প্রধানের নাম কি?
জানি না।
এখন স্থানীয় পঞ্চায়েত চালাচ্ছে কোন দল?
কে জানে।
ভোট সংক্রান্ত প্রশ্ন করলেই বিরক্তি। কেউ মৃদু হেসে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। পঞ্চায়েত ভোটের জবরদস্ত প্রচারে যখন চা-বলয়ে হইচই চলছে, সেই সময়ে এমনই দৃশ্য ডুয়ার্সের বান্দাপানিতে।
আপাদমস্তক ঢাকা চা বাগানে। এক দিকে বান্দাপানি। অন্য দিকে ঢেকলাপাড়া। বারো বছর বন্ধ হয়ে রয়েছে। বান্দাপানি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। বাগান জুড়ে বিষন্ন বাতাস।
দীর্ঘ দিন পরিচর্যাহীন বাগানে যা পাতা হয় তা তুলেই সামান্য আয়। স্থানীয় কয়েকজন মিলে সমবায় গড়ে পাতা তোলেন তাঁরা। পাতা তোলার মজুরি দৈনিক ৪৬ টাকা। তাও সপ্তাহে ৩ বা ৪ দিন। তাই দিয়ে ৬-৭ জনের সংসার চালান ওঁরা। ফলে কখনও অর্ধাহারে কখনও অনাহারে দিন কাটছে ঢেকলাপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের।
তাই হয়তো ভোটের কথায় কেউ উৎসাহিত নন। ঢেকলাপাড়া বাগানের এক শ্রমিক সুরেশ তাঁতি বলেন, “ঢেকলাপাড়া চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়া ইস্তক পরিত্যক্ত আবাসনে রয়েছি। তাই থাকার খরচ বাঁচে। তা ছাড়া কোনও আয় আমাদের নেই। ভোটের কথা ভাবার সময় কোথায়?” বিশ্ব তাঁতির বয়স ৭২ বছর। তিনি অনেকদিন ধরে ভোট দেন না বলে জানালেন। খেরিয়া মুণ্ডার অভিজ্ঞতা অন্যরকম। তিনি জানান, বছর দশেক আগে এক জন প্রধান তাঁদের বাগানে ঘুরে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার পরে বহু বার খেরিয়ারা প্রধানের অফিসে ঘুরেও কোনও সাহায্য পাননি। তাই এখন আর পঞ্চায়েতের কাছে যেতে চান না কেউ। |
বর্তমানে বান্দাপানি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আরএসপির শুক্রা ওঁরাও। তিনি স্বীকার করলেন ভোটে কারও উৎসাহ নেই। তিনি বললেন,“ভোটের জন্য বিশেষ জোরাজুরি ঢেকলাপাড়া, বান্দাপানিতে করে লাভ নেই। বহুদিন ধরে বঞ্চিত থেকে সকলেই হতাশ।”
তা সত্ত্বেও ভোট হবে। এ বার বান্দাপানি পঞ্চায়েতে আসন সংরক্ষণের কারণে মহিলা প্রার্থী দিয়েছেন শুক্রাবাবুরা। তাঁর আশা, তাঁরাই আবার জিতবেন। কিন্তু তার বাইরে বন্ধ বাগান আবার খুলবে কি না তা জানা নেই কারও। শুক্রা বলেন, “সত্যি কথা বলতে কি ভোটের চেয়েও বেশি জরুরি বাগান খোলা। বাম আমল থেকে খুলছে-খুলবে করে বাগান খোলেনি। ঘরে ঘরে পর্যাপ্ত খাবারের অভাব। এখানে জোর গলায় ভোটের প্রচার করা যায়!”
ঢেকলাপাড়া বাগান খুলবে কবে? উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। তিনি বলেন, “আমরা ঢেকলাপাড়া চা বাগানের খোলার ব্যপারে চিন্তা ভাবনা করছি কিন্তু এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়।” জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্রও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। বলছেন, “বিষয়টি হাইকোর্টে রয়েছে। তবে আমরা বাগানের বাসিন্দাদের সাহায্য করতে বিদ্যুৎ, আলো, জল সহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বাকিটা আদালতের রায়ের উপরে নির্ভর করছে।” |