রাজ্য পুলিশ দিয়েই শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট করানো যেত, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দরকার ছিল না বসিরহাটে জখম দলীয় কর্মী-সমর্থকদের দেখতে এসে রবিবার এমনই মন্তব্য করলেন খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণূমল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ঘটনাচক্রে এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন, রাজ্য পুলিশ দিয়ে এক দফায় ভোট করালে অনেক নির্বিঘ্নে ভোটপর্ব মিটত।
শনিবার, তৃতীয় দফা ভোটের পর দিন বসিরহাট ১ ব্লকের গাছা-আখারপুর পঞ্চায়েতের পাইকাড়ডাঙা গ্রামের তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী বাকি সর্দার, ইলিয়াস সর্দার এবং বাবু গাজির উপরে হামলা হয়। তিন জনকেই ভর্তি করা হয় বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে। ওই ঘটনায় অভিযোগর তির কংগ্রেস-সিপিএমের দিকে। রবিবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ তৃণমূলের রাজ্য পঞ্চায়েত সেলের আহ্বায়ক নারায়ণ গোস্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। তিনি বলেন, “পাইকারডাঙায় বাড়ি বাড়ি ঢুকে বোমা-গুলি ছুড়ে আমাদের সমর্থকদের কোপানো হয়েছে। তৃণমূলের মিছিলে যাওয়ার অপরাধে হিঙ্গলগঞ্জের বাঁকড়া গ্রামে স্কুলছাত্র সাফিউল্লা সর্দারের দাঁত উপড়ে যায় মারধরে। এই হাসপাতালে ভর্তি ১৯ জনের কারও হাত-পা ভাঙা। কারও মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে।” খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, আমাদের পুলিশ দিয়ে আরও ভাল ভাবে ভোট করা যেত। অথচ তা না করে প্যারামিলিটারি এনে কোনও লাভ হল না। উল্টে ওরাই বসিরহাট, বাগদা, বারাসত, হাবরা, জয়নগরে বুথে বুথে তাণ্ডব চালিয়েছে।” বসিরহাটের লক্ষ্মণকাটিতে তৃণমূল প্রার্থী ইলিয়াস সর্দারকে মারধর করায় তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, “সিপিএম এবং কংগ্রেস যে ভাবে তৃণমূলকে মারার জন্য একে অন্যকে এগিয়ে দিচ্ছে, তা নজিরবিহীন ঘটনা। আসলে ওদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়ায় এমন ভয়ঙ্কর তাণ্ডব শুরু করেছে।” দলের কর্মীদের তৃণমূল নেতার পরামর্শ, “মারের বদলা মার নয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।” |
হিঙ্গলগঞ্জের সান্ডেলেরবিল পঞ্চায়েতের বাঁকড়া গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন মন্ত্রী।
জ্যোতিপ্রিয়বাবুর তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগ মানতে চায়নি কংগ্রেস ও সিপিএম। উল্টে, সন্ত্রাসের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল রাজ্যের শাসক দলের দিকেই তুলেছে তারা। কংগ্রেস নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বসিরহাট মহকুমা জুড়ে সন্ত্রাস করছে তৃণমূল। কেবলমাত্র কংগ্রেস করার অপরাধে মারধর, ভাঙচুর চলছে।” সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহার বক্তব্য, “তৃণমূলের তাণ্ডবে মানুষ দিশাহারা। অবিলম্বে এ সব বন্ধ না হলে রাজ্যের মানুষকে বড় রকম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। আর এর জন্য দায়ী থাকবে তৃণমূল।”
তৃতীয় দফার ভোট শেষ হতেই বসিরহাটে সংঘর্ষের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। ইতিমধ্যেই মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪০ জনকে গোলমাল পাকানোর অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ভোটের দিন হিঙ্গলগঞ্জের বাঁকড়ায় কাঁটারবাড়ি এলাকায় ৬টি বুথে ছাপ্পা ভোট হয়েছে বলে অভিযোগ। পরে সেখানকার প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর করে দু’টি বুথের ব্যালট বাক্স জলে ফেলে দেওয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে বাঁকড়ার ৬টি বুথে ফের নির্বাচন ঘোষণার পর ফের গোলমাল শুরু হয়েছে। হামলার অভিযোগ তুলে সিপিএমের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক বোলতলা বিএসএফ ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তৃণমূলের অনেকে গ্রাম ছেড়েছে।
হাসনাবাদের মাখালগাছা পঞ্চায়েতের হাবাসপুরে সিপিএম এবং কংগ্রেস সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারি, বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
সন্দেশখালি ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি প্রার্থী সুনীল পড়ুয়াকে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে আরজিকর হাসপাতালে। ওই ঘটনার জেরে রবিবার সকাল থেকে বিজেপি পাল্টা সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ।
বসিরহাটের পিঁফায় কংগ্রেসের পার্টি অফিস এবং প্রার্থীর বাড়িতে চড়াও হয়ে তৃণমূলের লোকজন ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ। আহত দুই মহিলা-সহ ৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।
দুপুরের দিকে বাদুড়িয়ার রামচন্দ্রপুরের আটলিয়া গ্রামে সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে মারামারি বাধে। র্যাফ টহল দিচ্ছে সেখানে। সংঘর্ষে জখম ১০ হাসপাতালে ভর্তি।
হাড়োয়ার মোহনপুর গ্রামে তৃণমূলের বুথ এজেন্টের বাড়ি ও দোকানে সিপিএমের লোকজন ব্যাপক বোমাবাজি করেছে বলে অভিযোগ। ওই ব্যক্তিকে আটকে রাখা হয় স্থানীয় একটি ক্লাবঘরে। পুলিশ খবর পেয়ে সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে। |