|
|
|
|
উত্তরের চিঠি
|
আমরাই অরণ্য ধ্বংস করে চলেছি |
প্রতি বছর সরকারি-বেসরকারি ভাবে আমরা বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করছি। অরণ্য সপ্তাহ পালন করি মন্ত্রী, আমলাদের দিয়ে ক’টা গাছ লাগিয়ে। বহু টাকায় ঘটা করে অনুষ্ঠান করছি। রং-বেরঙের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপভোগ্য করে তুলছি বড় হলঘর। লিফলেট, প্ল্যাকার্ডে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। নেতা-আমলার মূল্যবান ভাষণ শুনছি। এমন সব অনুষ্ঠান সত্যিই খুব প্রশংসনীয়। অথচ অনেকের অজান্তে, বিদগ্ধজনদের দায়িত্বভার থাকা সত্ত্বেও, নেতা, মন্ত্রী, আমলাদের যোগসাজশে কিছু চোরাকারবারি জঙ্গল কেটে কাঠ পাচারে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন। গভীর জঙ্গলের কাঠ কেটে ভেতর ভেতর জঙ্গল সাফ করে দেওয়া হচ্ছে বাইরের আবরণটা ঠিক রেখে। তাই ডুয়ার্স বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জাতীয় সড়কের পাশের গহন অরণ্য আর মন কাড়ে না আগের মতো। কাঠের আসবাবপত্রের ব্যবসায়ীরা অনেকেই জঙ্গলের অবদানে বড়লোক হয়েছেন। তাদের বানানো আসবাবপত্র পাচার হচ্ছে কলকাতা ও অন্য বিভিন্ন শহরে। এ ভাবেই জঙ্গলের লক্ষ লক্ষ গাছ কাটা চলছে বছরের পর বছর ধরে। দুই তৃতীয়াংশ জঙ্গল শেষ হয়ে যাবার পর ইদানীং চেতনা বেড়েছে, চোরাই কাঠ পাচার ব্যবসাটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। |
|
আলিপুরদুয়ার থেকে জয়ন্তী বা রাজাভাতখাওয়া যাওয়ার পথে গভীর জঙ্গলের সৌন্দর্য আর নেই। অতীতের সেই সৌন্দর্যের ঠিকানা কোনও পর্যটক খুঁজেও পাবেন না। জঙ্গলের নিজস্ব একটা ডাক ছিল। গভীর অরণ্যের সেই নির্জন পথে যেতে যেতে গা-হিম হয়ে যেত। দিনের বেলাতেই শোনা যেত ঝিঝি পোকার ডাক। দাবানল ছিল। জয়ন্তী পাহাড়ের সেই দাবানল বহু দুর থেকে দেখে চোখ যেন মুগ্ধ হয়ে যেত। জঙ্গলে পাখির ডাক শোনা, হাতি, বাইসনের দেখা মেলা পুণ্যকর্মেই এখন সম্ভব। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, যে প্রকল্পে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়, সেখানে এখন ক’টা বাঘ আছে বলা মুশকিল। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে সরকারি কোটি কোটি টাকা ব্যয় হবে, পৃথিবীর মানচিত্রে এর গুরুত্ব তুলে ধরা হবে, কিন্তু বিভিন্ন প্রজাতির বাঘ আর হাতি ক’টা খুঁজে পাওয়া যাবে, সে প্রশ্ন থেকে যায়। কত বন্যপ্রণী আমরা মেরে ফেলছি, মূল্যবান দাঁতের লোভে কত হাতি মেরেছি, খাদ্যাভাবে কত প্রাণীর অবলুপ্তি ঘটছে, তার হিসেবে আমাদের মাথাব্যথা নেই। শহরের অনেক স্থানেই গাছ নেই, নেই বিশুদ্ধ হাওয়া। প্রশস্ত রাস্তা নেই। পরিচ্ছন্নতা নেই। নোংরা রাস্তার দিয়ে আমরা হেঁটে চলেছি মুখে রুমাল চাপা দিয়ে। হাজার হাজার যান, কারখানার হাওয়া বাতাসকে করে তুলছে কলুষিত। গাছ কেটে নগর-অট্টালিকা গড়ে বাতাসে অক্সিজেনের অভাব ঘটাচ্ছি আর বাড়িয়ে চলেছি কার্বন ডাই অক্সাইডের ভাণ্ডার। |
জ্যোতির্ময় রায়, নিউ আলিপুরদুয়ার।
|
সোনাপুর স্বাস্থ্যভবন |
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনে উদাসীনতা, রক্ষণাবেক্ষণে দায়সারা মনোভাবে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর মহকুমার চোপড়া ব্লকের সোনাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চলে যায় দুষ্কৃতীদের দখলে। চুরি হয় ঘরের জিনিসপত্র। এর ফলে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়। দুর্ভোগে পড়েন এলাকার বেশ কয়েক হাজার বাসিন্দা। সম্প্রতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বড় রকমের চুরি হয়। দুর্বৃত্তরা দরজা, জানালার গ্রিল, কাঠ নিয়ে পালিয়েছে। এ ঘটনা এখানে নিত্যনৈমিত্তিক। