন্য এইমসের ধাঁচা হাসপাতাল তৈরি আটকে গিয়েছে। জেলাবাসী জানেন। তা নিয়ে কিরণময়বাবু কিছু বলছেন না তা বোঝা যাচ্ছে না।” ইসলামপুরে একটি সভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “দীপাদেবী বলছেন এইমস আমরা হতে দিচ্ছি না। এটা মিথ্যে। আমরা বলেছি জমি জোর করে আদায় করা যাবে না। প্রয়োজনে কিনতে হবে।”
পঞ্চায়েত ভোটে দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে রাজ্যে পরিবর্তনের আহ্বান জানালেন পঞ্চায়েতও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সুব্রতবাবু রবিবার নিগমনগর চৌধুরীহাট সহ তিনটি এলাকায় সভা করেন। পঞ্চায়েত মন্ত্রী এ দিন রাস্তা পানীয় জল বিধবা ভাতা বার্ধক্য ভাতা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে দেদার প্রতিশ্রুতি দেন। তার দাবি ৫ বছরে বাংলার চিত্র পাল্টে দেব। অন্য দিকে সিতাইয়ের দুটি এলাকায় সভা করেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় ওই সভাতে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে তৃণমূল প্রার্থীদের জেতানোর ডাক দেন তিনি। এ দিন তপনের সভায় তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র ঘোষণা করেন, জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে দলের প্রতীক না পেয়ে যে ১৬ নির্দল গোঁজ প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, তাদের বহিষ্কার করা হল।
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় প্রচারে অশোক ভট্টাচার্য।—নিজস্ব চিত্র।
মুকুল রায়কে দিয়েই এলাকাতে বৈঠক করিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে তৃণমূল। রবিবার উত্তর দিনাজপুরে করণদিঘির সাবধান এলাকাতে জনসভায় এমনটাই দাবি করেন সিপিএম-এর রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব। রবিবার বিকেলে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর স্টেডিয়ামের সভায় সিপিএমের রাজ্য নেতা গৌতম দেব ভাষণে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও ২ বছর ৬ মাস রাজ্যে ক্ষমতায় আছেন। আমরা চাই, এই সময় ভাল কাজ করুন। তা না করে নারায়ণ ও মানবেশকে জেলে পুরছেন। আপনি ঢোকান, আমরা বের করতে থাকি।”
এ দিন বিকেলে ইসলামপুরের মাটিকুন্ডা এলাকাতে এক জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তৃণমূল নেতা মুকুল রায় জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে ৭ জন খুন হয়েছেন তাদের মধ্যে ৬ জনই তাদের সমর্থক। কাজেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস তারা করছেন না। এলাকার সভায় উপস্থিত ছিলেন এক প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায়, সিপিএম এর উত্তর দিনাজপুরের জেলা সম্পাদক বীরেশ্বর লাহিড়িরা।
হরিরামপুরের গোকর্ণের সভায় অধীরবাবু অভিযোগ করেন, রাজ্যে পরিবর্তন হল কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে। মানুষ ভাবল বাম আমলের পুরনো দিনের অবসান হল। কংগ্রেসকে তারা সরাতে লেগে পড়েছে। তাঁর ক্ষোভ, “ঘরের মেয়ে বউয়েরা ধর্ষিতা হচ্ছেন, খুন হচ্ছেন। প্রতিবাদ করে বিচার চাইলে মাওবাদী তকমা দেওয়া হচ্ছে। বোতলে রং পাল্টেছে, মদ পাল্টায়নি।” আলিপুরদুয়ার জংশন দক্ষিণ চেচাখাতা এলাকায় আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়কে ক্ষমতালোভী বলে আক্রমণ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায়। আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “আমাকে মানুষ জিতিয়েন। তাঁরাই এর বিচার করবেন।” ২০০৮ সালে নির্বাচনে মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। ২টি জেলা পরিষদ দখলে রাখলে পারলেও সেখানেই থেমে যেতে হয়েছিল তৃণমূলকে। এ বার পরিস্থিতি অন্য। রাজ্যে তাদের সরকার মানুষের উন্নয়নে সচেষ্ট এ কথা তুলে ধরে বাসিন্দাদের এ বার তাদের সমর্থনের আহ্বান জানালেন শিল্পমন্ত্রী তথা রাজ্য তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন ডাবগ্রাম-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সমরনগর এনএফ স্কুলের মাঠে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে পরিবর্তনের ডাকে মানুষ আগেই সাড়া দিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তরবঙ্গেও সাড়া মিলবে বলে আমরা আশাবাদী। অনুন্নয়নের যারা পুরোধা ২০০৮ সালে তাদেরই মানুষ সমর্থন করেছে। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের কথা মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না। বিধানসভা ভোটে মানুষ দু’হাত ভরে ভোট দিয়েছে। এ বার সুযোগ এসেছে তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দিয়ে উন্নয়নকে এগিয়ে দিন।” তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী নমিতা রায়, হরিনারায়ণ রায়, দোলন বালা মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী উপেন্দ্রনাথ রায় এবং জেলা পরিষদের আসনে এলাকার প্রার্থী মনিষা রায়ের সমর্থনে এ দিন নির্বাচনী সভায় তিনি যোগ দেন। এরপর ফুলবাড়ি-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শান্তিপাড়ায় নির্বাচনী সভায় অংশ নেন। পার্থবাবুর দাবি, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর শান্তি ফিরেছে। জঙ্গলমহলে পরিস্থিতি এখন শান্ত, গণতন্ত্র, মূল্যবোধ বেড়েছে। তারা আগেই নির্বাচন চেয়েছিলেন বিরোধীরা তা না চেয়ে নানা কারণে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে। তারা অপ্রচার করছেন রাজ্যে নিরাপত্তা নেই বলে সংবাদমাধ্যমের একাংশ তা তুলে ধরছে। তিনি বলেন, “৩৪ বছরে বাম জমানায় উত্তরবঙ্গে শিল্প নেই, স্বাস্থ্য নেই। আর কংগ্রেস তাদের ধোঁয়া দিয়ে এসেছে। তাদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ চা বাগান ঘুরে দেখে গিয়েছে। পরিস্থিতি বদলায়নি। আমরা ক্ষমতায় চা বাগানের শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাড়িয়েছি।”ভোটের প্রচারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বিধানসভা এলাকা চষে ফেললেন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। রবিবার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি জেলা পরিষদ প্রার্থী জানকী রায়ের সমর্থনে হাঁটুজল উপেক্ষা করে প্রচার করেন অশোকবাবু। তিনি জটিয়াকালি থেকে মিছিল করে ফুলবাড়ি, ধনতলা এলাকা ঘোরেন। তাঁদের সঙ্গী হন প্রায় হাজার খানেক কর্মী, সমর্থক। প্রচারে সর্বত্র দলীয় সমর্থকদের অশোকবাবু সংযত থাকার বার্তা দেন। তিনি বলেন,“তৃণমূল নেতারা দক্ষিণবঙ্গে সন্ত্রাস সেরে উত্তরবঙ্গে আসছেন। আমরা আশঙ্কা করছি এখানেই গোলমাল হতে পারে। তবে তা হলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিরোধ করব।” এদিন উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার কাঁচাকলিতেও প্রচার করে অশোকবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.