নজরে রাজ্যের কৃষি দফতর
দল আসছে দিল্লি থেকে, বিশেষ
অডিটের মুখে মমতার সরকার
তাঁরই সরকারের খরচ-খরচা নিয়ে এ বার স্পেশ্যাল অডিট!
দু’বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পরে পূর্বতন বাম আমলের ‘দুর্নীতি’ খুঁজতে বিভিন্ন দফতরের কাজকর্ম নিয়ে পরের পর স্পেশ্যাল অডিট করানোর সিদ্ধাম্ত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম জমানার তিন মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র, গৌতম দেব ও কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের দফতরগুলির বিরুদ্ধে নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ এতেই প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করে তা নিয়ে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। কিন্তু এখন তাঁর সরকারের উপরেই সেই স্পেশ্যাল অডিটের খাঁড়া ঝুলছে। অডিট করবে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার, ন’মাস আগে যার সঙ্গ ছেড়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
মহাকরণের খবর: রাজ্য কৃষি দফতরের যাবতীয় কাজকর্ম নিয়ে স্পেশ্যাল অডিটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক। এ জন্য তারা পাঁচ সদস্যের দল পাঠাচ্ছে, নেতৃত্বে থাকছেন মন্ত্রকের হিসাব-পরীক্ষক এস এস সাগর। আগামী ২৯ অগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা দশ দিন অডিট চলবে বলে দিল্লি থেকে মহাকরণে বার্তা এসেছে। গত ১২ জুলাই মন্ত্রকের প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্টস অফিসের পাঠানো ওই চিঠিতে শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই স্পেশ্যাল অডিটের কথা বলা হয়েছে। তাতে রাজ্য প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে।
এবং কেন্দ্রের চিঠি নিয়ে প্রকাশ্যে হেলদোল না-দেখালেও রাজ্যের কৃষি-কর্তাদের একাংশ একান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। দিল্লির অডিট টিম কীসের খোঁজে আসছে, অনেকে তা আঁচ করতে পারছেন না। দফতরের প্রবীণ কর্তাদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, দীর্ঘ চাকরিজীবনে এমন ঘটনা তাঁরা দেখেননি। সাধারণত কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ উঠলে তবেই স্পেশ্যাল অডিট হয়। আবার সাধারণ অডিটে ধরা পড়ে না, এমন বিষয় খতিয়ে দেখতেও স্পেশ্যাল অডিটের রেওয়াজ আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মন্ত্রক ঠিক কী দেখতে আসছে, তা স্পষ্ট নয়। অনেকে আবার চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন। এঁদের মতে, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার ছেড়ে আসা ইস্তক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী একটানা তোপ দেগে চলেছেন। স্পেশ্যাল অডিটের নামে তৃণমূলনেত্রীকে পাল্টা চাপে রাখাই কেন্দ্রের আসল উদ্দেশ্য বলে এই মহলের অনুমান।
তবে সূত্রের ইঙ্গিত, কৃষিক্ষেত্রের নানা প্রকল্পে রাজ্যে ফি বছর যে হাজার-বারোশো কোটি টাকা কেন্দ্রীয় অনুদান আসে, তা কোথায়, কী ভাবে খরচ হয়েছে, খরচের সুফল তৃণমূলস্তরে পৌঁছেছে কি না এগুলোই দিল্লির অডিট-টিম যাচাই করতে চায়। এমনকী, খরচের হিসেবপত্রও তারা তলব করতে পারে বলে মনে করছে দফতরের একাংশ। কৃষি-অধিকর্তার অফিসও দফতরের সমস্ত শাখাকে হিসেবপত্র নিয়ে ‘তৈরি’ থাকতে বলেছে।
বস্তুত রাজ্যে কৃষি-অনুদানের অর্থ যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশাসনেই সংশয় রয়েছে। এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচের অভিযোগও রয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর: গত দু’বছরে কৃষি দফতরের নানা কাজকর্ম নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় কৃষি-সচিব আশিস বহুগুণা সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে আক্ষেপ করেছিলেন, “ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থতার জেরে বাংলার চাষিরা বিপন্ন হয়ে পড়েছেন।” যার প্রতিবাদ করে মুখ্যসচিব কড়া জবাব দিয়েছেন। আবার গত বছর সবুজ বিপ্লব প্রকল্পে পাওয়া ২৬৯ কোটি টাকার পুরোটা খরচ হয়ে গিয়েছে দাবি করে কৃষি দফতর এ বারে তিনশো কোটির যে বরাদ্দ-দাবি পেশ করেছিল, দিল্লি তা ছেঁটে অর্ধেকে নামিয়েছে। মন্ত্রকের অভিযোগ: গত বার সবুজ বিপ্লবের টাকায় রাজ্য সরকার চাষিদের কোদাল, বেলচা-সহ হরেক কৃষি উপকরণ, এমনকী নগদ অর্থও বিলি করেছে, যা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য নয়।
একই ভাবে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশন, রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা, সারে ভর্তুকি, বীজ বণ্টন, কিসান ক্রেডিট কার্ড বিলির মতো বিবিধ প্রকল্পের কাজকর্ম ঘিরে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, মাটি উৎসব, কৃষি মেলা, কৃষকরত্ন পুরস্কারে যে খরচপাতি হয়েছে, তা কেন্দ্রের টাকায় কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হতে পারে। মমতা সরকারের পূর্বতন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিধানসভায় গমবীজ কেলেঙ্কারি-সহ নানা দুর্নীতির কথা কবুল করে জানিয়েছিলেন, অনিয়ম রুখতে তিনি কড়া পদক্ষেপ করেছেন। রাজ্যের বর্তমান কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য মনে করেন না যে, গত দু’বছরে দফতরে কোনও দুর্নীতি হয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, “কেন্দ্রীয় দল আসুক না! আমরা যে কোনও ধরনের অডিটের মুখোমুখি হতে রাজি। চাইলে বাম জমানার দুর্নীতির পাহাড়ও তুলে ধরব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আগের আমলে যা হয়েছে, তার দায় আমরা নিতে পারব না।”
তাঁর দফতরের কর্তারা কী বলেন?
রাজ্যের কৃষি-অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য আপাতদৃষ্টিতে ভাবিত নন। “আমাদের সমস্ত কাজ স্বচ্ছ। ওঁরা যা দেখতে চাইবেন, তা-ই দেখিয়ে দেব।” প্রত্যয়ী মন্তব্য অধিকর্তার। কৃষি-সচিব সুব্রত বিশ্বাসও এর মধ্যে নতুন কিছু দেখছেন না। তাঁর ব্যাখ্যা: “সরকারি নিয়মই হল, টাকা খরচ হলে হিসেব নেওয়া হবে। খবর পেয়েছি, মন্ত্রক সমস্ত রাজ্যে এমন অডিট শুরু করতে চলেছে। আমাদের রাজ্যে দিনক্ষণ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্পেশ্যাল অডিট মানেই অনিয়ম, এটা ভাবা অমূলক।”
পাশাপাশি সচিবের দাবি, কৃষি দফতরের কাজকর্মে আগের তুলনায় অনেক স্বচ্ছতা এসেছে। “দীর্ঘ কয়েক দশক বাদে এ বারই প্রথম খরিফ মরসুমের আগে চাষিদের হাতে বীজ পৌঁছে গিয়েছে। অডিটে নিশ্চয় সে সবও দেখা হবে!” —মন্তব্য সচিবের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.