শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে পুণ্যার্থীর ঢল তারকেশ্বরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
শুরু হয়ে গিয়েছে শ্রাবণী মেলা। আগামী এক মাস ধরে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী তারকেশ্বরে শিবের মাথায় জল ঢালতে আসবেন। এই উপলক্ষে গোটা তারকেশ্বর জুড়ে সাজো সাজো রব পড়ে গিয়েছে।
বর্তমান রাজ্য সরকার তারকেশ্বরকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরার কথা বারে বারেই বলেছে। সে দিকে লক্ষ্য রেখে রাজ্যের পর্যটন দফতর তারকেশ্বর মন্দিরের প্রবেশপথে বৈদ্যপুর চৌমাথায় বিশাল তোরণ তৈরি করেছে। ওই চৌমাথা থেকে মন্দির চত্বর পর্যন্ত সৌন্দর্য্যায়নের জন্য আলো বসানো হয়েছে। তারকেশ্বর পুরসভাও রাস্তার আলোর পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী হ্যালোজেনের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের পথ সুগম করার ব্যপারে বা অন্য পরিষেবার ক্ষেত্রে এখনও তেমন মাথাব্যথা নেই পর্যটন দফতরের।
শ্রাবণী মেলার সময় অসংখ্য মানুষ বৈদ্যবাটি নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে জল তুলে খালি পায়ে হেঁটে তারকেশ্বরে যান। বৈদ্যবাটি চৌমাথা হয়ে দিল্লি রোড এবং দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে সিঙ্গুর, হরিপাল হয়ে তাঁদের যেতে হয়। দীর্ঘ এই পথের অনেকটা অংশই খানাখন্দে ভর্তি। এ নিয়ে জলযাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে বেরিয়ে রেললাইন পেরিয়ে যেতে হয় ভক্তদের। রেল গেট পড়ে থাকলে বহু সময় অপেক্ষা করতে হয়। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে। এই জায়গায় একটি সাবওয়ে করার দাবি দীর্ঘদিনের। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আদৌ ভাবিত নন বলে অভিযোগ। |
বাঁক নিয়ে চলেছেন তীর্থযাত্রীরা।—নিজস্ব চিত্র। |
শ্রাবণী মেলার সময় বিশেষত শনিবার এবং রবিবার বৈদ্যবাটি চৌমাথা থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত রাস্তায় তিল ধারণের জায়গা থাকে না। পুণ্যার্থীদের চাপে সাধারণ মানুষ পথ চলতে সমস্যায় পড়েন। শেওড়াফুলি হাট থেকে মালপত্র অন্যত্র নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়। দিল্লি রোডে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। যানজট সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশকে। এলাকার মানুষের দাবি, বৈদ্যবাটি চৌমাথা থেকে দিল্লি রোড পর্যন্ত পুণ্যার্থীদের জন্য পৃথক একটি রাস্তা অথবা নিদেনপক্ষে ফুটপাথের ব্যবস্থা করা হলে সব পক্ষেরই উপকার হবে। তা ছাড়া, দিল্লি রোড এবং দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের যে অংশ দিয়ে জলযাত্রীরা পার হন, সেখানে সাবওয়ে তৈরি করলে ওই দুই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যানজটের সমস্যাও অনেকটাই মিটবে। বিভিন্ন তীর্থস্থানে সরকারের তরফে পাউচে পানীয় জল দেওয়া হয় পুণ্যার্থীদের। তারকেশ্বরের পথে দীর্ঘ রাস্তায় অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জলসত্রের আয়োজন করে। সরকারের তরফে অবশ্য এমন ব্যবস্থা এখনও চোখে পড়েনি। নিমাইতীর্থ ঘাটের কাছে সরকারি রাত্রিনিবাসেরও দাবি দীর্ঘদিনের।
বৈদ্যবাটি এবং তারকেশ্বর পুরসভা অবশ্য কোমর বেধে নেমেছে পুন্যার্থীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য। বাম আমলে বৈদ্যবাটি এবং তারকেশ্বর দুই জায়গাতেই তীর্থকর নেওয়া হত। তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতা দখলের পর থেকে অবশ্য তা নেওয়া হয় না। বৈদ্যবাটি পুরসভার তরফে নিমাইতীর্থ ঘাটে একাধিক ‘ক্লোজড্ সার্কিট ক্যামেরা’ বসানো হয়েছে। দু’শো স্বেচ্ছাসেবক নামানো হয়েছে। একদিকে তাঁরা যেমন জলযাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর রাখছেন, তেমনি যানবাহন নিয়ন্ত্রণও করছেন। পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ জানালেন, গঙ্গায় একটি স্পিডবোট থাকছে। রাতেও নৌকা থেকে সার্চলাইট ফেলে নজরদারি চলছে। মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে। দু’জায়গায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে।
তারকেশ্বর মন্দিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে জেলা পুলিশের তরফে। সম্প্রতি বোধগয়ায় বিস্ফোরণের পরে নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইছে না পুলিশ। জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মেলা উপলক্ষে পর্যাপ্ত পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা পুলিশও মোতায়েন করা হচ্ছে। মন্দির চত্বরে থাকছে বাড়তি নজরদারি। দুধপুকুরে সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন। থাকছে স্পিডবোট। তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত বলেন, “রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো, পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছি আমরা। রাস্তাঘাট পরিস্কার রাখার উপরে নজর আছে। মেডিক্যাল টিম, অ্যাম্বুলেন্স, দমকল সব কিছুরই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও পুণ্যার্থীদের সাহায্য করছেন।” |