|
|
|
|
|
|
স্বপ্নময় চক্রবর্তী |
শিল্প মানে গাড়ি জাহাজ ওয়াগন শুধু নয়, তেলেভাজাটাও যে শিল্প, সেটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন বাগবাজারের রামগোপালবাবু। ওঁর নিশ্চয়ই একটা পদবি ছিল, সেটা জানি না। রামগোপাল নামেই তিনি বিখ্যাত ছিলেন। বাগবাজারের মোড়ের বাটার দোকানের উলটো দিকেই ছিল রামগোপালের তেলেভাজার রেস্তরা।ঁ তেলেভাজারও যে রেস্তরাঁ হতে পারে সেটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। শ্বেতপাথরের টেবিল, বেঞ্চি এবং চেয়ার, বসলেই ‘বয়’রা কলাপাতা পেতে দিত টেবিলে। কাচের গেলাসে জল দিয়ে যেত। দেওয়ালে মেনু লাগানো ছিল। রাধাবল্লভি, বেগুনি, আলুর চপ, ফুলুরি পাওয়া যেত সারা বছর। শীতের দিনে ফুলকপির বড়া, গরমের দিনে পটলের দোলমা। পটলের গর্ভে ভরা থাকত বাদাম-নারকোল-কিশমিশ মেশানো আলুর পুর। কলাপাতার পাশে দেওয়া থাকত চাটনি, যা দেখলেই জিভে জল আসত। গরম বেগুনিটা দু’আঙুলে ধরে দাঁতে কামড়ালে, ভেতর থেকে বেরুত সুবাসিত ধোঁয়া।
কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত এক সময় বাগবাজারে ভাড়া থাকতেন। উনি এক জায়গায় লিখেছিলেন, ওই দোকানে ঢুঁ মেরেছেন বহু বার, শুধু তেলেভাজার কারণে নয়, হরু ঠাকুর ভোলা ময়রা থেকে ক্ষীরোদপ্রসাদ-গিরিশ ঘোষদের সঙ্গ পাওয়ার জন্য।
হাতে কম পয়সা থাকা বালকদের কচুরি-রাধাবল্লভি খাওয়ার একটা কৌশল ছিল। একটা একটা করে নিতে হয়, ফলে তরকারিটা বেশি পাওয়া যায়। তরকারি দিলেই
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
কচুরি ছাড়াই শুধু খেয়ে নিতে হয়। তার পর বলতে হয়— একটু তরকারি দেখি...।
ওরা সেটা জানত, বলেই দিত— তরকারি কিন্তু দেড়া দিয়ে দিলাম।
খেয়েদেয়ে পয়সা না দিয়ে পালানোর একটা ঘরানাও গড়ে উঠেছিল। আমার বন্ধু বোঁটকা ছিল এ বিষয়ে ওস্তাদ। ও বসন্ত কেবিন, গোলবাড়ি, দ্বারিক, পুঁটিরামে সাক্সেসফুল। রামগোপাল বড় কঠিন ঠাঁই।
বোঁটকা এক দিন আমায় বলল— চল, রামগোপাল মেরে আসি। তুই বেশ ভাল টাইপের দেখতে, তোকে সন্দেহ করবে না। যখন কাউন্টারে ভিড় দেখব, আমি বেরিয়ে যাব। যদি ধরে, তোকে দেখিয়ে বলব— ও দেবে। তুই হাবলাগোবলা মুখে একটু পরই বেরিয়ে যাবি। ধরলে বলবি কেন, ও দেয়নি বুঝি? তুই আমায় খিস্তি দিয়ে বলবি— তোর দেওয়ার কথা ছিল, দিসনি কেন?
পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢুকলাম। বেগুনি, আলুর চপ, রাধাবল্লভি হল। কাউন্টারে তেমন ভিড় হচ্ছিল না। বোঁটকা কলাপাতার তরকারির ঝোল চাটছিল। একটু চাটনিও রেখে দিয়েছিল। অল্প অল্প করে চাখছিল। দুটো ব্যাপার একসঙ্গে ঘটলে অপারেশনটা শুরু হবে। এক জন শ্যেনদৃষ্টিসম্পন্ন অতীব ধীসম্পন্ন প্রতিভাধর ‘বয়’ ছিল, যে মুহূর্তের মধ্যে হিসেব করে চিল্লিয়ে বলে দেয় কোন টেবিলে কে ক’টা চপ বেগুনি ইত্যাদি কত পয়সার খেয়েছে। সে কিছু ক্ষণ পর পর ভিতরে যায়, এবং ঝুড়ি ভরে গরম তেলেভাজা নিয়ে আসে। ওকে ভিতরে যেতে হবে, এবং একই সঙ্গে কাউন্টারে একাধিক খদ্দেরের ভিড় থাকতে হবে।
সেই সুবর্ণ সময় উপস্থিত হল। বোঁটকা আস্তে করে বেরিয়ে গেল। পিছনে আমিও। কাউন্টার পেরিয়ে দরজার কাছে চলে এসেছি, এমন সময় শুনলাম হেঁড়ে গলায়— এই যে খোকা, পয়সাটা?
বোঁটকাকে কী বলব, ও তত ক্ষণে রাস্তার ও-পারে। আমি আমার পয়সাটা দিতে গেলাম। শুনলাম— বন্ধুরটা কে দেবে? বললাম— ও দেয়নি বুঝি? আমি দিয়ে দিচ্ছি।
রামগোপাল মোটা গোঁফের তলায় সামান্য মুচকি হাসলেন। বললেন— বন্ধুটাকে ডাকো। ও রাস্তার ও-পারে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ভয় পেলাম। কে জানে, মারবে নাকি? বললাম— ওকে কী হবে, আমি দিয়ে দিচ্ছি তো।
উনি বললেন— ওর পয়সা দিতে হবে না। তোমাদের হাফ ফ্রি আজ। ওকে ডাকো।
নিজেই কাউন্টার ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। বোঁটকাকে হাতছানি দিয়ে বললেন— এসো, কথা আছে। অন্য কথা।
বোঁটকা এল। উনি বললেন— আমি সব বুঝেছি। বাগবাজারের জল খেয়েছি এত দিন। আমার একটু উপকার করো বাবা। আমার ছেলেকে ট্রেনিং দিচ্ছি। ও এখন প্রাইভেট পড়ছে। মাস্টার এয়েচে। দোতলায় আমরা থাকি। মাস্টার চলে গেলে কাউন্টারে বসাব। তোমরা দুই জগাই মাধাই এই কায়দায় খেয়ো, এই কায়দায় পালিয়ো। ছেলেকে কায়দাটা বোঝাব। যা খাবে খেয়ো। পয়সা লাগবে না।
তার পরই বোঁটকাকে বললেন— ক’দিন আগে হাতে খুচরো পয়সা গুনতে গুনতে বেরিয়ে গিয়েছিলে না, যেন কাউন্টারে টাকা দিয়েছ, আমি খুচরো দিয়েছি, তুমি খুচরো গুনতে গুনতে বেরুচ্ছ, দরজার সামনে ছেলেকে রেখেছিলাম, ও ধরতে পারেনি। ওই কায়দাটাও কোরো, আর যা যা কায়দা জানো, দেখিয়ে দিও। ছেলেটাকে দাঁড় করাতে হবে তো...।