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এই দুরবস্থার জন্য এলাকার মানুষের অসহযোগিতাকেই পুরোপুরি দায়ী করেন। প্রসঙ্গত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নির্ভরশীল সোনাপুর, চোপড়া, প্রেমচাঁদগাছ গ্রাম। এমনকী প্রতিবেশী রাজ্য বিহার থেকেও বহু লোক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। অনেকেরই অভিযোগ, বহির্বিভাগ ছাড়া চিকিৎসার বিভাগ নেই। এক জন অ্যালোপ্যাথি ও এক হোমিওপ্যাথি ডাক্তার রয়েছেন এখানে। নির্দিষ্ট সময়ে তাঁদের পাওয়া গেলেও রাতবিরেতে তাঁদের পাওয়া যায় না। চিকিৎসা পেতে ছুটতে হয় ৩২ কিমি দূরে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে। পরিস্থিতি আরও জটিল হলে ছুটতে হয় আরও দূরে ৫০ কিমি দূরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসাপাতালে। বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ঘরের অবস্থা অত্যন্ত বেহাল, জলের সুব্যবস্থা নেই। স্থানীয় পঞ্চায়েত বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে কোনও কাজ হয় না। সোনাপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জানালেন, স্বাস্থ্য দফতর থেকে শুরু করে প্রশাসনের অনেক স্তরে আবেদন করা হয়েছে। কোনও সুরাহা করা হয়নি। চোপড়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির দুরবস্থার জন্য দায়ী করেছেন এলাকার বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবকে। তাঁর দাবি, সরকারি ভবন বলেই চলে বেশি করে অপব্যবহার। সন্ধ্যা হলেও বসে জুয়ার আড্ডা। চুরি হয়ে যায় আসবাবপত্র। এলাকাবাসী সচেতন না হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উন্নতি সম্ভব নয়। ওঁর কথার সূত্র ধরে বলা যায়, এখনও যা চিকিৎসার সুযোগ মিলছে, এলাকাবাসীদের উদাসীনতায় ভবিষ্যতে তাও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আমরা কি প্রতিবাদ ভুলে সব কিছু মেনে নেব? |
হৈমন্তী ভট্টাচার্য, জলপাইগুড়ি।
|
কৃষিভিত্তিক শিল্প জরুরি |
দক্ষিণ দিনাজপুর এক কৃষিভিত্তিক জেলা। আশি শতাংশ মানুষই কৃষির সঙ্গে যুক্ত। গঙ্গারামপুর সাবডিভিশন ও বালুরঘাট সাবডিভিশনে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের দাবি অনেক দিনের। আজও এ দাবি পূরণ হয়নি। দক্ষিণ দিনাজপুর কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের আদর্শ ক্ষেত্র। অনুকূল পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে এখানে শিল্প স্থাপন জরুরি। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, কুমারগঞ্জ, হরিরামপুর, কুশুমণ্ডি ও তপনে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের রসদের কোনও অভাব নেই। এই জেলাতে ওই শিল্প স্থাপনের জন্য বারবার কথা উঠেছে। অথচ উদ্যোগে খামতি রয়েছে যথেষ্টই। কৃষিভিত্তিক শিল্প হলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ৮টি ব্লকে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বাড়তে পারে। সার্বিক স্বার্থে জেলার মানুষ চাইছেন সরকারি উদ্যোগ। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারংবার উত্তরবঙ্গে আসছেন। অথচ দক্ষিণ দিনাজপুরে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের কথা একবারও বলেননি। দক্ষিণ দিনাজপুরের অন্যতম ফসল হল ধান, পাট ও আলু। প্ল্যাস্টিকের উপর সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তাই সারা দেশেই পাটজাত সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। এই জেলার চাষিরা ধান ও পাটের দাম পাচ্ছেন না। প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ। পাটজাত সামগ্রীর জন্য বালুরঘাট, গঙ্গারামপুরে কারখানা তৈরি করা প্রয়োজন। খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের আদর্শ ক্ষেত্র হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ দিনাজপুর বঞ্চিত। এখানে শিল্প হলে চাষিরা উপকৃত হবেন। সাংসদ, থেকে পুর চেয়ারম্যান জেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ার ব্যাপারে অনেক আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু সকারি পর্যায়ে কাজই হয়নি। জেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্পের জন্য মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। |
জয়দীপ গুহ, বালুরঘাট। |
|
|
|
|
|