মাত্র দু’ঘণ্টার তফাতে কপিল দেব নিখাঞ্জ যে দ্বৈত ভূমিকায় বাংলা ক্রিকেটে আবির্ভূত হবেন, কে জানত!
বঙ্গ ক্রিকেটের রাইটার্স বিল্ডিংয়ের বার্ষিক অনুষ্ঠান ততক্ষণে শেষ। ক্লাবহাউস সুনসান। ভারতের প্রথম বিশ্বজয়ী অধিনায়কও তখন নেই। সন্ধে সাতটা। ঠিক তখনই তাঁর দ্বিতীয় ভূমিকাটার কথাও জানা গেল।
কপিল দেব নিখাঞ্জ বার্ষিক অনুষ্ঠানে সিএবি-র প্রধান অতিথি।
কপিল দেব নিখাঞ্জ কোচ-সঙ্কটে আক্রান্ত সিএবি-র সম্ভাব্য বোলিং পরামর্শদাতা! তবে সাময়িক।
অন্তর্নিহিত অর্থ? শুধু প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলার ক্রিকেটের বর্তমান ও ভবিষ্যতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া নয়। একই সঙ্গে কোচ নিয়ে মহাসঙ্কটের দিনে সিএবি-কে অক্সিজেনও দিয়ে গেলেন কপিল দেব। বলে গেলেন, ঘরোয়া মরসুম শুরুর আগে বাংলা বোলারদের ‘ক্র্যাশ কোর্স’ দিতে অসুবিধা নেই!
নীল পাঠান স্যুটে ঢাকা ছ’ফুটের চেহারা। শান্তিতে মঞ্চে উঠবেন যে, উপায় নেই। অটোগ্রাফের জন্য ঠেলাঠেলি, ফোটোগ্রাফের কাকুতি-মিনতি। অতি কষ্টে তাঁকে মঞ্চে তুললেন সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া। মাঝবিকেলে ভারতীয় ক্রিকেটের মহীরুহকে ঘিরে এমন উৎসবের আমেজ দেখে আন্দাজ পাওয়া সম্ভব ছিল না, অন্তরালে কী নাটক ঘটে যাচ্ছে! |
তিন প্রজন্ম
কপিল ও মনোজকে নিয়ে সমর চক্রবর্তী। সিএবি-র অনুষ্ঠানে। |
বাংলা কোচ ডব্লিউ ভি রামন ততক্ষণে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর কোচ থাকছেন না। তামিলনাড়ুর কোচ মনোনীত হয়ে গিয়েছেন। কপিলের বিশ্বজয়ী টিমের আর এক সদস্য বলবিন্দর সিংহ সাঁধু তার আগে সিএবি-তে সিভি পাঠিয়েছেন। জল্পনা উড়ছে কোচ তা হলে সাঁধু? নাকি অন্য কেউ? অনুষ্ঠান শেষে কপিল আবার ডালমিয়ার ঘরে। শুরু নতুন জল্পনা কপিলকে কিছু বলা হচ্ছে?
বলা হল। কপিলকে জিজ্ঞেস করা হয়, বাংলা পেসারদের সময় দিতে পারবেন কি না? কপিল জানিয়ে দেন, তিনি আপাতত মেলবোর্ন আর অ্যাডিলেড যাচ্ছেন ২০১৫ বিশ্বকাপ উন্মোচনে। ফিরে দিন সাতেক সময় দিতে পারবেন। পরে ডালমিয়া বলছিলেন, “গত বছরও এটা নিয়ে জলঘোলা হয়েছিল। এ বার আগাম কিছু তাই বলব না।” আর প্রধান কোচ? দু’জনের মধ্যে প্রবল যুদ্ধ। অশোক মলহোত্র এবং সাঁধু। কোনও কোনও মহলে শোনা যাচ্ছে দেবু মিত্র, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভরত অরুণের নামও। কে হচ্ছেন শেষ পর্যন্ত? এ বার ডালমিয়ার উত্তর, “দু’তিন দিনের মধ্যে সব চূড়ান্ত করে ফেলব।”
তা হলে কি প্রধান অনুষ্ঠান কোথাও গিয়ে কোচ-জল্পনার কাছে হেরে গেল? উত্তরটা, না। দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ প্রান্তে উৎসবের রং ছিল। হাস্যরস ছিল। এবং শেষে বিতর্কও ছিল।
