আজ নির্বাচন: ভোট-হিংসার শিকার মহিলা-বালিকাও
মুর্শিদাবাদে নিহত তিন, হাঙ্গামায় তপ্ত মালদহও
ক্তপাত, হানাহানি অব্যাহত মুর্শিদাবাদ, মালদহে। মুর্শিদাবাদে শনিবার দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। রবিবার মারা গিয়েছেন আরও তিন জন। রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত মালদহও। এই অশান্তিকে সঙ্গী করেই আজ, সোমবার নদিয়া-বীরভূমের সঙ্গে চতুর্থ দফার পঞ্চায়েত ভোটে যাচ্ছে ওই দুই জেলা।
রবিবার মুর্শিদাবাদে বোমার আঘাতে যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা সকলেই তাদের কর্মী বলে কংগ্রেসের দাবি। রেজিনগরের ঝিঁকড়ায় সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থীর স্বামীকে লক্ষ করে বোমা-গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তিনি ও তাঁর এক সঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি।
মালদহের পঞ্চানন্দপুরে তৃণমূল প্রার্থীর দিদি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এখানে অভিযোগের তির কংগ্রেসের দিকে। ওই জেলারই রতুয়ায় এক কংগ্রেস প্রার্থীর বাড়িতে বোমা ফেটে অন্তত সাত জন দলীয় কর্মী জখম হয়েছেন। কোচবিহারে এ দিন রাতে তাঁদের এক কর্মী খুন হয়েছেন বলে দাবি করেছে তৃণমূল।
শনিবারই আধা সামরিক বাহিনী মুর্শিদাবাদে পৌঁছেছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দাবি, “কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। চেষ্টা হচ্ছে সন্ত্রাস ছড়ানোর। আমরা বারবার প্রশাসনকে সতর্ক করেছি। তারা কিছু না-করলে আমরা কী করতে পারি?”
২০০৮-এ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে ভোটের দিন মারা গিয়েছিলেন ১৮ জন। ডোমকল মহকুমাতেই ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ বার ভোটের মুখে ডোমকল শান্ত থাকলেও বেলডাঙা ১, ২ ব্লক ও ভরতপুরে অশান্তি ছড়িয়েছে। ভরতপুরে দুষ্কৃতীদের বোমায় মৃত্যু হয়েছে হাসানুর জামান (২৬) নামে সাহাবাজপুরের এক কংগ্রেস কর্মীর। জখম হন মানোয়ার হোসেন নামে এক যুবক। হাসানুরের মামা নজরুল হুদা কংগ্রেসের টিকিটে ভরতপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে দাঁড়িয়েছেন। ভরতপুর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল ও সিপিএমের লোকেরা আমাদের সক্রিয় কর্মীকে খুন করেছে।” অন্য দিকে ভরতপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বক্তব্য, “কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন ওই যুবক।” হাসানুরের মৃত্যুর খবর চাউর হতেই কংগ্রেস কর্মীরা সকাল সওয়া আটটা থেকে ঘণ্টাখানেক ভরতপুর থানার সামনে সালার-কান্দি রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন।
এ দিন ভোরে বোমার ঘায়ে মারা গিয়েছেন বেলডাঙার কাপাসডাঙা গ্রামের নুরবক্স শেখ (৪০) ও হায়াৎ আলি শেখ (৩৫)। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বোমা বানাতে গিয়েই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার জনকে আটক করা হয়েছে।” তবে নিহতদের পরিবার ও কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূল ও সিপিএমের দুষ্কৃতীরাই তাদের খুন করেছে। “পরিকল্পিত ভাবেই কংগ্রেসের ওই দুই কর্মীকে বোমা ছুড়ে খুন করা হয়েছে।” মন্তব্য অধীরবাবুর। নুরবক্সের স্ত্রী মানোয়ারা খাতুনের কথায়, “ভোরে উনি বাড়ির পাশের মাচায় বসেছিলেন। বোমা ছুড়ে ওঁকে মারা হয়েছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি অবশ্য বলেন, “এর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই।” সিপিএমও অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জোড়া মৃত্যুর জেরে এ দিন এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশকে ঘিরে জনতা বিক্ষোভ দেখায়। গ্রামবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালায়। ফাটায় কাঁদানে গ্যাসের শেল। জনতা পাশের গ্রাম বেগুনবাড়িতে গাছের গুঁড়ি ফেলে পুলিশের গাড়ি আটকায়। বেলডাঙা ও রেজিনগরের কংগ্রেস বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরী ও সফিউজ্জামান পৌঁছলে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ চলে।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কংগ্রেস প্রার্থী শাহনাজ বেগমের উপরেও হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রেজিনগরে সিপিএম প্রার্থী তারাবন বিবির স্বামী শাহজাহানকে আক্রমণের ঘটনায় দলের রেজিনগর লোকাল কমিটির সম্পাদক বদরুদ্দিন শেখ তৃণমূলকেই দায়ী করে বলেছেন, “ওদের দুষ্কৃতীরা আমাদের প্রার্থীর স্বামীর উপরে গুলি চালিয়েছে।” হাসপাতালে স্বামীর বেডের পাশে বসে তারাবন বিবি বলেন, “আমাদের ভোটারদের ভয় দেখাতে চাইছে তৃণমূল।” যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলির দাবি, “সিপিএম নিজেই এই কাণ্ড ঘটিয়ে তৃণমূলের নাম জড়াচ্ছে।”
এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে মুর্শিদাবাদে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল শনিবার। সে দিন দুপুরে দুপুরে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের বিধান কলোনির সুভাষ সরকারকে (৩৮) ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন করা হয়। সুভাষবাবু কংগ্রেস কর্মী। বেলডাঙার বাসিন্দা কংগ্রেসেরই সাদ্দাম শেখ (১৭) শুক্রবার বোমার আঘাতে আহত হন। শনিবার তিনি মারা যান। ফলে গত দু’দিনে জেলায় রাজনৈতিক খুনের সংখ্যা পাঁচ।
গত বার মালদহে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনে কেউ মারা না-গেলেও তার আগের দিন এক জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ বার ভোট ঘোষণা হওয়া ইস্তক জেলায় সন্ত্রাসের নানা অভিযোগ। খুন হয়েছেন দু’জন সিপিএম কর্মী, বিজেপি-র পঞ্চায়েত সমিতির এক প্রার্থী ও কংগ্রেসের এক জন। জখম অন্তত একশো। পঞ্চানন্দপুরে এ দিন তৃণমূল প্রার্থী রেজিনা বিবির দিদি জেরিনা বিবিকে গুলি করার ক্ষেত্রে যেমন কংগ্রেসের দিকে আঙুল উঠেছে, তেমনই ইংরেজবাজারের বকুলনগর কামাত গ্রামে তৃণমূলের হামলায় চার সিপিএম কর্মী জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ।
কোচবিহারে ভোট পঞ্চম দফায় ২৫ জুলাই। এই দিন সেখানকার সিতাইয়ে তৃণমূলের শামসুল হককে (৪৫) খুন করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী সভা শেষে বাড়ি ফেরার সময়ে দুষ্কৃতীরা তাঁকে কুড়ুল দিয়ে আঘাত করে। তাঁর কয়েক জন সঙ্গী জখম হয়েছেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করেছেন দলের জেলা সভাপতি উদয়ন গুহ। সোমবার এই জেলার মাথাভাঙায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী জনসভা রয়েছে।
এ দিকে ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগে পুলিশ শনিবার রাতে নদিয়ায় সিপিএমের এক পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীকে গ্রেফতার করেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.