বাংলা ক্রিকেটের উপর রাগ নয়। অভিমানও নয়। আবেগে বশীভূত হয়েই বাংলার দায়িত্ব ছাড়লেন বিদায়ী কোচ ডব্লিউ ভি রামন।
রবিবার রাতে তাঁকে যখন চেন্নাইয়ে ফোনে ধরা হল, ততক্ষণে ঘরের টিমের কোচিংয়ের প্রস্তুতি চালু করে দিয়েছেন। কিন্তু বিদায়ী সাক্ষাৎকারে কোথাও যেন বাংলা নিয়ে চোরা একটা টান ধরা পড়ল। জিজ্ঞেসও করলেন, “আমার চলে যাওয়া নিয়ে লোকে কী বলছে? কেউ রেগে নেই তো?” সঙ্গে সংযোজন, “বাংলা টিমের কেউ কেউ অনুরোধ করেছিল থেকে যেতে। আমার পক্ষে সিদ্ধান্তটা খুব কঠিন ছিল। এক দিকে ঘরের টিম। যাদের জন্য আমি আজ ডব্লিউ ভি রামন। আর এক দিকে বাংলা। সিএবি। যারা আমার সঙ্গে অসম্ভব ভাল ব্যবহার করেছে।”
তা হলে বাংলা ছাড়লেন কেন? “নিজের রাজ্যের অনুরোধ ঠেলতে পারিনি। আবেগের কাছে হেরে গেলাম। চেয়েছিলাম চুক্তি মতো আরও একটা বছর থেকে যেতে। কিন্তু তামিলনাড়ু থেকে যখন কোচিংয়ের কথা বলল, ফেলতে পারিনি,” বলছিলেন রামন। বাংলায় যাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। কেউ কেউ মনেও করেছেন, ব্যাপারটাকে ঝুলিয়ে রাখছিলেন রামন। “লোকে বলে বলুক। আপনারা বলছেন দেরি করলাম। আমি বলব সিদ্ধান্তটা নেওয়া কঠিন ছিল তাই দেরি হয়েছে।”
তাঁর কোচিংয়ে বিজয় হাজারে ট্রফি পেয়েছে বাংলা। জাতীয় টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু রঞ্জি ট্রফি দিতে পারেননি। কোচ আসে, কোচ যায়। কিন্তু বাংলার রঞ্জি-ভাগ্য বদলায় না। অসুবিধাটা কোথায়? “চার দিনের ফর্ম্যাটে নামলে বাংলার অনেক ব্যাটসম্যানই অসুবিধায় পড়ছে। হ্যাবিটটা দরকার। সেটা না হলে জাতীয় পর্যায়ে ঝামেলা হবেই,” বলছেন রামন। সঙ্গে যোগ করছেন, “অভ্যেসটা করতে হবে স্থানীয় ক্রিকেট থেকে। একেবারে বাংলার হয়ে নামলে হবে না।”
রামনের রঞ্জি জয়ের প্রেসক্রপিশন তা হলে কী? এক) স্থানীয় লিগে সুপার সিক্স সিস্টেম চালু করা। ম্যাচগুলো হোক তিন দিনের। তা হলেই অভ্যেস হয়ে যাবে লম্বা ম্যাচ খেলার। দুই) যত পারো, জুনিয়রদের বাইরে পাঠাও। ওরা ভিন্ন উইকেটে খেলুক, ভিন্ন মানসিকতাও চিনুক। রামনের কথায়, “মুম্বইয়ে যেমন ব্রেড অ্যান্ড বাটার ক্রিকেট, দিল্লিতে দেখবেন আগ্রাসী ক্রিকেট। এগুলোর সামনে দুম করে পড়লে ভুগতে হবেই।” তিন) ব্যাটিং রোগ সারাতে হবে। আড়াইশো তুলতে কেঁপে গেলে রঞ্জি জেতা যাবে না। “ব্যাপারটা অনেকটাই আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় বসছেন, অঙ্কে কাঁচা হয়ে,” বলে দিচ্ছেন তিনি।
কিন্তু আপনি পারলেন না কেন? “কিছুটা পেরেছি। আমার সময়ে সামি-দিন্দা ইন্ডিয়া খেলেছে। অনুষ্টুপ ভারত ‘এ’ খেলেছে। বাংলা ভারতসেরা হয়েছে। একেবারে কিছু পারিনি বোধহয় নয়,” বলতে বলতে হেসে ফেলেন রামন। আসন্ন রঞ্জিতেই তো প্রাক্তন শিষ্যদের বিরুদ্ধে নামতে হচ্ছে। বাংলা বনাম তামিলনাড়ু ম্যাচে। শুনে যেন পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রাখলেন রামন, “ইন্টারেস্টিং ম্যাচ। আমি যা করার করে গিয়েছি। সেই ম্যাচে আমি কিন্তু দেখব আপনাদের নতুন কোচ কতটা বদলেছে টিমকে!” |