টানা ছ’বার যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে রানার্স হওয়ার জ্বালা জুড়ানোর রাস্তা সম্ভবত একটাই। তার পরের মেজর খেতাবটা জেতা। ফিল মিকেলসন ঠিক সেই কাজটাই করে দেখালেন। রবিবার ব্রিটিশ ওপেন গল্ফে চ্যাম্পিয়ন হয়ে।
শেষ দিনের শুরুতেও পিছিয়ে ছিলেন তিনি। এক নম্বরে থাকা লি ওয়েস্টউডের থেকে পাঁচ শটে পিছিয়ে দিনটা শুরু করেন মিকেলসন। কিন্তু শেষ রাউন্ডে ফাইভ আন্ডার ৬৬ স্কোর করে থ্রি আন্ডার পার-এ শেষ করেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে মার্কিন গল্ফার বলেছেন, “আমার জীবনের সেরা রাউন্ডটা খেললাম এখানে।” হেনরিক স্টেনসন দু’নম্বরে, লি ওয়েস্টউড তিনে এবং টাইগার উডস শেষ করলেন ছ’নম্বরে।
অবিশ্বাস্য একটা জয় তুলে নেওয়ার পর মিকেলসন স্বীকার করেছেন, জীবনের সেরা খেতাবটা জিতলেন এ দিন। ৪৩ বছর বয়সি মার্কিন তারকা বলেছেন, “দারুণ একটা দিন গেল। সব কিছু ঠিকঠাক হচ্ছিল আমার। স্বপ্নের গল্ফ খেললাম এ দিন।” দিনের শুরুতে অবশ্য মনে হয়নি মিকেলসন ট্রফিটা নিয়ে যাবেন। কিন্তু ওয়েস্টউড এবং স্কট হঠাৎ করে শেষ দিনে লড়াই থেকে ছিটকে যান। টাইগার উডস সে ভাবে লড়াইয়ে ছিলেন না। মিকেলসন বলছিলেন, “এক মাস আগে আমার মনের ভাবটা কী রকম হয়েছিল আমিই জানি। আর এ দিনেরটা সম্পূর্ণ উল্টো। এ রকম উথাল-পাতাল আবেগের মধ্যে দিয়ে কখনও যাইনি। এক মাস আগে হেরে গিয়েছিলাম ইউএস ওপেনে। যে ধাক্কাটা সামলাতে আমার সময় লেগেছিল। আর এ দিন বোধহয় জীবনের সব থেকে বড় আর কঠিনতম জয়টা পেলাম।” এই নিয়ে পঞ্চম মেজর খেতাব জিতলেন মিকেলসন। |
তবে ভারতের জন্যও যে এ বারের ওপেনটা খুব খারাপ গেল, তা নয়। স্বপ্নপূরণ থেকে দুঃস্বপ্নের আজব নাগোরদোলায় গত তিন দিন সওয়ার ছিলেন তিনিও। তবে মুরফিল্ড গল্ফ কোর্সে ব্রিটিশ ওপেনে শেষটা মাথা উঁচু করেই করলেন শিব কপূর। তৃতীয় রাউন্ডে তিরাশি স্কোর করার চরম হতাশা কাটিয়ে উঠে এ দিন চূড়ান্ত রাউন্ডে চারটি বার্ডি-সহ থামলেন ৭১-এর পার স্কোরে। লিডারবোর্ডে তিয়াত্ত্ররতম হয়ে। শিব নিজেও স্বীকার করেছেন, শেষ রাউন্ডটা তুলনায় ভাল খেলতে পারা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বলেছেন, “যাক বাবা, সব থেকে খারাপ রাউন্ডটা গতকালই খেলে ফেলেছিলাম। আজ যদি মাথা নামিয়ে কোর্স থেকে বেরোতে হত, মোটেই ভাল লাগত না। কিন্তু আজ যে ভাবে খেললাম, অন্তত হাসি মুখে শেষ করতে পেরেছি।”
শিব কপূর অবশ্য এখনও বুঁদ একটাই মুহূর্ত নিয়ে-- প্রথম রাউন্ডের মাঝপথে যখন তাঁর নামটা ছিল লিডারবোর্ডের শীর্ষে। দিল্লির একত্রিশের তরুণের কথায়, “স্বপ্ন দেখতাম আমার নামটাও কখনও লিডারবোর্ডে এক নম্বরে থাকবে। সেই স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেল!” তবে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বোগি আর ডবল বোগির ভূতে পায় শিবকে। বিস্ময়কর ভাবে ফর্ম হারিয়ে বসে দ্বিতীয় রাউন্ডে ৭৭ আর তৃতীয় রাউন্ডে ৮৩ স্কোর করায় তাঁর সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। তবু অভিজ্ঞতাটা বদলাতে চান না শিব। বলেছেন, “এই অভিজ্ঞতা থেকে অনেক শিক্ষা পেলাম। আত্মবিশ্বাস তৈরি হল যে আমিও বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি। সঙ্গে এটাও বুঝলাম, এই পর্যায়ে ধারাবাহিক থাকার জন্য ঠিক আরও কতটা খাটতে হবে।”
|
• ১৯৮০ সালে জুনিয়র ওয়ার্ল্ড গল্ফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে অপেশাদার কেরিয়ারের সর্বপ্রথম খেতাব জেতেন।
• অ্যারিজোনার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে পেশাদার গল্ফের জগতে পা রাখেন ১৯৯২ সালে।
• টাইগার উডসের টানা সাত নম্বর ট্রফি জয় আটকে দেন ২০০০ সালে বুইক ইনভিটেশনাল জিতে।
• ২০০৪ সালে প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট ‘দ্য মাস্টার্স’ জেতেন। এ ছাড়াও ২০০৬ এবং ২০১০ আরও দুটো মাস্টার্স খেতাব নিজের ট্রফি ক্যাবিনেটে তোলেন।
• পাঁচটা মেজরের মধ্যে বাকি দুটো জেতেন ২০০৫ (পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপ) ও ২০১৩ (দ্য ব্রিটিশ ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ)
• দেশের হয়ে ন’বার রাইডার কাপ জিতেছেন। ২০১২ সালে ‘ওয়ার্ল্ড গল্ফ হল অব ফেমে’ তাঁর নাম তোলা হয়।
• গল্ফ জগতে তিনি জনপ্রিয় ‘লেফটি’ নামে, বিখ্যাত বাঁ হাতের সুইংয়ের জন্য। |
|