ক্লাবহাউসের তিন তলায় কপিল ক্লাস নিচ্ছেন বাংলার কচিকাঁচাদের। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামী সমেত। ক্লাসে কপিলকে জিজ্ঞেস করা হয়, ব্যাটিংয়ের সময় তিন-চার উইকেট তাড়াতাড়ি পড়ে গেলে ক্যাপ্টেনের কী করা উচিত? কপিলের চটজলদি জবাব, “তখন আর আলাদা করে কেউ অধিনায়ক হবে না। যে নামবে, সে-ই ক্যাপ্টেন।” দ্বিতীয় প্রশ্ন ক্রিকেটের তিনটে ফর্ম্যাটে কী ভাবে মনঃসংযোগ রাখা সম্ভব? কপিল অদ্ভুত একটা কথা বলে গেলেন। “সব ফর্ম্যাটের জন্য ভাবনা-চিন্তার আলাদা কম্পার্টমেন্ট রাখতে হবে। মনে রাখবে, বান্ধবীর সঙ্গে যখন থাকবে, ক্রিকেট নিয়ে ভাববে না। আবার ক্রিকেট নিয়ে যখন ভাববে, বান্ধবী নিয়ে ভাববে না।” পরে ঝুলনের কাছেও কপিল জানতে চান, মহিলা ক্রিকেটারদের উন্নতির জন্য কী প্রয়োজন। পাশে বসা সিএবি কর্তাদের পরামর্শ দেন, মাঠ বাড়াতে। রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করে দেখতে। |
মঞ্চেও কম কিছু নন। উঠেই কলকাতার ক্রিকেট-সমর্থনকে ব্রাজিলের ফুটবল-পাগলামির সঙ্গে তুলনা, এবং তুমুল হর্ষধ্বনি। ক্রিকেটারদের কেউ মুগ্ধ, কেউ সাষ্টাঙ্গ প্রণামে ব্যস্ত। কাউকে কপিল পরামর্শ দিচ্ছেন, “তোমাদের হাতেই কিন্তু সব ছাড়া থাকল।” কখনও আবার ঝুলনের পাশে নিজের উচ্চতা মেপে অভ্যাগতদের মধ্যে হাস্যরস সৃষ্টি। মঞ্চে এক সময় দেখা গেল, কপিলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে বাংলা ক্রিকেটের অতীত-বর্তমান। আজীবনের সম্মানে পুরস্কৃত সমর চক্রবর্তী ও বর্ষসেরা মনোজ তিওয়ারি।
তবু এর পরেও প্রশ্ন থাকছে।
অনুষ্ঠানে ঝাড়া পঞ্চাশ মিনিট একের পর এক পুরস্কার দিতে দেখা যায় গলদঘর্ম কপিলকে। পিবি দত্ত থেকে চুনী গোস্বামী প্রাক্তন বাংলা অধিনায়করা তখন সেখানেই বসে। কপিলের ওই অবস্থা দেখে কেউ কেউ বলেও ফেললেন, প্রাক্তন অধিনায়কদের দিয়েও তো কিছু পুরস্কার দেওয়ানো যেত। বলাবলি হল, গত বছর বিষেণ সিংহ বেদীর ক্রিকেটারদের পোশাক নিয়ে কড়া বকুনি যেমন এ বার কাজ দিয়েছে, স্কুল ক্রিকেটারদের স্কুলের পোশাকে দেখে চোখ যেমন আরাম পেয়েছে, ঠিক তেমনই কপিলের ও ভাবে প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা বিরক্তি উদ্রেক করেছে। অতিথির নাম কপিল দেব হলেও। মনে হয়েছে, এ যেন তাঁরই বোলিংয়ের এক লম্বা স্পেল।
পরের বছর কিন্তু সংগঠকদের ব্যাপারটা ভাবা উচিত। |
বর্ষসেরা ক্রিকেটার: মনোজ তিওয়ারি
সেরা বোলার: সামি আহমেদ
আজীবনের স্বীকৃতি: সমর চক্রবর্তী
সেরা অনূর্ধ্ব ২৫: শ্রীবৎস গোস্বামী
সেরা অনূর্ধ্ব ১৯: আমির গণি
সেরা অনূর্ধ্ব ১৬: প্রদীপ্ত প্রামাণিক
বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা: সুজয় দাস
স্কুলের সেরা: কাজি জুনেইদ সইফি |
|