জাতীয় রাজনীতিতে দুই দলের সম্পর্ক সাপে নেউলের মতো। কিন্তু ময়ূরেশ্বরের শোকপুর গ্রামের দাস বাড়িতে? স্বামী-স্ত্রী!
অথচ তাঁদের বাড়ির দেওয়ালে দেখা যায় দু’টি দলেরই প্রতীক চিহ্ন আঁকা লিখন। কংগ্রেসের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য মদন দাসকে দল প্রার্থী করেছে এ বারও। আর তাঁর স্ত্রী সুমিতা দাস গত বারের মতোই বিপুল ভোটে জিততে ফের বিজেপি প্রার্থী হয়ে লড়াই করছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে। দুই ভিন্ন ধারায় বিশ্বাসী হলেও রাজনীতি কখনও ফাটল ধরায়নি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে। নিন্দুকেরা অবশ্য বলছেন, নিজেদের স্বার্থে ওই দম্পতি গিরগিটির মতো রং বদলান। প্রয়োজন পড়লে যে কোনও সময় পাল্টে নেবেন রং!
গত পঞ্চায়েত ভোটে মদনবাবু ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হয়েছিলেন। দীর্ঘ দিন বাম দখলে থাকা পঞ্চায়েত সমিতিতে কর্তত্ব কায়েম করেছিল কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপির মহাজোট। মদনবাবু হন সেই সমিতির মৎস কর্মাধ্যক্ষ। অন্য দিকে, একই সময়ে বিজেপির হয়ে জিতে স্থানীয় বাজিতপুর পঞ্চায়েতের সদস্য হন সুমিতাদেবী। হন পঞ্চায়েতের উপসমিতির সদস্যও।
দু’জনে এ বারও পুরনো আসনেই প্রার্থী রূপে নিজের নিজের দলের হয়েই সামিল হয়েছেন ভোট-যুদ্ধে। বাড়িতে মদনবাবুর খোঁজ করতেই জানা গেল, স্থানীয় এক রোগীকে নিয়ে সাঁইথিয়ায় ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছেন। বাড়ির মেঝেতে তখনও একই সঙ্গে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে স্বামী-স্ত্রীর নকল ব্যালট পেপার। পদ্মফুল প্রতীক চিহ্ন দেওয়া কাগজের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে হাত চিহ্নওয়ালা প্রচারপত্রটিও। গ্রামে ফিরতেই ধরা গেল মদনবাবুকে। আপনি কংগ্রেস প্রার্থী, স্ত্রী প্রার্থী বিজেপির প্রচারে অসুবিধা হচ্ছে না? স্বামীর জবাব, “আমি আমার দলের হয়ে প্রচার করছি। স্ত্রী নিজের দলের। আগেও করেছি, এ বারও করছি। অসুবিধার কী আছে!” তাঁর দাবি, “স্ত্রীর আসনে কংগ্রেস কোনও প্রার্থী দেয়নি। অধিকাংশ গ্রামবাসীই চেয়েছিলেন, আমার স্ত্রী আরও এক বার ভোটে লড়ুন। তাই তিনি নিজের দল বিজেপিরই প্রার্থী হয়েছেন।”
কিন্তু মদনবাবু ঠিক কোন দল, তা নিয়ে কটাক্ষের শেষ নেই বিরোধীদের। গ্রামবাসীকে তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ১৯৯৮ সালে মদনবাবু ছিলেন বিজেপির (গ্রাম সংসদে জয়ী হন)। তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে ভোটে হারেন ২০০৩ সালে (প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন পঞ্চায়েত সমিতিতে)। আর ২০০৮ সালে ফের রং পাল্টে হয়ে যান পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্য। ২০১৩ সালেও। মদনবাবুরই আত্মীয় তথা তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সিপিএমের প্রার্থী তাপস দাসের দাবি, “উনি যে কোন দলের বোঝাই মুশকিল। গিরগিটির মতো রং পাল্টান। ওঁদের মতো রাজনীতির কারবারীদের মানুষ এ বার অন্তত ভাল চোখে দেখছেন না।”
এ দিকে দৃঢ়প্রত্যয়ী সুমিতাদেবীর কিন্তু দাবি, টানা চতুর্থ বারের জন্য এই এলাকায় বিজেপিই জিতবে। তিনি আরও বলছেন, “স্বামীর রাজনৈতিক আদর্শ আলাদা। কিন্তু লোকটা তো সেই একই। তাঁকে এলাকাবাসী কাজের মানুষ হিসেবে দেখেন। আর এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে গ্রামের মানুষ স্বামীর পাশে আমাকেও দেখতে চান।”
নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর জবাব, “আমরা ভিন্ন রাজনীতি করলেও তার প্রভাব সংসারে পড়তে দিই না।” |