ডোপিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত, টানা সাত বার ত্যুর দ্য ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন মার্কিন সাইক্লিস্ট লান্স আর্মস্ট্রং দাবি করেছিলেন, ডোপ না করলে ত্যুর দ্য ফ্রান্স জেতা যায় না। রবিবারের একশোতম ত্যুর দ্য ফ্রান্স জয়ী ব্রিটিশ ক্রিস ফ্রুম দাবি করেছিলেন, আর্মস্ট্রং লোক ঠকালেও তিনি কখনও সেটা করবেন না। যে দাবি তোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফ্রুমকে ঘিরেও উঠে পড়েছে ডোপিংয়ের প্রশ্ন।
মাইক্রোস্কোপের নীচে আসছে গত রবিবারের রেসের একটা অংশ মাউন্টেন স্টেজ। প্রভেন্স-এর মঁ ভেঁতু পাহাড় চড়তে গিয়ে ১৯৬৭-এ মারা গিয়েছিলেন আর এক ব্রিটিশ সাইক্লিস্ট টম সিম্পসন। এ বারের রেসে সেই পাহাড়কেই অবিশ্বাস্য ভাবে জয় করেছেন ২৮ বছর বয়সি ফ্রুম। ত্যুর দ্য ফ্রান্স ইতিহাসে এই প্রথম এই কঠিন স্টেজ জিতলেন ব্রিটিশ কেউ। ১,৯১২ মিটার উচ্চতার শৃঙ্গে উঠতে ফ্রুম নিয়েছেন ৫৯ মিনিট, রেসের ইতিহাসে দ্রুততম। |
গোটা রেসেই ফ্রুমের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের প্রশংসার পাশাপাশি কিছুটা অবধারিত ভাবেই চলে আসছে ডোপিংয়ের সন্দেহ। ফ্রান্সের একটি সংবাদপত্রে যেমন লেখা হয়েছে, “গত সপ্তাহে যা যা হয়েছে, তাতে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ থাকছে। ফ্রুম বলছে এটা ওর অসাধারণ অল্টিটিউড ট্রেনিংয়ের ফল। কিন্তু এর আগেও অনেকে এই একই কথা বলে, পরে ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ে খেতাব হারিয়েছে।” ফ্রুম যে টিমের প্রতিনিধিত্ব করেন, সেই টিম স্কাই-এর প্রধান কর্তা ডেভ ব্রেল্সফোর্ড এ সব জল্পনার অবসান ঘটাতে বলে দিচ্ছেন, “একটা দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরপরই আমাকে এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রতি দিন এই এক প্রশ্ন। ফ্রুমের ট্রেনিং আর পারফরম্যান্স-জনিত সব তথ্য, এবং ওর রক্তের রিপোর্ট আমরা স্বাধীন পরীক্ষার জন্য দিতে তৈরি। তাতে যদি প্রমাণ হয় যে ফ্রুম ডোপ করে না।”
তিন সপ্তাহের রেসের শুরু থেকে শেষ যথেষ্ট কর্তৃত্ব নিয়ে এগিয়েছিলেন ফ্রুম। “এই যাত্রাটা আমার জন্য দুর্দান্ত ছিল। প্রতিটা দিন আমার কাছে একটা লড়াইয়ের মতো ছিল,” রবিবার রেস জিতে বলেছেন ফ্রুম। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হলেন কলম্বিয়ার নাইরো কুইন্তানা ও স্পেনের জোয়াকিম রডরিগেজ।
|
শতবর্ষের চক্কর |
• এ বারের ত্যুর দ্য ফ্রান্স টুর্নামেন্টের শততম সংস্করণ। যদিও শুরু হয়েছিল ১৯০৩-এ। কিন্তু দু’টি বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১১ বছর (১৯১৫-’১৮ ও ১৯৪০-’৪৬) বন্ধ ছিল।
• ত্যুর দ্য ফ্রান্স-এর আবির্ভাব ফ্রান্সের একটি ক্রীড়া পত্রিকা ‘ল্যতো’-র প্রচার ও বিক্রি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। ওই সময় দৈনিক ৮০ হাজার বিক্রি হওয়া অন্য একটি ফরাসি ক্রীড়া পত্রিকা ‘লেভেলো’-র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ‘ল্যতো’।
• টুর্নামেন্টের ‘অনার বোর্ড-এ ১৯৯৯-’০৫ সাত বছরের চ্যাম্পিয়নের নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। ওই সাত বারই চ্যাম্পিয়ন হন ডোপ কেলেঙ্কারিতে জড়িত লান্স আর্মস্ট্রং। যাঁর সব খেতাব কেড়ে নেওয়া হয়।
• টুর্নামেন্টে প্রথম বাতিলের ঘটনা দ্বিতীয় বছরেই (১৯০৪)। চ্যাম্পিয়ন মরিস গ্যারিন-সহ ১২ জন সাইক্লিস্ট বাতিল হন, রেসের কিছু কঠিন পথ গাড়ি এবং ট্রেনে চেপে পার হওয়ায়।
• টুর্নামেন্টে প্রথম ডোপ পরীক্ষায় বাতিলের ঘটনা ১৯৮৮-এ। কিন্তু অভিযুক্ত পেদ্রো দেলগাদো-র বাতিলের প্রতিবাদে রেস ধর্মঘট করেন অন্য প্রতিযোগীরা।
• ১৯৫০-এর রেসে ফ্রান্সে এমন ভয়াবহ গরম পড়েছিল যে, অনেক সাইক্লিস্ট রেস চলাকালীন মেডিটেরানিয়ান সমুদ্রে ডুব দেন। তাঁদের সবাই বাতিল হন।
• ১০০ বছরের ত্যুর দ্য ফ্রান্সে প্রতিযোগীদের মৃত্যুর ঘটনা ন’টি। |
|