রামগোপালের মৃত্যুর কয়েক বছর পরই দোকানটা উঠে যায়। কারণ জানি না।
|
|
সুমিত্র বসাক |
|
• অঞ্জলির ভিড়ে বন্ধুকে বললেন, দ্যাখ কী হ্যান্ডসাম ছেলে। মাইকের চোটে সে শুনতে
পেল না।
গাঁকগাঁকিয়ে বলতেই, আচমকা মাইক বন্ধ। পাড়াময় ইনফ্যাচুয়েশন রাষ্ট্র। |
|
|
• টিমের জিততে চাই দশ, আপনার সেঞ্চুরির জন্য চাই পাঁচ।
এট্টু দম
নিতে ননস্ট্রাইকারে আসতেই, এতক্ষণের ঘুমন্ত
পার্টনার ছয়-চার মেরে
ম্যাচ শেষ করে, আপনার লাইফের
ফার্স্ট সেঞ্চুরির স্বপ্নে গঙ্গাজল ঢেলে দিল। |
• প্রবল পপুলার শিক্ষক হতে চান। বোর্ডে বাড়ির নম্বরটা
লিখে বললেন, হেল্প লাগলে বোলো। তার পর থেকে
কে বা কারা, খাওয়া, নাওয়া, ঘুমের সময়, দিবারাত্র
আপনার ল্যান্ডলাইন দু-এক বার বাজিয়ে রেখে দিচ্ছে! |
|
|
|
|
•ভারতীয় ডাক ব্যবস্থার একদা-তুরন্ত, মুশকিল আসান অস্তর টেলিগ্রাম-পরিষেবা অস্ত গেলেন। ১৬৩ বছরের টরেটক্কা সরকারি ঢ্যাঁড়ায় বন্ধ হতেই দেশ জুড়ে রইরই টেলিগ্রাম-ন্যাকামি। টুইটার-ফেসবুকে ভার্চুয়াল বুক-চাপড়ানি ও RIP-হাহাকার, জীবনে যারা টেলিগ্রাম করা দূরস্থান, বস্তুটা তেলে না জলে কীসে চলে তা জানার-শোনার ন্যানোতম আগ্রহ দেখাননি, পিলপিল লাইন দিলেন তার-অফিসে। অষ্টমীর ঠাকুর-দেখার ভিড় ফেল। এক এক জন ৭৯টা তার পাঠালেন মামাদাদুভায়রা যাকে পান তাকে, আত্মপ্রেমের এক্সট্রিম নজির গড়ে নিজেকেও। কারও চোখ উদ্ভট যন্তরটায়, বাগে পেলে নিজ ফ্ল্যাটে রেট্রো কলিংবেল বানাবেন, কেউ হত্যে দিয়ে পড়ে রইলেন প্রায় মধ্যরাত অবধি, এই মহা-ভারতে শেষ টেলিগ্রামটি করার জন্মগত অধিকার ফলাতে। এরই মধ্যে আবার কিছু সরকারি কর্মীর স-ঝান্ডা বিক্ষোভ, টেলিগ্রাম (লাভে) ‘চলছে না’ তো কী, বন্ধ করা ‘চলবে না’। সব দেখেশুনে হতভম্ব তার-বাবুদের আক্ষেপ, ভুঁইফোঁড় এই আগ্রহ-ছটার ছটাকখানেকও অ্যাদ্দিন দেখালে বছরভর তাঁদের মাছি তাড়াতে হত না, টেলিগ্রামও দিব্য বাঁচত। অনুক্ত সাবটেক্সট: ভারতীয়রা আদিখ্যেতা-প্রদর্শনে বরাবরের হাততোলা ফার্স্টবেঞ্চার। সে উপলক্ষ যা-ই হোক, সেলেব-মৃত্যু বা টেলিগ্রাম-অক্কা। ফ্রি মেসেজ-ইমেল জমানায় মন্থরগতি ও মহার্ঘ টেলিগ্রামের মৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা। হদ্দ আদেখলাপনায় সেই সহজ সত্যকে না চটকালে শান্তি কোথা!
