বর্ষার তালভঙ্গে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি-ঘাটতি, চাষিরা চিন্তায়
ময় মেনে আবির্ভাব এবং শুরুতে ভাল বৃষ্টি দিয়ে আশা জাগিয়েছিল বর্ষা। কিন্তু ভরা মরসুমে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের সঙ্গে বর্ষণের দড়ি টানাটানির খেলায় বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে বাংলা, বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গ। জুনের শেষে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিক গড়ের থেকে দু’শতাংশ বেশি। আর জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে দেখা যাচ্ছে, তা স্বাভাবিকের থেকে ২৯ শতাংশ কম!
জুলাইয়ে বর্ষা স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলায় দক্ষিণবঙ্গের ১১টি জেলার মধ্যে ন’টিতেই বৃষ্টি-ঘাটতি চলছে। বীজতলা তৈরি হয়ে গেলেও সেখান থেকে মাঠে ধানচারা রোয়ার জন্য আরও বৃষ্টি দরকার বলে জানাচ্ছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। ধান রোয়ার ব্যস্ততা যখন তুঙ্গে থাকার কথা, সেই সময়েই বৃষ্টির অভাব চিন্তায় ফেলেছে কৃষকদের।
রাজ্যের কৃষিসচিব সুব্রত বিশ্বাস রবিবার বলেন, “বৃষ্টির ঘাটতি ধানচাষে প্রভাব ফেলবে কি না, এখনই তা বলা সম্ভব নয়।” তবে কৃষি দফতরের কিছু কর্তার আশ্বাস, জুনে অধিকাংশ বীজতলাই তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই জুলাইয়ে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলেও ধান উৎপাদনে তার প্রভাব তেমন পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এক কৃষিকর্তার মন্তব্য, “অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমন চাষের সময়সীমা। তিন সপ্তাহ সময় আছে। শনিবার থেকে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত ঘাটতি এতটা থাকবে না বলেই আশা করছি।”
রাজ্যে বর্ষা এ বার ঠিক সময়েই এসেছে। জুনে গত কয়েক বছরের তুলনায় ভাল বৃষ্টিও হয়েছে সারা বাংলায়। কিন্তু জুলাইয়ে উত্তর ভারত প্রায় পুরো বৃষ্টিটাই টেনে নেওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের ১১টি জেলার মধ্যে ন’টিতে কোথাও বৃষ্টির ঘাটতি ৪২ শতাংশ, কোথাও বা ৩৫। গত বছর জুনে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার গড় ঘাটতি ছিল ৪৩ শতাংশ। সে-বার জুনে বৃষ্টি কম হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের অনেক জায়গায় চাষিরা ধানের বীজতলা তৈরিই করতে পারেননি। তবে বহু দিন পরে মৌসুমি বায়ু এ বার জুনে দক্ষিণবঙ্গে স্বাভাবিক বৃষ্টি নামিয়েছিল। কিন্তু জুলাইয়ে তার ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতার অভাব ধানচাষিদের চিন্তায় ফেলেছে।

শহরে হঠাৎ ঝিরঝিরে বৃষ্টি। রবিবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের ন’টি জেলায়। তার মধ্যে প্রথম তিনটি জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর এবং বীরভূমে ঘাটতির পরিমাণ যথাক্রমে ৪২, ৪০ এবং ৩৯ শতাংশ। মুর্শিদাবাদেও ৩৯ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। এই অবস্থায় জোরদার বর্ষণই পরিস্থিতিকে অনুকূলে আনতে পারে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
কিন্তু শ্রাবণের অঝোর বৃষ্টি কোথায়? কবে তার দেখা মিলবে?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের বক্তব্য, দক্ষিণবঙ্গের কোনও কোনও জেলায় বৃষ্টি-ঘাটতি ৪০ শতাংশ বা তার বেশি হয়ে গিয়েছে ঠিকই।
কিন্তু আপাতত সেই ঘাটতি মেটার পরিস্থিতি নেই। বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হলেও আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির আশা দেখা যাচ্ছে না। গোকুলবাবু রবিবার বলেন, “নিম্নচাপটি এ দিন ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছে। সেটি ওড়িশার দিকেই সরে যাবে। ফলে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।”
দারুণ শুরু করেও বাংলায় বর্ষা হঠাৎ পিছিয়ে পড়ছে কেন?
আবহবিজ্ঞানীরা জানান, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা মূলত নির্ভর করে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ ও শক্তিশালী মৌসুমি অক্ষরেখার উপরে। এ বছর জুনের মাঝামাঝি থেকে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সে-ভাবে তৈরি হচ্ছে না। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির উপরে মৌসুমি অক্ষরেখাও স্থিতিশীল ছিল না। তাই বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এক আবহবিদের কথায়, “শুধু বৃষ্টি-ঘাটতিই নয়, বর্ষার খামখেয়ালিপনায় অস্বস্তিকর আবহাওয়াও হাজির হয়েছে সারা দক্ষিণবঙ্গে।” উত্তর ও দক্ষিণে ঠাঁইবদলের সময় মৌসুমি অক্ষরেখা মাঝেমধ্যে দু’-এক দিনের জন্য দক্ষিণবঙ্গের উপরে থিতু হচ্ছে। তার জেরে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকছে পরিমণ্ডলে। এর ফলেই কোথাও কোথাও হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছে। তাতে ঘাটতি মেটার লক্ষণ নেই। বরং দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই দাপট বেড়ে চলেছে আর্দ্রতার। এ দিন কলকাতায় সর্বাধিক আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ। এতেই বাড়ছে অস্বস্তি।
দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টিভাগ্যে মন্দা চললেও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে বর্ষা বেশ প্রসন্ন। আগাম হাজির হয়ে উত্তরাখণ্ড, হিমাচলের মতো রাজ্যে মহাবিপর্যয় ঘটিয়েছে সে। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, ১ জুন থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত রাজস্থান, পঞ্জাব, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা অস্বাভাবিক। বর্ষা ওই সব অঞ্চলে আগেভাগে হাজির হওয়ায় বাংলায় বর্ষণে টান পড়তে পারে বলে তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। আবহবিদদের ব্যাখ্যা, বর্ষা নিয়ে বঙ্গোপসাগর ও আরবসাগরে এক অদৃশ্য দড়ি টানাটানির খেলা চলে। বায়ুর টান যে-দিকে বেশি থাকে, বর্ষার জোর বাড়ে সেখানেই। এ বছর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ায় আরবসাগর এবং সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম ভারতে বর্ষা তীব্রতর হয়েছে।
মৌসুমি বায়ুর খেয়ালিপনায় বাংলাকে কতটা ভুগতে হয়, আবহবিদ থেকে চাষি, সকলের চিন্তা সেটাই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.