|
|
|
|
জলমগ্ন সনিয়ার বাড়ির উঠোনও, বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রাজধানী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দশ নম্বর জনপথের সামনে হঠাৎ হট্টগোল। দু’তিনটি মোটরবাইকে করে এসেছেন বেশ কয়েক জন যুবক। তাঁদের হাতে বাঁশ, গাঁইতি, লোহার পাইপের মতো সরঞ্জাম। এসপিজি-র নিরাপত্তা কর্মীরা ব্যস্তসমস্ত। বারবার বাড়ির অন্দরমহলের সঙ্গে ওয়াকিটকিতে কথা বলছেন।
খতিয়ে দেখা হচ্ছে ওই যুবকদের প্রত্যেকের পরিচয়পত্র।
কী ব্যাপার?
কংগ্রেস সূত্রে জানা গেল, দেশের রাজধানীর মতো সনিয়া গাঁধীর বাসভবনের উঠোনও জলে ডুবে গিয়েছে। জল কোনও ভাবেই বের হচ্ছে না। তাই কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরে জরুরি বার্তা গিয়েছে। সেখান থেকেই ছুটে এসেছেন ওই যুবকরা। কোথায় নর্দমা আটকেছে তা খুঁজে দেখতে চান তাঁরা। কিন্তু সনিয়ার নিরাপত্তার কথা ভেবে নানা সরঞ্জাম নিয়ে পূর্ত দফতরের কর্মীদের ঢুকতে দিতেও ভয় পাচ্ছে এসপিজি।
দশ নম্বর জনপথই যদি জলমগ্ন হয়ে পড়ে, তা থেকেই বোঝা যায় বাকি দিল্লির অবস্থা। শনিবার দুপুরে টানা তিন ঘন্টার বৃষ্টিতে আক্ষরিক অর্থেই ডুবে গেল নয়াদিল্লি। লুটিয়েন সাহেবের পরিকল্পনায় তৈরি নয়াদিল্লির রাজপথ থেকে করে পুরনো দিল্লির অলিগলি—সর্বত্র জল দাঁড়িয়ে গেল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইল যানবাহন। কোথাও কোথাও অবশ্য বিকেলের পরে জল নেমেছে। সেখানে সমস্যা হয়েছে ভেঙে পড়া গাছ, খারাপ হয়ে থাকা বাস ও অন্যান্য যানবাহন নিয়ে। দিল্লি বিমানবন্দরও ফের জলে ভেসে গিয়েছে। |
|
বৃষ্টির জলে ডুবে গিয়েছে রাস্তা। শনিবার দিল্লিতে। ছবি: এপি |
তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, বিমান চলাচল ও যাত্রী পরিষেবায় কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি। একমাত্র একটি বিমানই দিল্লির বদলে অন্যত্র পাঠাতে হয়। মেট্রোর দু’টি স্টেশনে জল ঢুকে পড়ায় সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া মেট্রো চলাচলও স্বাভাবিক ছিল বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। দিল্লির আশপাশের বিভিন্ন রেল স্টেশনে জল জমে যাওয়ায় উত্তর রেলের ১৩টি ট্রেন দেরিতে চলেছে।
আবহাওয়া দফতরের হিসেব অনুযায়ী, আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে দিল্লিতে। গত ১০ বছরে এত বৃষ্টি দেখেনি রাজধানী। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে টানা তিন ঘন্টা মুষলধারে বৃষ্টির ফলেই বিপর্যস্ত হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। মৌসম ভবন জানিয়েছে, বৃষ্টির ফলে সর্বাধিক তাপমাত্রা এক ধাক্কায় ৩১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। যা গড় তাপমাত্রার থেকেও তিন ডিগ্রি নীচে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও গড় তাপমাত্রার থেকে চার ডিগ্রি নীচে ২৩ ডিগ্রিতে এসে দাঁড়ায়। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, রবিবারও বেশ কয়েক পশলা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
শুধু তাপমাত্রা নয়, আজ দিল্লিতে শীলা দীক্ষিত সরকারের জনপ্রিয়তাও এক ধাক্কায় কয়েক ধাপ নেমে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। দিল্লিতে জমা জল নিকাশি ব্যবস্থার ত্রুটিকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
আগামী নভেম্বরে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন। এই বৃষ্টির ফলে বিরোধীরা নতুন অস্ত্র পেয়ে গেলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ তাঁরা বরাবরই দাবি করে এসেছেন, কমনওয়েলথ গেমসকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ঢালাও উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলেও তাতে শুধুই টাকা নয়ছয় হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কনট প্লেস থেকে শুরু করে পূর্বের লক্ষ্মীনগর-সর্বত্রই প্রায় একই চিত্র।
তবে শুধু রাজধানী নয়, বৃষ্টির প্রকোপে ভুগছে বাণিজ্যিক রাজধানীও। পর পর দু’দিন প্রবল বর্ষণে মুম্বইয়ের যান চলাচলও। বন্যা পরিস্থিতির প্রস্তুতি শুরু করেছে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। বৃষ্টিতে নাজেহাল কর্নাটকও। |
|
|
|
|
|