• চিনে বড়লোকদের খাবার-মেনুতে নতুন সংযোজন: দুধ। বাঘের কি তিমির দুধ নয়, রীতিমত মানুষের, মানে মায়েদের বুকের দুধ। কয়েকটি সংস্থা ‘ওয়েট নার্স পরিষেবা’ দিচ্ছেন, যেখানে নবজাতক শিশুর পাশের বেডেই যুবা-প্রৌঢ়-বৃদ্ধ পা দুলিয়ে প্রতীক্ষারত। দুধ খেতে পারেন শাশ্বত ব্রেস্টফিডিং প্রথায় সরাসরি ধাই-মা’র বুকে মুখ গুঁজে, লাজুক বুড়োদের জন্য আছে মাতৃস্তনের সঙ্গে অ্যাটাচ্ড পাইপের বিকল্প ব্যবস্থাও। খবর ছড়াতেই হাটবাজার ছিছিক্কারময়, সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে লক্ষপতিদের নামে লক্ষ দুয়ো। টাকায় কী না হয়, তা বলে এট টু এথিক্স! চিনে মায়েদের সম্মান এবং পয়সাওলাদের নৈতিকতা কোন তলানিতে ঠেকেছে, সবাই সোচ্চার। অতি তর্কে লবডঙ্কা। পয়সা দাও, পরিষেবা নাও, এ কম্মো সর্বত্র চলছে, পণ্যটি মাতৃদুগ্ধ হলেই মর্যাল চিড়বিড়? দাতা ও গ্রহীতা দুয়েরই সায় থাকলে কার কী! আর স্তন্যে একমাত্র শিশুর অধিকার, এই ধুয়ো তুলে নারীকেও মাতৃত্বের ঘেরাটোপে বেঁধে রাখাটা চরম অনৈতিক কি না, তা-ও ভাববার। বেডরুমের চুপিচুপি দাম্পত্যে অনেক পুরুষই যা পেতে আকুল, তা-ই হয়তো সপাটে খুল্লমখুল্লা বাণিজ্যিক মোড়কে দেখতে তীব্র অনীহা। |
|
|
২৫৫
প্রতি বছর বেড়ালের আক্রমণে
আমেরিকায় যত কোটি পাখির মৃত্যু হয় |
১৪৬৮
সারা দেশে এখন মোট যতগুলো বাঘ আছে
বলে জানা গেল সাম্প্রতিক বাঘ-সুমারি থেকে |
২২
সরকারের তিন বছরের সাফল্যের খতিয়ান
প্রচার করতে যত লক্ষ টাকা বরাদ্দ
করেছে কলকাতা পুরসভা |
৮৬২৮০০
নিলামে যত পাউন্ডে
বিক্রি
হল
ব্রিটিশ
যুবরানি
ডায়ানা-র ব্যবহৃত দশটি পোশাক |
৩৩০
ফোর্বস পত্রিকার রিপোর্ট-অনুযায়ী বার্ষিক যত
কোটি ডলার আয়ের নিরিখে ম্যাঞ্চেস্টার
ইউনাইটেড-কে সরিয়ে এক নম্বরে
স্পেনের ফুটবল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ |
২০৮৮১৬৪০০০
এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের
জন্য
রাজ্য সরকার যত টাকা
দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে |
৪৫২০০০০০
বর্তমানে বিশ্বে মোট যত জন মানুষ বাস্তুহারা।
প্রতি ৪.১ সেকেন্ডে এক জন মানুষ নিরাপদ
আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন |
৪৩২০০
ভারতে প্রতি বছর যত কোটি টাকা
মূল্যের সাইবার-ক্রাইম ঘটে |
৬৯
যত শতাংশ ভারতীয়
মোবাইল-ব্যবহারকারী
ফোন থেকে ইন্টারনেট করেন |
|
|
|
|
অ
সী
ম
চৌ
ধু
রী |
|
|
‘মাও ফাও’ কিছু নেই। ওরা তবে কারা রে?
ক্ষমতায় এসে দেখি সবই আছে ভাঁড়ারে!
ন্যাড়া যায় বেলতলা। বেছে বেছে ধরি আয়।
আমি বেলপাহাড়িতে। তুই বেলঘরিয়ায়। |
তিনি হোলটাইমার ‘ফাইলে’ ও ‘র্যাংকে’
প্রোলেতারিয়েত... তবু কোটি টাকা ব্যাংকে!
যুগে যুগে রাজনীতি
ভুলে লাজ-ভয়-ভীতি
আধুলির স্বপ্নতে ফাঁসিয়েছে ব্যাঙকে। |
|
|
|
|
এই ছবির সংলাপ লিখেছেন বিপ্লব চৌধুরী, গড়িয়া
|
|
|
|
পাশের ছবির দু’জন কী বলছে? সাদা পাতায়
লিখে পাঠান।
প্রতি ডায়লগ ২০ শব্দের মধ্যে।
ঠিকানা:
নয়া সংলাপ,
রবিবাসরীয়,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ |
|
|
|
|
|
|
|
|